উচ্চমাধ্যমিকের সেরা দশ ১৩৭

সােমবার প্রকাশিত হল এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। এদিন সকাল ১০টায় বিদ্যাসাগর ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠক করে মেধা তালিকায় থাকা সেরা ১০ জনের নাম ঘােষণা করেন সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস।

তিনি জানান, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সেরা দশের তালিকায় রয়েছে ১৩৭ জনের নাম। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ইতিহাসে যা নজির। এবার ৪৯৮ নম্বর পেয়ে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে দুই ছাত্র। বীরভূমের শােভন মণ্ডল এবং কোচবিহারের রাজর্ষি বর্মণ।

এছাড়া মেধা তালিকায় রয়েছে ৬ জন দ্বিতীয়, ৪ জন তৃতীয়, ৬ জন চতুর্থ, ১৪ জন পঞ্চম, ১৬ জন যষ্ঠ, ১৪ জন সপ্তম, ২৫ জন অষ্টম, ২৪ জন নবম এবং ২৬ জন দশম কৃতি ছাত্রছাত্রী। যারমধ্যে জেলার স্কুলগুলির পাশাপাশি কলকাতা লাগােয়া এবং কলকাতার ১৮ জন পড়ুয়া স্থান করে নেয়। আর এই ফলাফল স্বাভাবিক ভাবেই সংসদের কর্তা ব্যক্তিদের মুখে চওড়া হাসি দিয়েছে।


প্রসঙ্গত, ২১ মে চলতি বছরের মাধ্যমিকের ফলাফল পর্যালােচনা করে দেখা যায় মেধাতালিকায় স্থান পায় মাত্র ১ জন। তাও দশম স্থান অধিকার করে সে। যারপরেই শিক্ষামহলের একাংশ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন। এমনকি বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলিতে আর মেধাবী ছাত্রছাত্রী পড়তে আসছে না বলেও বিভিন্ন মত ব্যাখ্যা করেন তারা।

তারা দাবি করেন, কলকাতায় পাশের হারের নিরীখে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী মধ্য মেধার হওয়া মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে পারেনি। আর এ বিষয়েই এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে কলকাতার ১৮তম পড়ুয়া স্থান পাওয়া শিক্ষামহলের একাংশ প্রায় নিশ্চপ থাকে। যাই কার্যত স্বস্তি দেয় সংসদকে।

প্রসঙ্গত, এ বছর শেষের ৭৪ দিনের মাথায় ফলপ্রকাশ করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদ সূত্রে খবর, এ বছর পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করেন ৭ লক্ষ ৯০ হাজার ৭৫৬ জন। যার মধ্যে পরীক্ষায় বসেন ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৬৬ জন। পাশ করেন ৬ লক্ষ ৬০ হাজার ৩২৯ জন। শতাংশের হিসেবে যা ৮৬.২৯। গতবার এই পাশের হার ছিল ৮৩.৭৫ শতাংশ।

এ বছর ছাত্র পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ৮৭.৪৪ শতাংশ ও ছাত্রী পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ছিল ৮৫.৩০ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০১৫ থেকে ২০১৯ ধরে ৫ বছরের হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল পরীক্ষার্থীদের হার ছিল ৮২.৩৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৮৩.৬৫, ২০১৭ সালে ৮৪.২০, ২০১৮ সালে তা ছিল ৮৩.৭৫ এবং এবছর সেই পাশের হার শতাংশের হিসেবে দাঁড়িয়েছে ৮৬.২৯ শতাংশ। যা সংসদের এই কয়েক বছরের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। সুতরাং শতাংশের হিসেবে এ বছরের উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাসে নজির। একথা এদিনের বৈঠকের প্রথমেই আনন্দের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস।

প্রকাশ, এ বছর পাশের হারের নিরীখে এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। জেলায় পাশের হার ৯৪.১৯ শতাংশ। এরপরেই রয়েছে কলকাতা।কলকাতায় পাশের হার ৯১.৪১ শতাংশ। তারপরে স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ৯০.৯৪ শতাংশ। কালিম্পংয়ে পাশের হার ৯০.৪৯শতাংশ। এ বছর প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন ২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৩১ জন। যার মধ্যে A+ অর্থাৎ ৮০-৮৯ শতাংশ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৫৯ জন। এ বছর ৯০ শতাংশের বেশি পেয়েছেন ৭ হাজার ৮১৮ জন।

