• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

সাদা পাইপ, নহ তুমি শ্বেত-পরী

সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ঘটনার কথা দিয়ে শুরু করি আজকের সমীক্ষা৷ এক উকিলবাবুর চেম্বারে এসেছেন এক বয়স্ক মহিলা৷ তিনি এসেছেন তাঁর ছেলেকে পুলিশ মাদক সেবনের জন্য গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে৷ উকিলবাবু সমস্ত ব্যাপার কী জেনে ওই ভদ্রমহিলাকে বললেন, আপনার ছেলের জামিন হবে না, ওকে এখন…৷ কথা থামিয়ে দিয়ে ভদ্রমহিলা উকিলবাবুকে বলেন, না উকিলবাবু আমি ছেলের জামিন

সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

একটি ঘটনার কথা দিয়ে শুরু করি আজকের সমীক্ষা৷ এক উকিলবাবুর চেম্বারে এসেছেন এক বয়স্ক মহিলা৷ তিনি এসেছেন তাঁর ছেলেকে পুলিশ মাদক সেবনের জন্য গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে৷ উকিলবাবু সমস্ত ব্যাপার কী জেনে ওই ভদ্রমহিলাকে বললেন, আপনার ছেলের জামিন হবে না, ওকে এখন…৷ কথা থামিয়ে দিয়ে ভদ্রমহিলা উকিলবাবুকে বলেন, না উকিলবাবু আমি ছেলের জামিন বা ছাড়ানোর জন্য আসিনি, আমি এসেছি আপনি দেখবেন ও যেন বাইরে না বেরোতে পারে৷

উকিলবাবু অবাক হলেন৷ সবাই আসে আসামির জামিনের জন্য, কিন্ত্ত ওই ভদ্রমহিলা যাতে ছেলের জামিন না হয় সেজন্য এসেছেন? কেন? তিনি ভদ্রমহিলার কাছ থেকে কারণ হিসেবে জানলেন, এর আগে ছেলেটিকে কয়েকবার জামিন করে ওই ভদ্রমহিলা বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন, কিন্ত্ত প্রতিবারই মাদক গ্রহণের জন্য মায়ের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে মাদক নিত৷ টাকা না দিতে পারলে মাকে মারধর করত৷ এবার যদি ও জামিন পায়, তবে সে পুনরায় মা’কে মারধর করবে টাকার জন্য৷ তাই সে এসেছে ছেলে হাজতে থাকুক৷ যেন জামিন না পায়৷

তাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং সমগ্র পৃথিবীতে মানবজাতির কল্যাণ্যার্থে এক একটি বিষয় নিয়ে এক একটি দিন বিশেষ দিবস হিসাবে পালন করার রেওয়াজ রয়েছে৷ সেরকম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ ‘হু’ (ডব্লুএইচও) প্রতি বছর ৩১ মে দিনটি বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস হিসাবে বা ধূপান বিরোধী দিবস হিসাবে পালন করার জন্য চিহ্নিত করেছে৷ উদ্দেশ্য তামাক সেবনের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা৷ দেখা গেছে প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ছয় কোটিরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছেন শুধু তামাক সেবনের ফলে৷ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঠিক করে যে ১৯৮৮-র ৭ এপ্রিল ধূমপান বিরোধী দিবস হিসাবে পালন করবে৷ ১৯৮৮-তে ঠিক হলো প্রতি বছর ৩১ মে তামাক বিরোধী দিবস হিসাবে পালিত হবে (ওয়ার্ল্ড নো টোবেকো ডে)৷ দুঃখের বিষয়, ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও তামাক ব্যবহার তথা ধূমপানের বহর দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ ২০০৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধূমপানের এবং সমস্ত রকমের তামাক দ্রব্যের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া, পৃষ্ঠপোষকতা করা ইত্যাদি বন্ধের উপর জোর দেয়৷ কিন্ত্ত বাস্তব অন্য কথা বলে৷ নেশা যখন রক্তে ঢুকে যায়, মানুষের তখন সেই নেশা থেকে বের হয়ে আসা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে৷ তখন হাজার উপদেশে মন সায় দেয় না৷ অনেকটা উপরের গল্পের মতো৷ মোদ্দা কথা হয় চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি৷

আমাদের দেশে প্রায় ১২ কোটি মানুষ নিয়মিত ধূমপান করেন৷ চিনে ওই সংখ্যা অনেক বেশি, প্রায় ৩৫ কোটির মতো৷ ভারতে এক তৃতীয়াংশ মানুষ যে কোনও তামাক সেবন করেন৷ এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬০ শতাংশ৷ বর্তমানে পুরুষের সঙ্গে মহিলারাও তামাক সেবনে আসক্ত হচ্ছেন৷ সমাজে এটার কুপ্রভাব পড়ছে৷ যেমন একজন পুরুষের চেয়ে মহিলা ধূমপায়ীর ক্ষেত্রে তার গর্ভজাত সন্তান হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ৷ এবং মহিলাটি ও মোট তিন জন তামাকের দ্বারা প্রভাবিত হলেন৷ তাই মহিলারা যাতে ধূমপানে আসক্ত না হন, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা একান্ত প্রয়োজন৷ অনেক সময় অজুহাত ওঠে, পুরুষতান্ত্রিকতার দোহাই তুলে৷ কিন্ত্ত বাস্তব পরীক্ষা বা সমীক্ষা তা বলে না৷ পরীক্ষা বলছে হূদরোগে আক্রান্ত তামাক সেবনকারীদের মধ্যে মহিলারা বেশি৷ ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম৷ গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ফলে নবজাতকের সমূহ ক্ষতি হচ্ছেই, কমে যেতে পারে তাদের সঠিক বুদ্ধি৷ নিকোটিনের নেশা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে৷ পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে দরকার মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি, যাতে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারি একটা সুন্দর নিকোটিন ফ্রি পৃথিবী৷ তাই শুধু আজ নয়, বছরের প্রতিটি দিন হোক ধূমপান বিরোধী দিবস৷