• facebook
  • twitter
Friday, 11 April, 2025

এ কী শুনি মোদী ও ট্রাম্পের মুখে— সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তাঁদের কথায় পাকিস্তানের গোঁসা

ভারতকে হেয় প্রতিপন্ন করার সবরকম চেষ্টা করে। এই যেমন ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে গত আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের পর সে দেশে হাসিনা সরকারের উৎখাত হয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নারায়ণ দাস

ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানের বড় গোঁসা। কারণ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে একমত হয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এই সন্ত্রাসবাদকে শিকড় শুদ্ধু উপড়ে ফেলার ব্যাপারে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ দমনে একে অপরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এই সন্ত্রাসবাদ যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তা এখনই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না আনতে পারলে বড় বিপদের যে সম্ভাবনা রয়্ছে, সে ব্যাপারে মোদী-ট্রাম্প একমত হয়েছেন।

এই সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনা এবং উস্কানি দেওয়ার পিছনে ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তনের নাম করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। পাকিস্তানের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই যৌথ বিবৃতি একতরফা, ভ্রান্ত এবং কূটনৈতিক নীতির পরিপন্থী। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র শওকত আলি খান এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, সম্প্রতি ভারত-আমেরিকার তরফে যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর পিছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে বলে বলা হয়। এই দুই নেতার বিবৃতি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। তিনি দাবি করেন, আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। ‘তার পরেও এই বিবৃতি এবং তাতে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা, তা দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। এই ধরনের একতরফা বিবৃতির আমরা কঠোরভাবে নিন্দা করছি।’

উল্টে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের এই মুখপাত্র ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগ আনেন। সেই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের অধিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মুসলিম সহ অন্যান্য সংখ্যআলঘু সম্প্রদায়ের উপরে চরম নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। ভারতের মদতেই তাদের ওপর এই পীড়ন চলছে বলে পাক মুখপাত্র বলেন। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সবসময়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাকিস্তান তাই শান্তির পক্ষে, মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন নিচ্ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে পাকিস্তান। তাছাড়া ভারতকে সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ নিয়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাও পাকিস্তানের স্বার্থ বিরোধী। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তিও বিঘ্নিত হবে বলে পাকিস্তান মনে করে। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আনা এই সব অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেননি নয়াদিল্লি।

পাকিস্তানের গোঁসা হওয়ারই কথা। কারণ চোরের মায়ের বড় গলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তার দায় পাকিস্তান অস্বীকার করতে পারে না। পাকিস্তান আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হলেও, জঙ্গি তৎপরতাকে নানাভাবে সাহায্য করছে। পাকিস্তানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে বিপুল অর্থ খরচ করে। অথচ নিজের দেশে দারিদ্র ও বেকারিত্ব বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ মূল্যবৃদ্ধিতে নাকাল। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের প্রসারে পাকিস্তান কখনও থেমে নেই।

তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও আমেরিকার সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদের প্রসার নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। আর এই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা উঠলেই পাকিস্তানের কথা আসছে, এসেছেও। দুই নেতাই সন্ত্রাসবাদ দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে কথা হয়েছে। পাকিস্তান নামক দেশটি জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সঙ্গে দ্বৈরথের ভূমিকা নিয়ে চলছে। কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সদ্য আর্থিক অস্ত্রশস্ত্র সাহায্যপ্রাপ্ত জঙ্গিরা তখন থেকেই তৎপর। আজও সেই জঙ্গিদের নাশকতামূলক কাজ অব্যাহত গতিতে চলেছে। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত যত সরকারই এসেছে, তারা ভারত বিরোধিতার মনোভাব নিয়েই শাসনকার্য পরিচালনা করেছে। পাকিস্তানের এই মনোভাবের জন্য কোনও সময়েই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি হয়নি। উল্টো তিন-তিনটি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়েছে পাকিস্তানকে— এবা প্রতিটি যুদ্ধেই পাকিস্তান পরাজিত হয়ে পিছু হঠেছে। এই পরাজয়ের গ্লানি সত্ত্বেও পাক নেতাদের ভারত-বিরোধী মনোভাবের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। তার অন্যতম কারণ পাকিস্তানের প্রতিটি সরকারই পাক সেনাবাহিনীর নির্দেশে চলে। আর পাক সেনা কর্তৃপক্ষ কখনওই চায় না ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক।

দুর্ধর্ষ ক্রিকেটার ইমরান খান যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন একটি আশা জেগেছিল দুই দেশের সম্পর্কে হয়তো উন্নতি হতে পারে। ইমরান শপথ নেওয়ার আগেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির কথা বলেছিলেন। নয়াদিল্লি ইমরানের কথায়, দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের একটি আশা দেখেছিল। কিন্তু যতদিন যেতে লাগল, ইমরানের সরকারও পাক সেনাবাহিনীর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে উন্নতি হয়ো তো দূরের কথা, আরও খারাপের দিকে চলে গেল। সুতরাং ইমরানও পারলেন না ভারতের সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়তে। আর এখন তো তিনি কারাবাসে।