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছেন বীরভূম জেলা স্কুলের শােভন মণ্ডল ও জেনকিন্স স্কুল কোচবিহার রাজর্ষি বর্মণ। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৮। দ্বিতীয় হয়েছেন বিধাননগর গভ: হাইস্কুলের সংযুক্তা বসু, সংযুক্তা মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন। এছাড়াও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুল বলাইচন্দ্র বিদ্যাপীঠের তন্ময় মাইকাপ, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ঋতম নাথ, দিনহাটা হাইস্কুলে স্বর্ণদীপ সাহা, সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরের মহম্মদ মাসুম আখতার, জেনকিন্স স্কুল কোচবিহারের অনাতপ মিত্র। এদের সকলেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬।

তৃতীয় হয়েছেন নবগ্রাম হীরালাল পাল বালিকা বিদ্যালয়ের বর্ণালী ঘােষ, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের সুপ্রিয় চক্রবর্তী, গােবরডাঙা খাটুরা হাইস্কুলের মৃন্ময় মণ্ডল, মহেশ শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়, হুগলির সুপ্রিয় শীল। এদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। এ বছর কলা বিভাগ থেকে প্রথম এবং মেধা তালিকায় চতুর্থ রাকেশ দে, বীরভূম। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯২। বাণিজ্য বিভাগে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছেন জ্ঞানভারতী বিদ্যাপীঠ কলকাতার কমল সাহা এবং ন্যাশনাল হাইস্কুলের কোমাল সিং। এদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৬।

মেধা তালিকা অনুযায়ী দশম ভিন্নভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থী সাগর চন্দ্র ৪৮৬ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে। এছাড়াও রাবেয়া আহমেদ, মহম্মদ তানজিম আলম উর্দু ভাষায় প্রথম, সয়াঙ্কা শেরপা নেপালি ভাষায় প্রথম, বিশ্বনাথ মাদ্যি, অনিমা মুর্মু, সনকা হেমব্রম সাঁওতালি ভাষায় প্রথম হয়েছেন।

এদিন ফলপ্রকাশের পর সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস আলাদা করে জানান, আগামী বছরে পরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতা আনতে উচ্চমাধ্যমিকে প্রশ্ন এবং উত্তর একটি খাতাতেই থাকবে। যাতে পরীক্ষা শুরুর পর কোনওভাবে যাতে না প্রশ্ন ফাঁস হয়, তা রুখতেই এই সিদ্ধান্ত। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় সাধারণত এই নিয়ম থাকে। প্রশ্নপত্রের মধ্যেই উত্তর লিখে জমা দিতে হয়।সেক্ষেত্রে অবশ্য বেশিরভাগই মাল্টিপল চয়েজ ধরনের প্রশ্ন থাকে। বিস্তৃতভাবে কোনও উত্তর লেখার দরকার হয় না। ইদানিং মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ধরনের বদল এসেছে। ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণমূলক লেখালেখির বদলে সংক্ষিপ্ত উত্তরের দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। তার ফলে একটি পত্রেই প্রশ্ন ও উত্তর লেখার ব্যবস্থা করলে তা বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর এই পদ্ধতিতে স্বচ্ছতাও বজায় থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিকেও প্রশ্ন ফাঁসের অভিযােগ উঠেছিল তা নিয়ে জটিলতার জেরেই এবার এক প্রশ্নোত্তর পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিন সংসদ সভাপতি জানান, ১১৭টি প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছে। ভােকেশনাল বিষয়েও পরীক্ষা হয়েছে হিন্দিতে ৪৩ বিষয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের আরও কেরিয়ার মুখী করে তুলতে একটি সাইট প্রকাশ করেছে সংসদ যেখানে হায়ার স্টাডি এবং প্রবেশিকা সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য পাবেন উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণরা। এদিন থেকেই অনলাইনে পিপিএস, পিপিআরে আবেদন করা যাবে। অর্থাৎ স্ক্রটিনি ও রিভিউ করতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। এদিন রাত থেকেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে ফলাফল পাবে ছাত্রছাত্রীরা। এদিন সংসদের ৫৬টি ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার থেকে মার্কশিট তুলে দেওয়া হয়।