বেজিংয়ের ফাঁদে ইউনূস

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান চিন সফর করে এলেন। যেদিন তিনি বেজিংয়ে রওনা হলেন, সেদিন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি চিঠিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। ভারত ও বাংলাদেশ তাঁদের বীরত্বের কথা কোনওদিন ভুলবে না। ঢাকায় ভারতের হাই কমিশন চিঠিটি প্রকাশ করে।

সে যাই হোক, বেজিংয়ে উষ্ণ সংবর্ধনা পেলেন খান সাহেব। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে আলোচনায় বসলেন। ইউনূস খান জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে যে ধ্বংসলীলা চলেছিল, তার সংস্কারের কাজে তদারকি সরকারের তত্ত্বাবোধনে যেভাবে চলছে, তা সহজে বুঝিয়ে বলেন চিনের প্রেসিডেন্টকে। আলোচনা শেষে, চিনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ২১০ কোটি ডলার অর্থ ও ঋণ সাহায্য ঘোষণা করলেন। এই ঘোষণা শুনে ইউনূস খান আপ্লুত হয়ে চিনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশকে এভাবে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ জানালেন। সড়ক, সেতু এবং বন্দর উন্নয়নের কাজে এই অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ। তদারকি সরকারের প্রধান চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশে মাঝারি ও ছোট শিল্প স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন। কারণ এই ধরনের শিল্প স্থাপন হলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং বেকাররা কাজ পাবে। চিনের প্রেসিডেন্ট ইউনূস খানকে আশ্বাস দেন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য চিন সবরকম চেষ্টা করবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে দুর্দিন চলছে হাসিনা সরকারের পতনের পর, তা একদিন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে। এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে চিন। ইউনূস খান এতদিন দেওয়া ঋণের হার ৩.৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.২ শতাংশ করার আর্জি জানান চিনের প্রেসিডেন্টের কাছ।

ইউনূসের চিন সফরের আগেই বাংলাদেশের চিনের রাষ্ট্রদূত তদারকি সরকারের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে এই সফর সফল হয়ো নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চিনের প্রেসিডেন্ট শি ইউনূস খানের সঙ্গে দেখা করতে বিশেষভাবে আগ্রহী। এটা বড় কিছু ঘটার পূর্ব লক্ষণ বলে মনে করেছিলেন বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল। অর্থনৈতিক এবং কারিগরি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, খেলাধুলো ও স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিকল্পে আটটি চুক্তি হল বাংলাদেশ ও চিনের মধ্যে। চিনা শিল্পের জন্য আলাদা অঞ্চল এবং তার জন্য ৩৫ কোটি ডলার, সাংলা বন্দরের জন্য ৩০ কোটি ডলার সাহায্যের কথা ঘোষণা করে বেজিং। ইউনূস খান বলেন, চিনা শিল্প স্থাপনের জন্য বেজিং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করবে।


জাপান, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের পরে চিন বাংলাদেশের চতুর্থ ঋণদানকারী দেশ ও সংস্থা। তবে বিশ্বের বহু দেশ চিনের মহাজনী ঋণ ব্যবসার কাছ পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অনুদানের অর্থ ঋণের সঙ্গে যোগ করেছে চিন। হাসিনা সরকারের জমানায় বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা তাঁকে সতর্ক করেছিল, এভাবে চিনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু হাসিনার সরকার তাদের কথার কোনও আমল দেয়নি। সুতরাং হাসিনার আমলেও চিন থেকে নেয়ো ঋণের বোঝা বেড়ে গিয়েছিল। চিনের জলসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা কালে বাংলাদেশের নদী ও জল ব্যবস্থাপনায় ৫০ বছরের একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা বলেন ইউনূস খান। এই আলোচনায় তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তাও বিশদে বলা হয়। তিনি বলেন, ভারতের ওপর বাংলাদেশ চাপ সৃষ্টি করেই চলেছে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তির জন্য। বাংলাদেশের জলসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, চিন ও বাংলাদেশের নদীর জলসমস্যা প্রায় একই ধরনের।

এদিকে পাকিস্তানও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশের উন্নয়নকল্পে পাকিস্তান সরকার সবরকম সাহায্য করবে। কিন্তু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেন, বেজিং বাংলাদেশের ঢালাও ঋণ অনুদানের কথা ঘোষণা করল বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে চিন যে বাংলাদেশকে মহাজনী ঋণের কবলে জড়াল, তা কি ইউনূস খান বুঝতে পারলেন? ঋণের অর্থ যদি অনুদানের অর্থের সঙ্গে যোগ হয়, তার জন্য সুদ দিতে হয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার এই ঋণ সুদ সহ শোধ করতে বিরাট আর্থিক দুর্গতিতে পড়বে।

ইউনূস খানের চিনের সফল সফর নিয়ে বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী ছাত্রদের গড়া জাতীয় পার্টি বিএনপি এবং তদারকি সরকারের অনুগত অন্যান্য সংগঠন সাধুবাদ জানিয়েছে। বিএনপি অবশ্য সেই সঙ্গে বাংলাদেশে আশু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে, কিন্তু সেই নির্বাচন কবে হবে, তা এখনও ঠিক করতে পারেনি তদারকি সরকার। বাংলাদেশে চিন ও পাকিস্তান যেভাবে প্রভাব বিস্তার করা আরম্ভ করেছে, তা ভারতের কাছ চরম অস্বস্তিকর।