• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

গণপিটুনির দায় কে নেবে?

১ জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করেছে৷ ন্যায় সংহিতার ১০৩(২) ধারায় গণপিটুনিতে দোষীর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে৷ সেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃতু্যদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশ করানো পুরনো বিলের ‘ফটোকপি’৷ গণপিটুনি রোধে বাংলা পাঁচ বছর আগে যা ভেবেছিল, দিল্লি এখন তা ভাবল৷ গণপিুটনিতে মৃতু্য সভ্য সমাজের লজ্জা৷ এটা কিছু মানুষের বিকৃত মানসিকতার

১ জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করেছে৷ ন্যায় সংহিতার ১০৩(২) ধারায় গণপিটুনিতে দোষীর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে৷ সেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃতু্যদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশ করানো পুরনো বিলের ‘ফটোকপি’৷ গণপিটুনি রোধে বাংলা পাঁচ বছর আগে যা ভেবেছিল, দিল্লি এখন তা ভাবল৷

গণপিুটনিতে মৃতু্য সভ্য সমাজের লজ্জা৷ এটা কিছু মানুষের বিকৃত মানসিকতার করুণ পরিণতি৷ অনেকেই এই ঘটনাকে পুলিশ প্রশাসনের উপর মানুষের অনাস্থা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন৷ কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ আবার নেতা-মন্ত্রীদের উপর রাগ থেকেই এমনটা ঘটছে বলে দাবি করেছেন৷ তাঁদের বক্তব্য, নেতা-মন্ত্রীদের কিছু করতে পারছে না৷ তাই সুযোগ পেলেই পিটিয়ে মেরে গায়ের জ্বালা মেটাচ্ছে৷ এসব যে কেবলই রাজনীতির কথা, তা বলাই বাহুল্য৷ তবে, একের পর এক গণপিটুনির দায়ে পুলিশ অস্বীকার করতে পারে না৷ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সজাগ থাকলে ঘটনাগুলি মৃতু্য পর্যন্ত গড়াত না৷

রাজ্যে গণপিটুনির ঘটনা ঘটতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ তিনি জ্যোতি বসুর স্টাইলে ‘এমন তো কতই হয়’ জাতীয় মন্তব্য করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেননি৷ উল্টে তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ যেমন প্রশাসনকে দিয়েছেন, তেমনই মৃতের পরিবারকে দিয়েছেন চাকরি৷ তাতে সেই পরিবারগুলির মানসিক যন্ত্রণা লাঘব না হলেও আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাবে৷

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পিটিয়ে মারার ঘটনায় যারা যুক্ত হয়, তারা ‘কান দিয়ে দেখা’ গোত্রের মানুষ৷ তাই তারা অতি সহজেই চোর, ছেলেধরা, ডাইনি ইত্যাদি গুজবের অংশীদার হয়ে ওঠে৷ পিটিয়ে মারার ঘটনায় কারও শাস্তি না হলে তা ছড়িয়ে পড়ে ছোঁয়াচে রোগের মতো৷ এই ধরনের ঘটনা আটকাতে গেলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দরকার অপরাধীদের কঠোর শাস্তি সুনিশ্চিত করা৷

কারও কিছু অপছন্দ হলেই তাকে চরম শাস্তি দিতে হবে, এটা মানসিক বিকারের লক্ষণ৷ এই ধরনের বিকারমুক্তির সর্বোত্তম দাওয়াই কঠোর শাস্তি৷ সম্ভবত সেই উপলব্ধি থেকেই ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিটিয়ে মারার ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন৷ তার জন্য তিনি সেবছর বিধানসভায় পাশ করিয়েছিলেন ‘দ্য ওয়েস্টবেঙ্গল প্রিভেনশন অফ লিঞ্চিং বিল’৷ আইনে পরিণত করার জন্য পাঠিয়েছিলেন রাজভবনে৷ কিন্ত্ত তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় থেকে বর্তমান রাজ্যপালও ওই বিলে সই করেননি৷ সেই বিলে পিটিয়ে মারার ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে মৃতু্যদণ্ডেরও বিধান ছিল৷

যে কোনও গণহত্যার পিছনে থাকে পরিকল্পনা৷ আর তাকে গণরোষের তকমা দিতে গেলে রটাতে হয় গুজব৷ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গুজব আগুনের চেয়েও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ গুজবের জেরে মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা৷ তাই সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

১ জুলাই থেকে চালু হওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যায়সংহিতা আইনের ১০৩(২) ধারায় গণপিটুনিতে দোষী ব্যক্তির শাস্তির উল্লেখ রয়েছে৷ পাঁচ বছর আগে রাজ্যের পাঠানো বিলে রাজ্যপালের সম্মতি মিললে হয়তো নিরীহ, নিরপরাধ অনেক মানুষকে হারাতে হতো না৷ দুর্ভাগ্য এটাই৷