নিয়োগে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে কারা যুক্ত? তদন্তে সিবিআই

নিজস্ব প্রতিনিধি— কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এসএসসি সংক্রান্ত মামলার রায়দান ঘোষিত হয়েছে৷ এতে যেমন প্রায় ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে৷ ঠিক তেমনি অতিরিক্ত শুন্যপদ (১,১১৩) গঠন করা নিয়ে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ এসএসসিতে বেআইনি নিয়োগ করতে অনেক অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ রাজ্য সরকারই সেই অনুমোদন দিয়েছিল৷ এদিন বৃহত্তর বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘সিবিআই রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত সেই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করবে, যাঁরা অতিরিক্ত পদ তৈরির অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন’৷ প্রয়োজনে ওই ব্যক্তিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে সিবিআই, তা জানিয়েছে বৃহত্তর বেঞ্চ৷ এদিন ঘোষিত এসএসসি মামলার নির্দেশনামায় বৃহত্তর বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘এই দুর্নীতির প্রকৃতি এবং ব্যাপ্তি জানতে, কারা এর সঙ্গে জডি়ত, তা বুঝতে সিবিআই তদন্ত আবশ্যিক৷ অতিরিক্ত পদগুলি তৈরির বিষয়ে আরও তদন্ত করতে হবে সিবিআইকে৷ রাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভাও এসএসসিতে বেআইনি চাকরি রক্ষা করার স্বার্থে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিস্ময়কর৷ এই নিয়োগগুলি প্যানেলের বাইরে এবং প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে করা হয়েছে, তা জেনেও চাকরি বাঁচাতে চেয়েছেন সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা৷’ সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মামলাকারী আইনজীবীদের অভিযোগ ‘এসএসসিতে টাকার বিনিময়ে যাঁরা বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত শূন্যপদ ছিল না৷ তাই বেশ কিছু অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছিল৷ এগুলিকেই সুপারনিউমেরিক পদ বলা হচ্ছে৷ ওই পদগুলিতেই অযোগ্য প্রার্থীদের একটা বড় অংশকে নিয়োগ করা হয়’৷ আদালত জানিয়েছে, এই অতিরিক্ত পদ তৈরি করে অবৈধ নিয়োগগুলিকে স্বীকৃতি দিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও একাধিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভাতেও সেই সিদ্ধান্তগুলি অনুমোদন করা হয়েছে৷ এসএসসি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি চিঠি হাতে পেয়েছে সিবিআই৷ যা তারা আদালতে জমা দিয়েছে৷ সেখানে চিঠির বিষয় হিসাবে বলা হয়েছে, ”ওয়েটিং লিস্টের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলে সহকারী শিক্ষক (কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষা-সহ) এবং অশিক্ষক কর্মীর কিছু ‘সুপারনিউমেরিক পোস্ট’ তৈরির প্রস্তাব৷” রাজ্য মন্ত্রিসভাকে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ৷ প্রস্তাবপত্রে নবম-দশমের জন্য ১,৯৩২টি, একাদশ-দ্বাদশের জন্য ২৪৭টি শিক্ষকের অতিরিক্ত পদ তৈরির কথা বলা হয়েছে৷

এছাড়া, গ্রুপ সি-র ১,১০২টি, গ্রুপ ডি-র ১,৯৮০টি অতিরিক্ত পদ এবং শারীরশিক্ষা, কর্মশিক্ষায় মোট ১,৬০০টি অতিরিক্ত পদ তৈরির কথা বলা হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশ, অতিরিক্ত পদ তৈরি করে বেআইনিভাবে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারের যে ব্যক্তিরা জডি়ত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চালাবে৷ তদন্তের স্বার্থে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে তারা৷ সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসা এই নথিতে ২০২২ সালের ৫ মে তারিখ দেওয়া রয়েছে৷ ২০২১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই শিক্ষামন্ত্রীর পদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে গিয়েছিল ব্রাত্য বসুর কাছে৷ অর্থাৎ, যে সময়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে এই অতিরিক্ত পদের অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ, সেই সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ব্রাত্য বসু৷ পার্থ ছিলেন শিল্পমন্ত্রী৷ ২০২২ সালের জুলাই মাসে এসএসসি মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করা হয়৷ এদিন এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ৷ ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে৷ চাকরি গিয়েছে মোট ২৫, ৭৫৩ জনের৷ আদালত এই সংক্রান্ত তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে সিবিআইকে৷ সেই সঙ্গে এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের বেতন সুদ-সহ ফেরত দিতে বলা হয়েছে৷ বছরে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে ওই চাকরিপ্রাপকদের৷ যদিও এই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে রাজ্য৷