‘ভোট? ভোট কী মহাশয়?’

শোভনলাল চক্রবর্তী

১৮৭৪ সালে ইংরেজ সরকার পৌর আইন সংশোধন করে প্রথমবারের মতো ‘নেটিভ’ নাগরিকদের ভোটাধিকার দেয়৷ অতঃপর শুরু হয় নবগঠিত কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নির্বাচনের তোড়জোড়৷ কিন্ত্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হতে লেগে যায় আরও দুই বছর৷ নির্বাচনের প্রাক্কালে, ১৮৭৪ সালের ডিসেম্বরে কৌতুক পত্রিকা বসন্তক ‘ইলেকসন’ নামের এক ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ করে৷ নতুন ভোট ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়ে বাঙালি ভোটপ্রার্থী ও ভোটদাতাদের তখন কী রকম ধুন্ধুমার দশা হয়েছিল, তা ধরা পড়েছে এক স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বয়ানে রচিত ওই বেনামি রচনার ছত্রে ছত্রে৷ প্রথমবারের এক ব্যক্তিকে ভোটদানের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় তিনি পাল্টা উদাসীন প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই বলে, ‘ভোট, ভোট কী মহাশয়?’ তারপর অন্য আরেকজনকে ভোটদান–সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে, ‘তিনি শুনিয়া কহিলেন, “আমি বিবেচনা করিব, এর পর যাহা হয় দেখা যাবে৷”…অন্য আর একজনকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তিনি উত্তর করিলেন “আমি ভোট দিব না, একজনও উপযুক্ত ব্যক্তি নহেন৷”…অন্য লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলাম… কেহ বলিলেন, ওহে ঠাকুর! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে কেন? ঘরে গিয়ে হরিনাম করগে, পরকালের কাজ হবে৷’

সেকালের ভোটারদের উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ার এমন হতাশা বা ভোটে দাঁড়ানোকে পণ্ডশ্রম মনে করাটা যেন এই এখনকার বিমিশ্র নির্বাচনী পরিস্থিতির সঙ্গেও মিলে যায়!এই আলেখ্যের শেষাংশে এসে জানা যায়, ভয়ডর ভেঙে এলাকার প্রভাবশালী প্রায় সবাই ‘কমিসনর’ হতে মাঠে নেমে পড়েছেন, সঙ্গে রয়েছে ঠিক বর্তমানের মতোই ভোটকেন্দ্রিক মারামারি-হুড়োহুড়ি: ‘বৈকালে সংবাদ পাইলাম, যে মহা হুলস্থুল লাগিয়াছে, যাঁহারা এত দিন অভিমান করিয়া আসরে নাবেন নাই, তাঁহারা সকলে নাবিয়া কিসে ভোট পাওয়া যায়, ইহারই চেষ্টা করিতেছেন৷ …কোনো স্থলে হুড়াহুড়ি, কোনো স্থলে মারামারি অবধি হইতেছে৷ কি সর্ব্বনাশ! সকলে কমিসনর হইতে চেষ্টা পাইতেছেন৷ …’ এই বর্ণনা এখনো এতখানি প্রাসঙ্গিক যে একে হালের কলকাতা বা ভারতের অন্য কোনো বড় শহরের ভোটের সময়কার ঘটনাবলি বলে ভ্রম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ আবার ১২৯৮ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (১৮৯২) জন্মভূমি সাময়িকীতে প্রকাশিত পাঁচ অংশে বিভক্ত পদ্যে রচিত একটি বেনামি নকশায় ধরা পড়ে ভোট এলে কীভাবে উচ্চবর্ণের প্রার্থীরা এত দিন ধরে মুখদর্শন না করা নিম্নবর্গের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ঘোরেন, আর অবাস্তব সব প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটিয়ে তৈলমর্দন করেন৷ পদ্যের এক জায়গায় প্রার্থী ধীবর ভোটারকে এই বলে আশ্বাস দিচ্ছেন, ভোট দিলে তিনি তাঁর কাছ থেকেই নগদ টাকায় কুড়ি মণ মাছ কিনে নেবেন: ‘ভোট দিয়া কিনে লও, জনম মতন৷ /পিতৃ-শ্রাদ্ধে বিশ মণ, মাছের বায়না৷ /লও মূল্য, গণি এবে, টাকা-পাই-আনা৷’ আরেকটু পরে পাই, ভোটের দিন এক ভোটার পোলিং বুথে গিয়ে পাঁচজন প্রার্থীর পাল্লায় পড়ে কী দুরবস্থায় পড়েছেন তার বর্ণনা: ‘কেহ বা ধরিল হাত কেহ বা চরণ৷ / উঠ উঠ এস এস বলে পাঁচজন/ হানা-হানা টানা-টানি হেঁচড়ানি কত/ ভোটদাতা বলে হায় হইলাম হত/ বাপু বাপু মরি মরি গেলাম গেলাম/ ছেঁড়ে দাও কেঁদে বাঁচি পেয়েছি ইনাম৷’ এ তো গেল উচ্চবর্ণের প্রভাবশালী প্রার্থীদের কাণ্ডকারখানার কথা, কিন্ত্ত উনিশ শতকে সাধারণ বাঙালি জনমানসে ভোট নিয়ে কেমন ধারণা তৈরি হচ্ছিল?


