বিশ্বভারতীর ছাত্রীরাই কী  ‘সফট টার্গেট’ হচ্ছেন প্রতারকদের ?

বিশ্বভারতী

জেলায় ঘটে যাওয়া একের পর এক সাইবার অপরাধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন ও অন্যান্য মহলে যেমন রীতিমতো  শোরগোল পড়ে গিয়েছে তেমনি, এই অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসন মহলও সচেষ্ট হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে  কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে দুই সাইবার অপরাধীকে পাকড়াও করে আনতে সমর্থ হয়েছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। ধৃত মহম্মদ ফায়েজ ও মহম্মদ কাইফের বয়স পঁচিশ বছরের মধ্যে। এরা দু’জনেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ বলে জানা গিয়েছে। শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ  এদের  কলকাতার বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসে বোলপুর আদালতে পেশ করে। তদন্তকারী পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক এই দু’জনকে ১১ দিন পুলিশি হেফাজতের  নির্দেশ  দিয়েছেন। বিশ্বভারতীর  শিল্প সদনের ছাত্রী অনামিকা সিংয়ের বিষপান করে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যে বিতর্ক  সৃষ্টি হয়, তারই তদন্তে নেমে  শান্তিনিকেতন থানার তদন্তকারী আধিকারিকরা এদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। অনামিকা সিং নামে উত্তর প্রদেশের বারাণসীর ওই ছাত্রী বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতনের আম্রপালি ছাত্রী নিবাসের  ১২১ নম্বর ঘরে থাকতেন। সেখানেই তিনি  ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন বিষপান করেন বলে বলা হয়। তাঁকে শান্তিনিকেতন পিয়ার্সন  মেমোরিয়াল হাসপাতাল হয়ে বোলপুর সুপার স্পেশালিটি  হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি সেখানেই মারা যান। তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল  কলেজ হাসপাতালে।

ওই ছাত্রীর মা প্রেমলতাদেবী শান্তিনিকেতনে এসে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন যে, কোনও কিছুর চাপে পড়েই তাঁর মেয়ে আত্মঘাতী হতে বাধ্য হয়েছে। সেই সূত্রেই জানা গিয়েছিল যে, অনামিকা সিং সাইবার প্রতারকদের খপ্পরে  পড়ে বহু টাকা হারিয়ে শেষ পর্যন্ত  বিষপান করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন। পুলিশ ওই ছাত্রী আম্রপালি ছাত্রী নিবাসের যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরে তদন্ত গিয়ে  ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন এবং পরে পুলিশ ওই ঘরটি সিল করে দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, তাঁরা অবশ্যই অপরাধীদের খুঁজে বের করবেন। দুর্গাপুর থেকে চার সদস্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে এসে পুলিশ ওই ঘরের নমুনা সংগ্রহ করে  এবং আত্মঘাতী ছাত্রীর মোবাইল ফোনের সিডিআর বের করে মহম্মদ  ফায়েজ ও মহম্মদ কাইফ নামে ওই দুই সাইবার প্রতারকের সন্ধান পায় এবং তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। এই ঘটনার পরেই জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনে এসে বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে,  তাঁদের দাবিমতো শান্তিনিকেতনের  শ্যামবাটিতে ১১ সেপ্টেম্বর সিউড়ির পরে জেলার দ্বিতীয় সাইবার থানা চালুর ব্যবস্থা করেন। জেলার তৃতীয় সাইবার থানাটি হবে জেলার অপর মহকুমা শহর রামপুরহাটে।

আর এরই মধ্যে সিবিআইয়ের  পরিচয় দিয়ে শান্তিনিকেতনে ঘটে যাওয়া আরও একটি সাইবার  প্রতারণার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এবার সাইবার প্রতারণার খপ্পরে পড়েছেন বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের  প্রাক্তনী সুনিধি নায়েক। তাঁর বাড়ি আসানসোলে। দীর্ঘদিন  ধরেই তিনি শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে শান্তিনিকেতন থানা ও বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের দপ্তরের কাছাকাছি এলাকায় একটি  বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন।  তিনি বাংলাদেশের  বিশিষ্ট  সঙ্গীত শিল্পী  শায়ান চৌধুরী অর্ণব-এর স্ত্রী। কিছুদিন আগেই তিনি বাংলাদেশ থেকে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর ভাড়া বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি  ১৩ সেপ্টেম্বর  রাতে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন যে, বিগত দু’দিন আগে তাঁর মোবাইল ফোনে জনৈক ব্যক্তি  নিজেকে হায়দরাবাদের সিবিআই  অফিসের আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে জানায় যে,  তিনি নরেশ গোয়েল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক তছরুপের ঘটনায় জড়িত এবং তাঁর নামে ক্রেডিট কার্ড তোলা হয়েছে।


যদিও সুনিধি  নায়েক জানান,  তিনি ওই নামের কোনও ব্যক্তিকে চেনেন-ই না। এরপরই তাঁকে জানানো হয় যে, তাঁকে ‘হোম অ্যারেস্ট’ করা হয়েছে। তারপরই তাঁর বিরুদ্ধে  সিবিআই  কোনও পদক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে টাকা দাবি করা হয়। তাঁরা সুনিধি নায়েকের ব্যক্তিগত বহু বিষয়ের কথা উল্লেখ করা ছাড়াও, তাঁদের টাকা না দিলে আসানসোলে তাঁর বাবার ক্ষতি করা হবে বলে হুমকি দিয়ে তাঁর উপরে মানসিক চাপ তৈরী করে। এবং এরপরই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এবং বাবাকে রক্ষা করতে ওই  প্রতারকের দেওয়া একটি মোবাইল নম্বরে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে  ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাঠানোর পরেই তিনি দেখেন, ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন এবং রাতেই শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থ হন। পুলিশ এই সাইবার প্রতারণার তদন্তও শুরু করেছে। অপর আত্মঘাতী  ছাত্রী অনুরাধা সিংহকে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ যে মহম্মদ ফায়েজ ও মহম্মদ কাইফকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে  নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে, তাঁদের সঙ্গে সুনিধি নায়েকের  প্রতারণার যোগ রয়েছে কী না, নাকি এটি অন্য কোনও সাইবার প্রতারকচক্রের কাজ, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে বলেই মনে করা হচ্ছে।