আপনার সাফল্যের মূলমন্ত্র কী ছিল?
যে কোনও ইন্টারভিউতে, নিজের উত্তর দিয়ে বোর্ড মেম্বারদের পরিচালনার করার দায়িত্ব কিন্তু তোমার নিজেরই। এমন বিষয়গুলিকে তাঁদের সামনে তুলে ধরো, যাতে তাঁরা প্রভাবিত হন – ওই বিষয়গুলি থেকেই প্রশ্ন করতে। যেহেতু ইন্টারভিউ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হয়, তাই যে-যে ক্ষেত্রে তোমার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পারদর্শিতা আছে; সচেতনভাবে সেই বিষয়গুলি তাঁদেরকে জানিয়ে দিতে পারো। অর্থাৎ, সাফল্যের ‘মাস্টার-কি’ আছে কিন্তু তোমার হাতেই। তুমি কী ভাবে তা ব্যবহার করছ, তা-র উপরেই নির্ভর করছে পার্সোনালিটি টেস্টের তোমার কনফার্মড টিকিট!
লিখিত পরীক্ষার চেয়ে ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্ট কী ভাবে আলাদা?
পুরো পরীক্ষাটাই হচ্ছে একটা “টেস্ট অফ ইলিমিনেশন”। প্রিলিমস হল একটা স্ক্রিনিং টেস্ট। তারপর লিখিত বা মেনস পরীক্ষার মাধ্যমে তোমার বিষয়গত এবং তথ্যগত যোগ্যতার যাচাই করা হয়। ইন্টারভিউ বা পার্সোনালিটি টেস্ট একটু আলাদা। চূড়ান্ত মেরিট-লিস্টে নিজেকে যোগ্য করার জন্য এর গুরুত্ব সর্বাধিক। কোনও কারণে মেনস পরীক্ষাতে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও, ইন্টারভিউতে প্রাপ্ত নম্বর তোমাকে অনেকটাই এগিয়ে দিতে পারে। ইন্টারভিউতে থাকে সর্বাধিক ২০০ নম্বর। তাই, “যার শেষ ভাল, তার সব ভাল”।
কেমন ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে?
বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকেই প্রশ্ন আসতে পারে। প্রস্তুত থাকতে হবে, বিভিন্ন রকমের কন্ট্রাডিক্টরি প্রশ্নের জন্য। এগুলিকে তুমি কী ভাবে মোকাবিলা করছ, সেটাও বোর্ড মেম্বাররা খুঁটিয়ে দেখবেন। লক্ষ্য রাখবেন, তুমি তোমার বক্তব্যের সঙ্গে ধারাবাহিকতা এবং সাযুজ্য রাখছ কি না। এর মাধ্যমে তোমার মনস্তত্ত্বেরও পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা। প্রয়োজনে, কাউন্টার-প্রশ্নও করবেন। দেখার চেষ্টা করবেন, ওঁদের ধারণার বশবর্তী হয়ে তুমি নিজের মতামত পরিবর্তন করছ কি না। যদি তোমার পরের বক্তব্যের সঙ্গে আগের বক্তব্যের কোনও মিল না থাকে, তা হলে, সেটি তোমার বিরুদ্ধে যাবে।
কোনও সাম্প্রতিক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন হয়, কেমন উত্তর দেওয়া বাঞ্চনীয়?
হ্যাঁ, এমন ধরনের প্রশ্ন আসতেই পারে। এই বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলতে পারি। নিজের বিষয় ছিল সমাজতত্ত্ব। যে কোনও মানুষ কোনও নির্দিষ্ট মতবাদে বিশ্বাসী হন। সে ক্ষেত্রে, ইন্টারভিউয়ের সময় আমি যদি এমন কোনও বিতর্কিত বিষয়ে দু’পক্ষকেই যুক্তিহীনভাবে সমর্থন করি; সেটি কখনই গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। যদি কোন বার্নিং টপিক বা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আসে, তবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আইনানুগ এবং নিরপেক্ষ বক্তব্য প্রকাশ করব। যদিও আমার সামগ্রিক সিদ্ধান্তে অবশ্যই একটা ভারসাম্য রাখব। অর্থাৎ, আমার বক্তব্যের মধ্যে যেন কখনই বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়। আমার নিজের বিশেষ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও, প্রশাসনের জন্য যেটি উপযুক্ত হবে; আমি সেই বিষয়টিকেও সমপরিমান গুরুত্ব দেব।
ইন্টারভিউয়ের দিন আপনার মানসিকতা কেমন ছিল?
