কবে দূর হবে হতাশা?

পদক তালিকায় দুই অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছতে পারল না ভারত। এবারের প্যারিস অলিম্পিক্সে গত টোকিও অলিম্পিক্সের চেয়ে ভারতের পদকপ্রাপ্তি কমেছে। টোকিওতে একটি সোনা, দু’টি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট সাতটি পদক মিলেছিল। এটিই ছিল অলিম্পিক্সে ভারতের সবচেয়ে ভালো ফল। এই ফল দেখেই ভারতের অলিম্পিক্স কর্মকর্তারা উৎসাহিত হয়ে পড়েন। কেন্দ্রও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছিল। অপেক্ষাকৃত ভালো পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই সুবাদেই প্যারিস অলিম্পিক্সে দুই অঙ্কের সংখ্যায় পদকপ্রাপ্তি লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এবার টোকিওর তুলনায় একটি পদক কম পাওয়া শুধু নয়, কোনও সোনা মেলেনি। মিলেছে একটি রুপো আর পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদক।

লন্ডন অলিম্পিক্সে পদক তালিকায় ভারতের স্থান অনেক নিচে— ৭১ নম্বর স্থানে। অথচ পাকিস্তান মাত্র একটি পদক পেয়েও তালিকায় রয়েছে ভারতের ওপরে— ৬২ নম্বর স্থানে। কারণ পদকটি সোনা। সোনার কদরই যে আলাদা। জ্যাভলিনে সোনা জয় করেন পাকিস্তানের আরশাদ নাসিম। ভারতের নীরজ চোপড়াকে সন্তুষ্ট থাকতে হল রুপো নিয়েই। সবদিন সকলের সমান যায় না। নীরজের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। কিন্তু অন্য খেলোয়াড়রা কী করলেন? এবার তো ভারত প্যারিসে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দল পাঠিয়েছিল। দলে মোট ১১৭ জন প্রতিযোগী ছিলেন। এঁদের মধ্যে কেউই সোনা জিততে পারেননি।

১১৭ জন প্রতিযোগী পাঠিয়েও ভারতের পদক মাত্র ৬টি। এর মধ্যে অ্যাথলেটিক্সে সবচেয়ে বেশি ২৯ দন প্রতিযোগী পাঠিয়েও পদক বলতে মাত্র একটি— জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়ার রুপো। আর অ্যাথলেটিক্সের চেয়ে আটজন কম প্রতিযোগী পাঠিয়ে শ্যুটিংয়ে তিনটি ব্রোঞ্জ পদক মিলেছে। এর মধ্যে একা মনু ভাকের জিতেছেন দু’টি পদক। কুস্তিতে ব্রোঞ্জ এসেছে একটি। হকিতে এবারও ব্রোঞ্জ পেয়েছে ভারত। ভারতের দুর্ভাগ্য, ব্যাডমিন্টনে পিভি সিন্ধু এবার কিছু করতে পারলেন না। দৌড়, ভারোত্তলন, সাঁতারে অনেক টাকা ঢালা হলেও একটিও পদক জোটেনি। শুধু যে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী দল পাঠিয়েছিল ভারত তা নয়, ১১৭ জন প্রতিযোগীর সঙ্গে ১৪০ জন কোচ এবং সাপোর্ট স্টাফও পাঠানো হয়েছিল, যাতে প্রতেকে প্রতিযোগীকে ভালভাবে দেখভাল করা যায়। প্যারিস অলিম্পিক্সের জন্য নির্বাচিত প্রতিযোগীদের পিছনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঢালা হয়েছিল। তারপরেও যা ফল হয়েছে, তাতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল হয়নি।


১৪০ কোটি মানুষের দেশ হয়েও পদক তালিকায় ভারতের স্থান এত নিচে থাকাটা অন্য ছোট দেশগুলির কাছে বিস্ময়কর লাগতেই পারে। কারণ আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের চেয়ে অনেক ছোট ছোট দেশও পদক তালিকায় ভারতের অনেক উপরে রয়েছে। এটি ভারতের কাছে খুবই লজ্জার। আমেরিকা, চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সের নাগাল পেতে ভারতের আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে কে জানে!

জনসংখ্যায় ভারতের পর হলেও চিন এবারের অলিম্পিক্সে পদক তালিকায় ৪০টি সোনা, ২৭টি রুপো ও ২৪টি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে মোট ৯১টি পদক পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ৪০টি সোনা, ৪৪টি রুপো ও ৪২টি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে মোট ১২৬টি পদক পেয়ে আমেরিকার স্থান পয়লা নম্বরে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারত পদক পেয়েছে মাত্র ৬টি। এই হতাশা কবে দূর হবে?

খেলাধুলা গড়ে তোলে জাতির মেরুদণ্ড। সেই মেরুদণ্ড কবে শক্তিশালী হবে?