পাকিস্তান এমন একটি রাষ্ট্র যে তার সরকার সুযোগ পেলেই ভারত বিরোধিতায় নামে। ভারতকে হেয় প্রতিপন্ন করার সবরকম চেষ্টা করে। এই যেমন ভারতের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে গত আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের পর সে দেশে হাসিনা সরকারের উৎখাত হয়। উগ্র ছাত্র সংগঠনগুলির যেমন হেফাজতি ইসলামি, জামায়াত ইসলামি, মৌলবপাদী ও পাকিস্তানপন্থী ছাত্রদের খপ্পরে পড়ে বর্তমান তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান। এরা ছাড়াও রয়েছে বৈষম্যবাদী ছাত্র আন্দোলন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। এরা সবাই ভারতের বিরোধিতায় নেমে ভারতের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালায়। ইউনূস সরকারকে বাধ্য করে যতটা সম্ভব, ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা আলোচনা করতে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও মৌলবাদপন্থী শীর্ষ সেনা অফিসার রয়েছেন।

এরা গোপনে শলাপরামর্শ করে ইউনূস খানের সম্মতি নিয়ে ছয় সদস্যের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল সম্প্রতি পাকিস্তানে চলে যায় সে দেশের সরকার ও পাক সেনাবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিষয়াদি এবং তাদের এই দেশে ভারতের আধিপত্য নিয়ে আলোচনা করতে। ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে এই দেশের কোনও যোগাযোগ ছিল না। এই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ছয়-সদস্যের একটি দল পাকিস্তানে গেল। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা পাক সরকার এবং পাক সেনাবাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করে দলটি বাংলাদেশে ফিরে আসে। এক সপ্তাহও কাটল না, এরই মধ্যে পাক সেনাবাহিনীর তিন সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে চলে এল— তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন আইএসাই প্রধান। তাঁদের ফুল-মালা দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে নামার পর অভ্যর্থনা জানানো হল এবং রাখা হল বাংলাদেশ সেনা পরিচালনাধীন পাঁচতারা হোটেলে। হেফাজতি ইসলামী চাত্র সংগঠনের সদস্যদের পাক সেনাদলের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া হল।

পাক সেনাবাহিনীর সদস্যদের গাজিপুরে নিয়ে গিয়ে সেখানে বাংলাদেশের অস্ত্র নির্মাণ কারখানা ঘুরে দেখানো হল। যতদূর জানা যায়, পাক দলের সদস্যরা বাংলাদেশকে নানা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গাজিপুরের অস্ত্র কারখানা যাতে আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈয়ার করা যায়, তার জন্য পাক সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে। অপর দিকে পাক সেনা দলের আগমনের আগেই করাচি বন্দর থেকে দু’টি জাহাজ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে এসে ভিড়ল। এই জাহাজ দু’টিতে কী কী আছে, তা এখনও অজানা।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরকালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দুই দেশের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা এবং সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ এবং তদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং মন্দির ধ্বংসের বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে জানান। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অবগত আছেন এবং পত্রপত্রিকায় পড়ে সেখানে কী ঘটছে তা সবই জানেন। ট্রাম্প বাংলাদেশের বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই বাংলাদেশ সহ কয়েকটি দেশে আমেরিকা যে আর্থিক অনুদান দেয়, তা বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেন। আমেরিকার আর্থিক সাহায্য বন্ধ হওয়ার ফলে বাংলাদেশ আরও বিপাকে পড়ল। কারণ এমনিতেই বাংলাদেশ এখন আর্থিক সংকটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার সঙ্গে যোগ হল আমেরিকার আর্থিক অনুদান বন্ধের। বাংলাদ্শে এখন বিদ্যুৎ সংকট তীব্র। ইউনূস খানের সরকার ভারতের শিল্পপতি আদানিকে অনুরোধ করেছেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে।

ভারতের বিরুদ্ধে পাক সরকার যেসব অভিযোগ এনেছে তা নিয়ে মুখ খোলেনি নয়াদিল্লি। তবে চিন সীমান্ত নিয়ে মধ্যস্থতার যে প্রস্তাব ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তা সাউথ ব্লক খারিজ করে দিয়েছে। মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প, তখনই চিনের প্রসঙ্গটি ওঠে। তিনি আশা প্রকাশ করেন চিনের সঙ্গেও তাঁর দেশের সম্পর্কে উন্নতি ঘটবে। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের কোনও বিষয়ে মতান্তর ঘটলে তা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে। ভারতের এটাই নীতি।

ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা কালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত সবসময়ই শান্তির পক্ষে। অশান্তি কোনওভাবেই কাম্য নয়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলার পক্ষে ভারত। আজ বিশ্বের অনেক দেশেই সন্ত্রাসবাদ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। যা মানুষের শান্তি বিঘ্নিত করবে। প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে শিল্পপতি আদানিকে সুযোগসুবিধা দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি বলেন, এটা ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে তিনি কোনও উত্তর দেবেন না। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, ভারতে তিনি এখনও কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। তাঁর বিদেশ সফরে সাংবাদিকদেরও তিনি তাঁর সঙ্গে নেন না।