• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ভােটের খাবার

এবার রাজ্যের মানুষের জন্য পাঁচ টাকায় ডিম ভাত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন।এই ব্যবস্থা তামিলনাড়ুতে বহুদিন আগে তৎকালীন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা চালু করেন।

প্রতিকি ছবি (File Photo: iStock)

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার রাজ্যের মানুষের জন্য পাঁচ টাকায় ডিম ভাত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থা তামিলনাড়ুতে বহুদিন পূর্বেই তৎকালীন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা চালু করেন।

বলা বাহুল্য জয়ললিতার এই প্রকল্প আজও সে রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে চলছে। মনে রাখতে হবে নির্বাচনের আগে মমতার পাঁচ টাকায় ডিম ভাতের ব্যবস্থা যে কেবল ভােটের জন্যই তা লার অপেক্ষা রাখে না।

কারণ এতদিন তিনি এব্যাপারে কোনও উদ্যোগই নেননি। বিজেপি রাজ্যের ক্ষমতা দখলে তৎপরতা দেখানােতেই মমতা দিশে হারা হয়ে এমন জনপ্রিয় ব্যবস্থার প্রচলন করেছেন। তবে নির্বাচন পর্ব শেষ হয়ে গেল তা কতদিন চলবে তা বলা মুস্কিল। কারণ এটাই রাজ্যের পরম্পরা-কোনও কিছু শুরু করতে ঢাকঢোল বাজানাে হয়, কিন্তু কিছুদিন পরই ব্যবস্থাটি চলছে কিনা তা সরকারের পক্ষে খোঁজও রাখা হয় না।

বিশেষত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বহুমূল্যবান বিদেশি যন্ত্র অবহেলায় বিনষ্ট হয়েছে। আর প্রাত্যহিক প্রতিটি বরােতে হাজার হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করাটা বেশ সহজ কাজ নয়। নিয়মিত ব্যবস্থাটি চালু রাখতে যে নজরদারি ও তত্ত্বাবধানের প্রয়ােজন তেমন মানসিকতা রাজ্যে দেখা যায় না কোনও ক্ষেত্রেই।

পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এই খামতি রাজ্যে একটা রােগের মতাে। বাস পরিবহণে যাত্রী ছাড়াই বাস একটা ডিপােতে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু একই রুটে কোনও যাত্রীকে তারা নিতে চাইছে না। কারণ তারা বাস গ্যারেজ করতে যাচ্ছে-তাই নিয়ম মতাে ফাকা যাচ্ছে। অথচ এটা যদি বেসরকারি বাস মালিক হত তবে ফিরতি পথেও যাত্রী নিয়ে যেতে কোনও সময় নষ্ট করত না।

কর্ণাটকে কংগ্রেস সরকারের আমলেও এমন ইন্দিরা ক্যান্টিন চালু করা হয়েছিল। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার পক্ষেও শিব ভােজন প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জি এবার ভােট অন অ্যাকাউন্ট বাজেটে একশাে কোটি টাকা এই খাতেই বরাদ্দ করেছেন। তিনি জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতেই নাকি মমতা এমন পাঁচ টাকার ডিম ভাতের ব্যবস্থা করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থাটি কেবল কলকাতাতেই চালু হয়েছে। সারা রাজ্যে তা কবে চালু হবে কেউ বলতে পারে না।

এছাড়া কত মানুষের জন্য এই ডিম ভাত দেওয়া হবে এবং তার জন্য কত ব্যয় হবে তা হিসেব করাই এখন এক বিষম বিষয়। মমতা ডিমভাতের প্রকল্প চালু করতে গিয়ে বলেছেন, এই প্রকল্প দুস্থ ও অন্যান্য মানুষের জন্য। প্রকল্পটি বজায় রাখতে অন্তত প্রতি প্লেটের জন্য সরকারকে পনেরাে টাকা করে ভর্তুকি দিতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হল নির্বাচনের সময়ে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিই বা কোন গ্যাসের ও জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করে মানুষকে একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে সেটাও বােঝা দুস্কর। যদিও তারা ক্ষমতা দখলের জন্য নাকি কোটি কোটি টাকা খরচ করতেও দ্বিধাবােধ করছে না।

কিন্তু জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ তাদের সংসার খরচের হিসাব রাখতে হিমসিম খাচ্ছেন। সরকার নানা সুবিধা ও মানুষের কাজে লাগে এমন প্রকল্পের কথা শােনাচ্ছেন।

অন্যদিকে আবার সাধারণের ওপর মূল্যবৃদ্ধির বােঝা চাপাতে তাদের কেন কোনও দ্বিধা বােধ হচ্ছে না সেটাই বােধগম্য নয় মানুষের। এই অবস্থায় মমতা সরকারের প্রতি রাজ্যের মানুষের বীতশ্রদ্ধ ভাবটা খানিকটা হলেও অপসারিত হয়েছে।

বামপন্থীদের মমতাকে ‘মা’ আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে । তবে মমতা নাকি লকডাউনের সময়ে সিপিএম পরিচালিত কমিউনিটি কিচেনের অনুকরণে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন। সেটা আরও আগে করলে তিনি আরও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারতেন বলে তথ্যভিজ্ঞ মহলের মত।

জেলা শহরগুলিতেও নাকি শীঘ্রই মমতার প্রকল্প চালু হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে খাদ্যের মান কতটা বজায় রাখা সম্ভব হবে সেটাই দেখার।