১ কোটি দলীয় সদস্য সংগ্রহ সম্ভব হবে কি বিজেপির বঙ্গে? দলের অন্দরেই চর্চা

প্রতীকী চিত্র

শ্রীধর মিত্র

অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে বঙ্গ সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সেকেন্ড ইন-কম্যান্ড অমিত শাহ। সীমান্ত অঞ্চল বনগাঁর পেট্রাপোলে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ওই দিনই বিকেলে সল্টলেকের ইজেডসিসিতে দলীয় বিজেপির সদস্যসংগ্রহ অনুষ্ঠানের সূচনায় এক কোটি সদস্য সংগ্রহের লক্ষমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন বঙ্গের জন্য। এখন পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহের যা অবস্থা, তাতে কপালে ভাঁজ পড়ছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে। এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দলীয় সদস্য সংগ্রহের অভিযানের ওপর তীক্ষ্ণ নজর চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা। সদস্য সংগ্রহের অবস্থা খুব একটা ভাল নয় এ পর্যন্ত (১০ নভেম্বর), আগামী বুধবার বঙ্গের ছয়টি বিধানসভার উপনির্বাচন নিয়ে দলীয় বঙ্গ নেতৃত্ব প্রচারে ব্যস্ত। আর সেখানেই সদস্য সংগ্রহের ‘শ্লথ গতি’ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বঙ্গ বিজেপিকে।

এ পর্যন্ত সদস্য সংগ্রহের উল্লেখযোগ্য উত্তরবঙ্গের জেলা কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, নদিয়া উত্তর (কৃষ্ণনগর) সাংগঠনিক এলাকায়/জেলায়। অবস্থা খারাপ মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর, বোলপুর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া; জয়নগর, ডায়মন্ডহারবার এবং কলকাতা সাংগঠনিক জেলাগুলিতে। যদিও কোচবিহারে বেশ কয়েকজন বিজেপির বিধায়ক রয়েছে, বঙ্গ সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার স্বয়ং বালুরঘাটের সংসদও বটে, ফলে ‘শক্তপোস্ত ঘাঁটি’ উত্তরবঙ্গের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল থেকে সদস্য সংগ্রহ ভালো হওয়ারই কথা বলে দলীয় সূত্রের মতে। তবে বিধায়ক-সংখ্যা কম এবং দলীয় সাংসদ না-থাকার দরুন কৃষ্ণনগর লোকসভা বর্তমানে বিজেপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সদস্য সংগ্রহ দলীয় স্বস্তির কারণ বলে মনে করছে দলের অভিমত। এক সময়ে সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য থাকা সত্ত্বেও একদা শক্ত ঘাঁটি বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরে দলীয় সদস্য সংগ্রহে এ পর্যন্ত তলার দিকে কেন, সেই প্রশ্নই উঠেছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরমহলে, অপরদিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর-জঙ্গিপুর, জয়নগর-ডায়মন্ডহারবার, কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় যে সদস্য সংগ্রহ যে খুব বেশি হবে না। সেই ভাবনা-চিন্তা দলীয় স্তরে আগেভাগেই ছিল।


সদস্য সংগ্রহের সূচনার দিনই আনুমানিক হাজার ৪০ জন সদস্যপদ সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ হাজার সদস্যপদ গ্রহণ করে আসছিল। এ পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে সদস্য হওয়ার জন্য ‘মিসড কল’ এসেছে, কিন্তু দরখাস্তের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করার পরে দলীয় সদস্য করা হয়েছে। সদস্য সংগ্রহে আরও জোর দেওয়ার জন্য বঙ্গ সভাপতি থেকে সাংসদ-বিধায়ক থেকে বুথ সভাপতি পর্যন্ত সমস্ত পদাধিকারীদের স্থানীয় অথবা যে কোনও বুথে সদস্য সংগ্রহের অভিযানে নামতে বলা হয়েছে বিজেপির তরফ থেকে। বঙ্গের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের দায়িত্ব্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় সম্পদক ঋতুরাজ সিংহ ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘বঙ্গের’ পরিস্থিতি সদস্য সংগ্রহে ‘হতাশজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসালও ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৪৩টি, প্রতিদিন কেন ৪৩ হাজার দলীয় সদস্য সংগ্রহ করা যাচ্ছে না?

বনসালের মতে, বঙ্গ বিজেপিতে অনেকেই ব্যক্তিগত পছন্দ— অপছন্দের ভিত্তিতে দলীয় স্তরে পদ পেয়েছেন, সেই জন্যই এই অবস্থা! আসন্ন ২০২৬ বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বর্তমান অবস্থার রদবদল ঘটাবেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের বঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যসভার সাংসদ ও দলীয় মুখপাত্র সুবক্তা শমীক ভট্টাচার্যকে নির্দেশ দিয়েছেন কোন কোন জেলা সভাপতি সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন না, সেই রিপোর্ট জাতীয় সাধারণ সম্পাদককে জমা দিতে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের ২০ তারিখে দিল্লিতে সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে. এর আগেই বঙ্গে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ সদস্য সংগ্রহের বার্তাও দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে খাতা-কলমে বুথ কমিটি তৈরি হয়েছিল। এবার যেন তেমন না হয়। সাংসদ তথা বঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সংগ্রহের শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘কোন দিন কোনও সংগঠন সংখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। তা হলে তো সংগঠন স্থবির হয়ে যাবে। আরও বেশি করে আগামী দিনের জন্য গতি বাড়াতে হবে।’