ভাবনাটা এমনই যে পুজোয় পদ্মার সুস্বাদু ইলিশ পাতে না পড়লে ভূরিভোজটা ঠিক যেন জমবে না। তাই প্রতিবছর পুজোর প্রাক্কালে দাবি ওঠে বাংলাদেশের ইলিশ চাইই চাই। ফিস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিবারই পুজোয় বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়। এবারও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। এই সংস্থা এবারও বাংলাদেশ সরকারের কাছে বেশি ইলিশ পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিল।
কিন্তু এবার ইলিশ পাওয়া অত সহজ ছিল না। কারণ সম্প্রতি এই দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটে ঠিক শ্রীলঙ্কার মতো। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ সরকারের পতন ঘটে। অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আন্দোলনকারীরা— বলা হয়েছে সংস্কারপন্থী ছাত্র সমাজ, সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ভাঙচুর করে। বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিগলি বেঙে দেয়। তারা জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তনের দাবি তোলে। অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়। বাংলাদেশ সেনা কর্তাদের সাহায্য ও সহযোগিতায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসকে প্যারিস থেকে উড়িয়ে এনে তার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
ফিস ইমপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন যখন পদ্মার ইলিশ এবার বেশি পরিমাণে আমদানি করার জন্য বাংলাদেশ তদারকি সরকারের কাছে আবেদন জানায়, তখন সরকারের এক কর্তা জানিয়ে দেন, এবার ভারতকে পদ্মার ইলিশ দেওয়া হবে না— পুজোর সময় যা প্রতিবছর দেওয়া হয়। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গবাসীরা এবার পদ্মার ইলিশের মুখ দেখতে পাবে না। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশন ইলিশের জন্য বাংলাদেশের তদারকি সরকারের কাছে ইলিশের জন্য অনুরোধ জানাতেই থাকে। ফলশ্রুতিতে তদারকি সরকার ঠিক করে ভারতকে এবার পুজোর সময় তিন হাজার টন পদ্মার ইলিশ দেওয়া হবে। অ্যাসোসিয়েশন তাতেই খুশি।
অবশেষে বৃহস্পতিবার বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে ঢুকল বহু আকাঙিক্ষত পদ্মার ইলিশ। এইদিন ১২ টন ইলিশ ঢুকেছে— ১২ অক্টোবরের মধ্যে ২৪২0 টন ইলিশ ঢোকার কথা। কেজি প্রতি ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা দরে এই ইলিশ এখানকার বাজারের মূল্য! তদারকি সরকারের এক কর্তা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভারতে ইলিশ গেলে বাংলাদেশের মানুষ প্রয়োজনীয় পরিবাণ ইলিশ পাবে না। সুতরাং তিনি বেঁকে বসেছিলেন এবার ভারতে ইলিশ পাঠানো হবে না। তাছাড়া আর কিছুদিন পর বাংলাদেশে পদ্মার ইলিশ ধরা কয়েক মাসের জন্য বন্ধ থাকবে। যাতে ইলিশের বেশি ফলন ঘটে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করে ৩০০০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তদারকি সরকারের তরফে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তীব্র অর্থ সংকটের মধ্যে চলেছে। সুতরাং ৩০০০ টন ইলিশ ভারতে পাঠালে কিছু বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যাবে। তাছাড়া চোরাচালানও কিছুটা বন্ধ হবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, পদ্মার ইলিশ প্রতি কেজি যদি ২০০০ টাকার বেশি হয়, তাহলে কতজন মানুষের পাতে এই ইলিশ পড়বে। সাধারণ মানুষের কথা ছেড়েই দিলাম, তাঁরা বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশের রুপোলি রূপ দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ সরকার আরও বলেছে, গঙ্গায় যেমন ভয়াবহ দূষণের কারণে ইলিশ আাসে না ডিম পারতে, পদ্মাতেও দূষণের মাত্রা বেড়েছে। তাই ইলিশ ধরা এবার দারুণভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তবে বাংলাদেশ আইন করে কয়েকমাস ইলিশ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ফলন কিছুটা বাড়বে। ইলিশ ধরা নিয়ে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে প্রাক্তন হাসিনার সরকার। কেউ ৫০০ গ্রাম ওজনের কম ইলিশ ধরলে, বিচারে তার জেল জরিমানা দুই-ই হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার খোলা ইলিশ ধরা নিয়ে আইন করলেও, আইন যাতে যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়, প্রশাসন তার জন্য কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ নেয় না। ফলে প্রচুর পরিমাণে খোকা ইলিশ ধরা হয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। বাজারে গেলে কোনটা এখানকার আর কোনটা পদ্মার ইলিশ বোঝা কঠিন। ইলিশ বিক্রেতারা সবই পদ্মার ইলিশ বলে চালায়। পদ্মার ইলিশের স্বাদ, গন্ধই আলাদা। গঙ্গার ইলিশও স্বাদে টেক্কা দিত পদ্মার ইলিশকে। কিন্তু গঙ্গার ইলিশ এখন বিলীন।