• facebook
  • twitter
Saturday, 21 September, 2024

উত্তরপত্রে রাজনৈতিক স্লোগান লিখলে, বাতিল হতে পারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা

এ প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের জন্য আগেও এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল।'

এই মাসেই একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমিস্টার। আর আগামী বছর সিমেস্টার পদ্ধতিতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষা শুরু হবে ৩ মার্চ। শেষ হবে ১৮ মার্চ। তবে আরজি কর কাণ্ডের আঁচ কোনওভাবেই পরীক্ষার খাতায় পড়তে দিতে চাইছে না-উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তবে সংসদ সরাসরি স্বীকার না-করলেও একটি নির্দেশিকা ঘিরে উঠছে প্রশ্ন। সেই নির্দেশিকা বলা হয়েছে, কোনও পড়ুয়া পরীক্ষার খাতায় যদি রাজনৈতিক স্লোগান, অশালীন অথবা আপত্তিকর কিছু লেখেন, সেক্ষেত্রেও সেই পড়ুয়ার উত্তরপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে! সম্প্রতি এমনই পঁচিশ দফার কড়া নির্দেশিকা জারি করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেক্ষেত্রে আরজি কর কাণ্ডের আবহে সংসদের এই নির্দেশিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে শিক্ষামহল।

কারণ, আরজি কাণ্ডের বিচার চেয়ে সমাজমাধ্যমে তো বটেই, এমনকী খেলার ময়দানেও সরব হচ্ছেন বিভিন্ন মানুষ। রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলেও প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়েছেন পড়ুয়ারা। এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের জবাব চেয়ে হাওড়া জেলার তিনটি স্কুলকে শোকজ নোটিস দেয় স্কুল শিক্ষা দফতর। এই পরিস্থিতিতে আরজি কর-উত্তাপ যাতে উচ্চমাধ্যমিকের খাতা পর্যন্ত না-পৌঁছয়, সেই কারণেই এই নির্দেশিকা কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সংসদের দাবি, আগেও একই নির্দেশিকা দেওয়া হত। এই নির্দেশিকায় কোনও অভিনবত্ব নেই।

সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, খাতায় আপত্তিকর, অশালীন এবং রাজনৈতিক স্লোগান লিখলে, উত্তরপত্র বাতিল হতে পারে। পরীক্ষার্থীর তরফে সন্তোষজনক উত্তর না-মিললে, বাতিল হতে পারে গোটা পরীক্ষাই। এ ছাড়াও শিক্ষা সংসদের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও পরীক্ষার্থী খাতায় ভুল নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখলে, উত্তরপত্র নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র ছাড়লে, অন্য পরীক্ষার্থীকে খাতা দিয়ে লিখতে সহায়তা করলে, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে। উত্তরপত্রে উত্তর সম্বলিত চিরকুট, টাকার নোট মিললেও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংসদ।

অবশ্য এর মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নেই বলেই জানাচ্ছেন সংসদের কর্তারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রতি বছরই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য একাধিক নির্দেশিকা সম্বলিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংসদ।  এ প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের জন্য আগেও এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। কোনও পড়ুয়া যদি পরীক্ষার খাতায় অপ্রাসঙ্গিক কোনও রাজনৈতিক স্লোগান বা মন্তব্য লেখেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে।’

অবশ্য এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর গোটা পরীক্ষাই বাতিল হবে কি না, এ প্রসঙ্গে চিরঞ্জীববাবু জানান, অনিয়ম রোধে গঠিত একটি কমিটি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এসব ক্ষেত্রে যদি কোনও পড়ুয়া যুক্ত থাকে, তাহলে সেই কমিটি অভিযুক্ত পড়ুয়াকে ডেকে পাঠায়। তারপর সে কেন এই কাজ করেছে? তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

যদি পরীক্ষার্থীর উত্তরে কমিটির সদস্যরা সন্তুষ্ট হন, তাহলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অন্যথায়, নির্দিষ্ট ওই উত্তরপত্রটির মূল্যায়ন করা হয় না। তিনি আরও জানান, নিয়মভঙ্গের গুরুতর প্রমাণ পাওয়া গেলে, পরীক্ষার্থীর গোটা পরীক্ষাই বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।

এ ব্যাপারে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘ ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার খাতায় যদি রাজনৈতিক স্লোগান লেখে, তা কোনও ভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু নিয়মাবলী মেনে চলা উচিত। যদি প্রাথমিক থেকে সার্বিক ভাবে  পরীক্ষার কড়া নিয়মাবলীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভিত্তিটা শক্ত করার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হত, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তিটা আরও সুদৃঢ় হত।’
সেক্ষেত্রে তিনি শিক্ষা দফতরকে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, শিক্ষা দফতর শিক্ষার সার্বিক ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
প্রসঙ্গত, শিক্ষা সংসদের তরফে এটিকে রুটিন নির্দেশিকা বলা হলেও আরজি কর-কাণ্ডের আবহে বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।