সেদিনটার কথা আমার পরিষ্কার মনে আছে। নিজের আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করে ইন্টারভিউয়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম।
আপনি তো এর আগেও চাকরি করতেন-
হ্যাঁ। তুমি যদি কোনও চাকরি বা কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত থাকো, ইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা এই নিয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে, এটা তোমার প্লাসপয়েন্ট হবে। আমি এই ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে চাকরি করতাম। তাই, আমার ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রশ্নই ছিল এই চাকরি-সম্বন্ধিত। তাঁরা জানার চেষ্টা করেছিলেন, আমি কত দক্ষতার সঙ্গে আমার পূর্ববর্তী চাকরিতে নিজেকে সমর্পিত করতে পেরেছিলাম। ফলে, আমার আগের চাকরির অভিজ্ঞতা বলার জন্য একটা ‘ওপেন ফিল্ড’ পেয়েছিলাম। এই ভাবে তোমার কোনও সাফল্য বা ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে ইন্টারভিউয়ারদের সামনে উপস্থাপিত করে, তাঁদের প্রলুব্ধ করতে পারো। সেই বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য। এটা কিন্তু, অত্যন্ত একটি দারুন ট্রিকস।
যদি কেউ একেবারেই ফ্রেশার্স হন, তবে?
কোনও অসুবিধা নেই। গ্র্যাজুয়েশন বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশনের বিষয় থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। ধরো, তোমার গ্র্যাজুয়েশনের বিষয় অর্থনীতি। তাঁদের করা কোনও প্রশ্নের উত্তর তোমার জানা নেই। তা-তে ঘাবড়ে যেও না। তুমি বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দাও, “এই মুহূর্তে আমি মনে করতে পারছি না বা আমি জানি না”। এমন উত্তর তোমার বিপক্ষে যাবে না। কিন্তু, না-জানা প্রশ্নের উত্তর জোর করে কিংবা ঘুড়িয়ে-পেঁচিয়ে যদি তুমি দেওয়ার চেষ্টা করো, তবে তাঁরা তোমার না-জানা জ্ঞানের ভনিতা সহজেই ধরে ফেলবেন। তা-তে তাঁরা একদমই খুশি হবেন না। এ ভাবে দেওয়া উত্তরের মাধ্যমে তাঁরা বুঝতে চেষ্টা করবেন – তোমার ‘মরাল ইন্টিগ্রিটি’ এবং চরিত্রের গভীরতার পরিমাপ সম্পর্কে।
‘অ্যালার্টনেস অফ মাইন্ড’ – কী ভাবে যাচাই করা হয় ইন্টারভিউতে?
এক্ষেত্রে বোর্ড মেম্বাররা একই সঙ্গে তোমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারেন। তাঁরা দেখার চেষ্টা করবেন তুমি প্রত্যেকের প্রশ্ন মনোযোগ সহকারে শুনে তা-র সুস্পষ্ট উত্তর দিতে সক্ষম কি না। এমনকি ইন্টারভিউ রুমে ঢোকার সময় থেকে তুমি প্রত্যেকটা মুহূর্তে কী ভাবে রিয়াক্ট করছ; তা-র প্রত্যেকটাই যাচাই করবেন তাঁরা। এটাও দেখবেন, একটি প্রশ্ন থেকে ভিন্ন আরেকটি প্রশ্নে তুমি কী ভাবে নিজেকে অভিযোজিত করতে পারছ। এক্ষেত্রে, কোনও অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দেওয়া একদমই কাঙ্খিত নয়।
‘পরীক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়’ কেমন হতে পারে?