আনুমানিক উনিশ শতকের শেষার্ধে প্রকাশিত ভোটমঙ্গল বা দেবাসুরের মিউনিসিপাল-বিভ্রাট শিরোনামে একটি ‘বটতলার বই’য়ের প্রহসন শ্রেণির রচনায় ভোট নিয়ে সেই সময়ের বাঙালিদের মনোভাব ও আচরণের পরিচয় বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়, যদিও তা অনেকটাই তীব্র তীর্যক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির রসে চোবানো৷ ধারণা করা যায়, সেকালের কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে বহুবিচিত্র ইতিনেতি কাণ্ডের রমরমা দেখে কোনো কোনো ক্ষুব্ধ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি প্রহসনটি লিখেছিলেন৷ ধারণা করি, সম্ভবত ইংরেজ সরকারকে নিয়ে কোনো কোনো লাইনে খোঁচা মারা হয়েছে বলে বই নিষিদ্ধ হতে পারে—এমন ভয়ে কলকাতার জায়গায় প্রহসনের স্থান হিসেবে লেখক কল্পিত দেবলোকের নাম বসিয়ে দিয়েছিলেন৷ এ প্রহসনে নারদ মুনি ঘোষণা করেন নির্বাচনের তফসিল ও নিয়মাবলি, ঘোষণায় জানানো হয়, ‘সর্বভুক গভর্নমেন্ট হইতে ম্যাজিস্ট্রেট আসিয়া ইলেকসন কার্যসম্পন্ন করিবেন৷’ ভোটমঙ্গল-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এই, ব্যঙ্গের আবরণে বইটি সেকালের ভোটচিত্র সাধারণ বাঙালির চোখে দেখার একটা সুযোগ করে দিয়েছে৷ যেমন গরিবের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বাবু-সম্প্রদায় কীভাবে তাঁদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ও ভোগ্যবস্তুর বিনিময়ে ভোট কিনে নিতেন, সেই চিত্র উঠে আসে সর্বমঙ্গলা নাম্নী এক নারীচরিত্রের বয়ানে: ‘সেদিন আমার কত্তাকে নিয়ে হুলস্থূল বেঁধে গেছল৷ ইন্দিরবাবু বলেন, “দুটো ভোট আমারে দিও” হুতুমবাবু বলেন, “তা হবে না, আমাকেই দুটো দিতে হবে৷” শেষে দাঙ্গার উযু্যগ আর কি! তার পর হুতুমবাবু রাত্রে কত্তাকে ডাকিয়ে নিয়ে এক থান বনাত, ২৫টে টাকা নগদ…আর এক জোড়া সিমলের জুতো দিয়ে ভোট দেবার জন্যে কত্তাকে কবুল করে নেচেন৷ ’আবার ভোটের প্রচারণার বাদ্যি শুনে উক্ত প্রহসনের এক বৃদ্ধা চরিত্র ক্ষেমার মনে ঘটে ভীতির সঞ্চার, কেননা ভোট তাঁর কাছে নিছক বিড়ম্বনার নামান্তর: ‘ও মেয়েরা পালা রে, পালা! ওই সেই ভোট! ওরে দেবতাদের ভিটেয় ঘুঘু চরে আব্রু-সম্ভ্রম সব গেল রে! ওরে পালিয়ে আয় রে, পালিয়ে আয়!’
হুবহু পাশ্চাত্যের কেতায় না হলেও, মধ্যযুগ থেকেই বাঙালির মধ্যে ভোটদান তথা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার একটা ধারা ছিল৷ মধ্যযুগ থেকে ঔপনিবেশিক কোম্পানি শাসনের আগ অবধি বাংলার গ্রামবাসী সম্মিলিত সভায় বসে কণ্ঠভোটে বা হাত তুলে মতামত প্রকাশ করে নিজেদের গ্রামের প্রধানকে বেছে নিতেন— এমন উদাহরণ অতীত ইতিহাসে বিরল নয়৷ আবার একাধিক গ্রামের প্রধানেরা মিলে নির্বাচিত করতেন নির্দিষ্ট কোনো পরগনার কাজি ও থানাদারদের৷ তবে কোম্পানি আমল শেষ হওয়ার পর ঔপনিবেশিক ইংরেজ রাজ-সরকার যখন সরাসরি দখলীকৃত ভারতীয় উপমহাদেশ শাসনের ভার নিজের হাতে তুলে নিল, তখন ভারত তথা বাংলাবাসীর পরিচয় ঘটল নতুন ধারার ভোটের সঙ্গে৷ মোলাকাত হলো নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ভোটদান, ব্যালট পেপারে সই করে ভোটদান ইত্যাকার আধুনিক নির্বাচনী কার্যপদ্ধতির সঙ্গে৷ আর এসবের গায়ে গা ঘেঁষে এল ভোটদানকে ঘিরে প্রার্থীদের নানাবিধ বেআইনি কর্মকাণ্ড ও আজব আচরণের প্রদর্শনী৷ যথারীতি উনিশ শতক পার করে বিংশ শতাব্দীতেও বাঙালির এমনতর অঘটনঘটনপটীয়সী ভোট-ঐতিহ্যের অবসান হয়নি৷ ১৯২৩ সালের বঙ্গীয় আইনসভার নির্বাচনে ব্যারাকপুর পৌরসভা এলাকা থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী—একপক্ষে কংগ্রেসি কীর্তিমান নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যপক্ষে কাগজপত্রে স্বতন্ত্র কিন্ত্ত ভেতরে ভেতরে চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ দলের পূর্ণ আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়৷ সেই নির্বাচনে দুই প্রার্থীই ‘ভদ্রলোক’ হওয়া সত্ত্বেও, দুই পক্ষের মধ্যে রেষারেষি নিছক কথার লড়াই ছাপিয়ে রূপ নিয়েছিল বিচ্ছিরি দাঙ্গা-হাঙ্গামায়৷ মাঝেমধ্যে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভেঙে ফেলছিল শালীনতার বেড়াও৷

