মোল্লা জসিমউদ্দিন: সোমবার বাংলার নিয়োগ দুর্নীতি ইতিহাসে যুগান্তকারী রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ৷ ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ মামলায় বাতিল হল প্রায় ২৬ হাজার চাকরি৷ গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রায় ৩৫০টি মামলায় রায় ঘোষিত হলো এদিন৷ সম্প্রতি এই মামলার শুনানি পর্ব শেষ হয়ে রায়দান স্থগিত রেখেছিল বৃহত্তর বেঞ্চ৷ সোমবার ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ ২০১৬ সালের পুরো প্যানেলই বাতিলের নির্দেশ দিল আদালত৷ ২৪ হাজার ৬৪০ জন প্যানেলে এবং পরবর্তীতে প্যানেল উত্তীর্ণ ১,১১৩ জন সর্বমোট ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করা হলো৷ সোমবার আদালতের নির্দেশ, টাকা ফেরাতে হবে চাকরি প্রাপকদের৷ প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ ১,১১৩ জনকে ১২% সুদ সমেত ফেরাতে হবে বেতন৷ আর তা ফেরত দিতে হবে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যেই৷ জেলার ডিআইরা সংশ্লিষ্ট ডিএমদের এই অর্থ উদ্ধারের বিস্তারিত তথ্য জানাবেন৷ ২০১৬ সালের পর থেকে যাঁরা এত বছর বেতন পেয়েছেন, সমস্ত টাকা ফেরাতে হবে তাঁদের৷ ঠিক যেমন ববিতা সরকার, অঙ্কিতা অধিকারীদের ক্ষেত্রে হয়েছিল৷
মামলাকারীদের তরফে আইনজীবীরা জানান, “২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল৷ সোমা দাস ছাড়া সকলের চাকরি বাতিল৷ যতজন মাইনে পেয়েছেন চার সপ্তাহের মধ্যে তা ফেরাতে হবে৷ ডিএমদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ ডিআই তা ডিএম-কে জানাবেন৷ এই প্যানেলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ সকলকে মাইনে ফেরাতে হবে”৷ কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ এদিন জানায়, ‘লোকসভার নির্বাচন পর্ব মেটার পরে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ ততদিন বন্ধ থাকবে সমস্ত বেতন৷ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির জন্য সিবিআই মনে করলে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে’৷ এসএসসি গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ সংক্রান্ত শুনানি চলছিল এতদিন৷ সুপ্রিম কোর্টে বিতর্কিত চাকরি প্রাপকরা মামলা করলে মামলা পাঠানো হয় হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চে৷ বিতর্কিত চাকরি প্রাপকদের বিভিন্ন আইনজীবীর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আইনজীবী ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য-ফিরদৌস শামিমরা৷ এসএসসির গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম দশম ও একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে৷ আদালতের নির্দেশ ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কোনও চাকরি বৈধ নয়’৷ ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে মোট ২৪ হাজার ৬৪০ জনের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চার সপ্তাহের মধ্যে টাকা ১২ শতাংশ সুদ-সহ ফেরত দিতে হবে৷ এ ব্যাপারে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডিআই ও জেলাশাসকদের রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ আদালত আরও জানিয়েছে, ‘সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে’৷