বোর্ড মেম্বাররা দেখার চেষ্টা করবেন, তুমি আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে কতটা সচেতন। নিজের কোনও হবি থাকা অবশ্যই ভাল। তা সত্ত্বেও, তাঁরা জানার চেষ্টা করবেন – সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক বা প্রাসঙ্গিক কোনও বিষয় সম্পর্কে তোমার সচেতনতা এবং গভীরতার পরিমাপ। যেমন ধরো, খেলাধুলা সম্পর্কে যদি তোমার জ্ঞান শুধুমাত্র ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং অন্য কোনও বিষয়ে তোমার সচেতনতা ততোধিক নয়। তা হলে, তা তোমার বিপক্ষে যেতে পারে। সম্প্রতি, দাবায় ভারতের একাধিক খেলোয়ার বিশ্বসেরা হয়েছেন। তাঁদের সম্পর্কেও প্রশ্ন আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুধু খেলাধুলা নয়; সিনেমা এবং এন্টারটেইনমেন্ট, আর্ট অ্যান্ড কালচার ইত্যাদি থেকেও প্রশ্ন আসতে পারে। এমনকি সলিল চৌধুরির জন্মশতবর্ষ নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। এ রকম একাধিক ‘রেঞ্জ অফ ইন্টারেস্ট’ বা সমসাময়িক প্রসঙ্গকে নিয়ে তোমার আগ্রহের ব্যাপ্তি জানার চেষ্টা করতে পারেন তাঁরা।
‘হবি’ থাকাটা কি জরুরি?
হ্যাঁ, হবি থাকা অবশ্যই ভাল। তবে, সেই বিষয়ে যেন তোমার যথেষ্ট দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকে। কেউ যদি বলে “রিডিং ইজ মাই হবি”। তখন তা-কে একাধিক প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। কোন লেখকের বই পড়তে তুমি ভালবাস। লেখকের কী কী বই পড়েছ। সেই বইয়ের বিশেষ কোনও চরিত্র তোমার জীবনে কোনও প্রভাব ফেলেছে কি না, ইত্যাদি। তাই, যদি সত্যিকারের রিডিং তোমার হবি না-হয়ে থাকে, তবে মিথ্যার আশ্রয় না-নেওয়াই উপযুক্ত।
‘লিডারশিপ কোয়ালিটি’কে কী ভাবে এক্সপ্রেস করেছিলেন?
এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তুমি যখন নিজে কাজ করবে, তখন তোমাকে বোঝাতে হবে যে তুমি ওই বিষয় সম্পর্কে কতটা পারদর্শী এবং অভিজ্ঞ। সেই বিষয়ে পূর্ববর্তী কোনও অভিজ্ঞতা বা তোমার প্রত্যুৎপন্নমতিতা তাৎক্ষণিকভাবে একটি দল বা টিমের লিডার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। বোর্ড মেম্বাররা দেখার চেষ্টা করবেন তোমার কাজের এবং বক্তব্যের মধ্যে কোনও সক্রিয় অংশগ্রহণ আছে কি না।
যারা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য আপনার শেষ পরামর্শ কী?
একটাই কথা বলব, ইন্টারভিউ চলাকালীন তোমার নিজস্ব গুণাবলীর সঙ্গে সততাকে তুলে ধরো তাঁদের সামনে। তুমি যেটা করতে পারোনা বা পারবে না; কখনই তা যেন তোমার বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্ত না হয়। তোমার পুরো বক্তব্যটাই নিজের চরিত্র এবং ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যেন সাজুজ্যপূর্ণ হয়। বক্তব্যকে পরিষ্কারভাবে তাঁদেরকে জানাও। এবং বোঝানোর চেষ্টা করো কেন তুমি এই চাকরিতে আসতে ইচ্ছুক — সেটা তোমার আর্থিক সঙ্গতিও হতে পারে; কিংবা সামাজিক স্বীকৃতি। দেখবে, সফলতা তোমার দরজায় কড়া নাড়ছে।
যারা প্রিলি, মেনস বা ইন্টারভিউতে সফল হল না, তাদের জন্য আপনার মেসেজ?
একটি কথাই বলব। হাল ছেড়ো না বন্ধু। বরং আগের থেকে পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দাও। কোন কোন দুর্বলতার কারণে তোমার কাঙ্খিত সফলতা আসল না, সেগুলিকে চিহ্নিত করে আবার নতুন করে শুরু করো। মোটিভেশন এর মাত্রা আরও বাড়িয়ে দাও। আমিও প্রথমবারে গ্রুপ ‘এ’ সার্ভিসের বদলে গ্রুপ ‘সি’ পেয়েছিলাম। তাই প্রাথমিক ব্যর্থতাকে দূরে দূরে সরিয়ে, নতুন বছরের মতন আবার নতুন করে শুরু করো।