ওই ভোটযুদ্ধের নিদারুণ সরস বিবরণ পাই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে ভোটের মাঠে নামা লেখক যতীন্দ্রমোহন দত্ত ওরফে যম দত্তের লেখায়৷ একদিন টিটাগড় এলাকায় এক নির্বাচনী সভা হবে, যথাক্রমে দুই দলের কর্মীরাই সেখানে বক্তব্য রাখবেন বলে ঠিক করা হয়েছিল৷ বাইরে দিয়ে দুই দলের মধ্যে ভেতরে যথেষ্ট সম্প্রীতি আছে এমনটা দেখানো যাবে ভেবে এই সভার আয়োজন৷ যদিও ভেতরে ভেতরেস্বরাজ দলের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন৷ তারা লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েকজন অবাঙালি গুন্ডা ভাড়া করে এনেছিল, যাদের কাজ ছিল কংগ্রেসের সদস্যরা বক্তৃতা দিতে উঠলে ‘শেম শেম’ বলে চেঁচিয়ে ওঠা৷ পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তাদের জানিয়ে দেওয়া হলো, বিকেল পাঁচটার সময় বিধান রায়পন্থীদের বক্তৃতা আরম্ভ হবে৷ চলবে ঘণ্টাখানেক৷ আর ছয়টার সময় কংগ্রেসিদের বক্তৃতা দিতে ওঠার কথা রয়েছে৷ তো তখনই থেকেই জোরশোরে চেঁচানো আরম্ভ করতে হবে৷ বিধিবাম, বাঙালির ‘লেট লতিফ’ স্বভাব অনুযায়ী মিটিং শুরু হতেই ছয়টা বেজে গিয়েছিল৷ শুরুতেই বক্তৃতা দিতে উঠলেন স্বরাজ দলের প্রবীণ নেতা, এককালের বিপ্লবী ও ঝানু বক্তা বিপিনচন্দ্র পাল, অমনি ‘গুন্ডারা “শ্যাম শ্যাম” বলিয়া চীৎকার আরম্ভ করিল৷ তাড়াতাড়ি উহারা (স্বরাজ দলের কর্মীরা) ছুটিয়া আসিয়া বলিল এখন ‘শ্যাম! শ্যাম!’ চীৎকার থামাও৷ তাহারা বলিল কাঁহে বাবু, বেলা ছয় বাজেলেসে শ্যাম দেনা হোগা, হামলোগ শ্যাম দেতা হ্যায়৷ তখন তাঁহারা বলিলেন যে ