• facebook
  • twitter
Tuesday, 8 April, 2025

কাজের বাজারে নারীরা পিছনে

লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থান রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দেশের ৮ কোটি ৯০ লক্ষেরও বেশি শহুরে মহিলাই ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে শ্রমবাজারের সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নন।

প্রতীকী চিত্র

আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের প্রাক্কালে ভারতে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর মোদীর রাজত্বে মহিলারা আদৌ নিরাপদ কিনা, তাঁদের জীবনের, শ্রমর, সম্মান ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা আছে কিনা, প্রশ্নগুলি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। অথচ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গুজরাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় নিরাপত্তার দায়িত্বে শুধু মহিলা কর্মী ও আধিকারিকরা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার গুরুদায়িত্ব মহিলাদের কাঁধে চাপিয়ে চটক দেখানোর চেষ্টা করা হলেও প্রশ্ন উঠছে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে।

লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থান রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, দেশের ৮ কোটি ৯০ লক্ষেরও বেশি শহুরে মহিলাই ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে শ্রমবাজারের সঙ্গে কোনওভাবেই যুক্ত নন। অর্থাৎ তাঁরা কোনওরকম কাজই পাননি বা করেননি। এমনকি দেশের নানা প্রান্তে প্রতিদিন ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, গার্হস্থ্য হিংসা সহ সমস্ত ধরনের নারী নির্যাতন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মেয়েদের কাজের সুযোগ কমে আসা, তাঁদের আরও পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার ভয়ানক প্রবণতা যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সেকথাই এই রিপোর্টের প্রতিটি ছত্রে উঠে এসেছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত শ্রমজীবী মহিলাদের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জার্মান বামপন্থী নেত্রী ক্লারা জেটকিন বছরের একটি দিনে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মহিলা দিবস পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমেই গৃহীত হয়েছিল ওই সম্মেলনে। তারপর বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন দিনে তা পালন করতে শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত ৮ মার্চ দিনটিকে নির্দিষ্ট করা হয়, ১৯১৭ সালের যে দিনে জার-শাসিত রাশিয়ায় ‘রুটি ও শান্তি’র জন্য ধর্মঘট শুরু করেছিলেন মহিলারা। দিনটির নাম অবশ্য দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস। তবে এ বছর দিনটির প্রাক্কালে ভারতের শহুরে মহিলাদের কর্মংস্থান নিয়ে চেন্নাইয়ের ‘গ্রেট লেকস ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট’-এর তৈরি রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসায় এটি জেটকিনের মূল প্রস্তাবটিকে নতুন মাত্রায় প্রাসঙ্গিক করে তুলল বলা যায়। এই রিপোর্টের শিরোনাম ‘ইন্ডিয়া’স জেন্ডার এমপ্লয়মেন্ট প্যারাডক্স’। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ছ’বছরে ভারতে বিপুল সংখ্যক মহিলা কাজের বাজারের বাইরে। শিক্ষিত মহিলাদের দক্ষতার কোনও ব্যবহার হয় না। ১ কোটি ৯০ লক্ষ স্নাতকোত্তীর্ণ মহিলার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতাকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভারত ব্যর্থ। এই মহিলাদের কেউ ব্যক্তিগত পছন্দে কাজে ঢোকেননি। আবার অনেকেই সামাজিক বিধিনিষেধের কোপে পড়ায় ইচ্ছা থাকলেও কাজ করতে পারেননি। মেয়েদের পড়াশোনা করানো মানে বাজে খরচ, আজও এই প্রচলিত ধারণারও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে রিপোর্টে।

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পুরুষদের কর্মসংস্থানের গতি মহিলাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ‘পিরিয়ডিক লেবার সার্ভে’, ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভে’ ও ‘টাইম ইউজ সার্ভে’র তথ্য পর্যালোচনা করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। মূলত ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের এই রিপোর্টের আওতায় রাখা হয়। রিপোর্টে আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হিসাবে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষিত পরিবারগুলিতে লিঙ্গবৈষম্য প্রকট।

ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) তাদের রিপোর্টে বলেছে, এই গতিতে চললে কর্মসংস্থানের হারে লিঙ্গসাম্য আসতে ১৯০ বছর লেগে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে এক নিদারুণ তথ্য, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ৪১ শতাংশ মহিলা পরিবারের প্রত্যেকের যত্নে নজর রাখেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ২১.৪ শতাংশ, কার্যত অর্ধেক।

কাজের বাজার থেকে বিপুল অংশের মহিলাদের বিচ্ছিন্ন থাকার অর্থই হলো, দেশের অগ্রগতি সমানতালে এগোচ্ছে না। কাজের মূলধারার সঙ্গে আরও বেশি মহিলাদের যুক্ত করতে পারলেই আর্থিক দিক থেকে পরিবার ও সমাজ অনেক বেশি সাবলম্বী হয়ে উঠবে।