• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

টোপ ফেলেছেন যোগী

উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি যোগী সরকারের এই নতুন নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে

যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।

সোশ্যাল মিডিয়ার স্বর দমন করতে নরেন্দ্র মোদি ইউটিউবার ও অন্যান্য মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনার পরিকল্পনায় ব্যস্ত। এই সময় গোটা সোশ্যাল মিডিয়ার দখল নিতে পথে নেমেছেন মোদির দক্ষিণহস্ত আদিত্যনাথ যোগী। উত্তরপ্রদেশে যোগী নিজের প্রচারে এই প্ল্যাটফর্মে নিজস্ব ‘ধামাধরা বাহিনী’ গড়ে তুলতে এখন ‘খুল্লাম খুলা’ মাঠে নেমে পড়েছেন। মোদি যেমন গোটা মিডিয়াটাকেই গত দশ বছরে নিজের তল্পিবাহক বানিয়ে ফেলেছেন। এখন যোগী সরকারের হয়ে প্রচার করলেই উত্তরপ্রদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা মাসে ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত নতুন ডিজিটাল মিডিয়া পলিসিতে এমনই ব্যবস্থা করেছেন আদিত্যনাথ যোগী।

তবে শুধু পুরস্কারই নয়, সরকারের না-পসন্দ পোস্ট ঠেকানোর বন্দোবস্ত নতুন আইনে রেখেছেন যোগী। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের কাছে ‘আপত্তিজনক’ ও ‘দেশবিরোধী’ পোস্টের জন্য কড়া সাজারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ‘দেশবিরোধী’ বা ‘আপত্তিকর’ কোনও টেক্সট, ভিডিও, ছবি, কার্টুন ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হলে অভিযুক্তের তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি যোগী সরকারের এই নতুন নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই নয়া নীতি নিয়ে বিজেপি সরকার আসলে গোটা ডিজিটাল মিডিয়ার দখল নিতে চাইছে। যেখানে নিজেদের বাহবা দেওয়ানোর পাশাপাশি সমালোচনাকে দমিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কংগ্রেসের কথায়, সরকার এখন নগ্নভাবে ডিজিটাল মিডিয়ার দখলে নেমেছে। গণতন্ত্রের পক্ষে এটাই সবচেয়ে বড় বিপদ।

এই নতুন নীতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। পরবর্তী সময়ে এই পুরস্কার ও শাস্তি বিধানও নতুন আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এর আগে এই ধরনের অপরাধের বিচার আইটি অ্যাক্টের ৬৬ই এবং ৬৬এফ ধারায় করা হতো। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে রাশ টানতে কেন্দ্রে মোদি সরকার গতবার বিরোধীশূন্য সংসদে পাশ করিয়ে নেওয়া ডিজিটাল পলিসিকে ঘষেমেজে আরও ক্ষুরধার করতে নতুন আইন আনছে। যেখানে, মোদি-বিরোধী ইউটিউবার বা ইনফ্লুয়েন্সারদের টুঁটি টিপে ধরার যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

এখন যোগীও সেই কণ্ঠরোধের পাশাপাশি অর্থের টোপ দিয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের নিজের প্রচার করার কাজে নামাতে চলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম জুড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প, উদ্যোগ নিয়ে বিষয়বস্তু শেয়ার করা হবে আগামী দিনে। সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের প্ল্যাটফর্মে সরকারের স্কিম ও উদ্যোগগুলি শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মাসে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারে। এই নতুন পলিসি সামাজিক মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য রোজগারের সুযোগও তৈরি করবে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হয়েছে। সরকারের হয়ে প্রচার করলে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের যে মাসিক অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে, এমন উদ্যোগ অভিনব বলেও দাবি করা হয়েছে। নীতিতে কোন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে কে কত টাকা পর্যন্ত পেতে পারে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে।

দেশে উত্তরপ্রেদশ সরকারই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়াকে সরকারি প্রচারে ব্যবহারে এমন সুনির্দিষ্ট প্রকল্প হাতে নিল। যদিও দেশের কমবেশি সব সরকারই অনলাইন নিউজ পোর্টালকে সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। এক্স হ্যান্ডল, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের জন্য মাসে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ, ৪ লক্ষ ও ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে ইউটিউবে ভিডিও, শর্টস ও পডকাস্টের জন্য ইনফ্লুয়েন্সাররা মাসে ৮ লক্ষ, ৬ লক্ষ ও ৪ লক্ষ টাকা করে পেতে পারেন। সরকার একটি এজেন্সি মাধ্যমে যাবতীয় বিষয়টি দেখাশোনা করবে বলেও জানানো হয়েছে।

যোগীর এই কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা ও চাটুকার মিডিয়ার বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন।