বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে এসে আশ্রয় নেওয়ার পর জামায়াত ইসলামি সহ পাকিস্তানপন্থীরা লাগাতর ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরাসরি ভারতের বিরুদ্ধে কথা না বললেও, তারা চায় ভারত যেন আওয়ামি লিগকে আশ্রয় না দেয়। তাদের কথায় বাংলাদেশের অন্তিম অবস্থা এই রাজনৈতিক দলটির জন্যই।
ভারতের বিরুদ্ধে প্রচার চললেও, ভারত বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক সংঘর্ষে পাশে আছে। তীব্র অর্থনৈতিক দূরবস্থার মধ্যে পরে হাবুডুবু খাওয়ায় ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাংলাদেশে যাচ্ছে। ভারতের সাহায্য না পেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এত অকাল হওয়ায় সেখানে মানুষের দুর্দশার সীমা থাকত না। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের অন্যান্য রাজ্যে শাকসবজি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অসম্ভব মূল্যবৃদ্ধি— সেদিকে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। প্রতিবছর দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে আসে ফিস ইমপর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মারফত— এবার ঢাকার তদারকি সরকার সেই পরিমাণ ইলিশ তো পাঠালই না— উল্টে অন্তবর্তী সরকারের একজন নেতা সরাসরি বলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ এবার ভারতে পাঠানো হবে না। কিন্তু তার কথায় সায় দেননি তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস খান। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় তিন হাজার টন ইলিশ বাংলাদেশ পাঠাবে ভারতে— তার বেশি একেবারেই নয়, কারণ তা হলে বাংলাদেশবাসী ইলিশ মাছ পাবে না।
তবে, এই তিন হাজার টন পদ্মার ইলিশ অ্যাসোসিয়েশনের মারফত পশ্চিমবঙ্গে এলো কিনা, তা এখনও জানা যায়নি। যে ইলিশ এসেছে তার মূল্য আাকাশছোঁয়া। অথচ ভারত থেকে কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ, আলু, সহ অন্যান্য পণ্য নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে চার কোটি ডিমও আমদানি করেছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার। আর এইভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ওপার বাংলায় যাওয়ার ফলে এখানে সেইসব দ্রব্যর তীব্র মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এই মূল্য দিয়ে সেই সব জিনিস কেনা। অথচ কেন্দ্রের মোদী সরকারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হ্রাস করার কোনও প্রয়াসই এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছে না— কারণ কেন্দ্রের সাহায্য ব্যতীত মূল্যবৃদ্ধি কী করে রোধ করা যায়? এখানে একমাত্র এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের কাজ হল মজুত দ্রব্যাদি উদ্ধার করা। সে কাজেও গতি নেই।
কোনও দিন কি শুনেছেন, কাঁচালঙ্কার মূল্য কেজিপ্রতি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় ঘোরাফেরা করা? ১০০ গ্রাম কাঁচালঙ্কার মূল্য ২০টাকা। পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজি। আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে এই মূল্যে এই সব জিনিস কিনতে গিয়ে ভিরমি খেয়ে পড়ছে। আর এই সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে, এখানকার মানুষদের দুর্দিনে ফেলে। বাংলাদেশ ভারত থেকে ডিম আমদানি করার জন্য এই বাংলায় জোড়া প্রতি ডিমের মূল্য এখন ১৪ টাকা। কিছুদিন আগেও একটি ডিমের মূল্য ছিল ৫ থেকে ৬ টাকা।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কাঁচালঙ্কার মূল্য ১০০ টাকা প্রতি কেজি উঠেছিল। এভাবে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন সাধারণ মানুষ। হোটেল, রেস্টুরেন্টে কাঁচালঙ্কা প্রাতঃরাশের সময় দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জ্যোতি বসু তখন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কেন্দ্রকে বলেছিলেন বিএসএফ সীমান্তে যেন কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে বাংলাদেশে কাঁচালঙ্কার পাচার রোধ করা যায়। এতে কাজ হয়েছিল। কাঁচালঙ্কা এবারও বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে এত মূল্যবৃদ্ধি। আলু কেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে? ভারতে আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে। তাহলে এখানকার মানুষকে কেন এত বেশি মূল্যে আলু কিনতে হবে? বাম আমলে আলুর মূল্য কেজি প্রতি ৮০ টাকায় উঠেছিল। তদানীন্তন সরকার রেশন দোকানের মাধ্যমে আলু সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছিল। মূল্য ছিল সম্ভবত ৩০ টাকা প্রতি কেজি। কিন্তু রেশন দোকান থেকে যে আলু সরবরাহ করা হত, গুণমান খারাপ ছিল। বাছাই করে পচা আলু ফেলে দেওয়া হত।
বাংলাদেশের এখন প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশছোঁয়া। তা কেনা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সুতরাং সীমান্ত দিয়ে এই সব দ্রব্য বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিএসএফের নজর এড়িয়ে। শ্রীলঙ্কার গণ অভ্যুত্থানের পর ভারত সে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের এই দুর্দিনে ভারত এই দেশকে নানাভাবে সাহায্য করছে। অথচ ভারত বিরোধী প্রচার বাংলাদেশে ধারাবাহিক চলছে। সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের ঘটনাবলীর দিকে। তদারকি সরকার যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলে মনে হয় না। কারণ মহম্মদ ইউনূসের কথায়, বাংলাদেশে এখনও সাধারণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। কিন্তু বিএনপি এখনই নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আওয়ামি লিগ ও তার ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবার বিএনপি দলের নেতাদের একাংশ এই নিষিদ্ধ ঘোষণার বিরোধী।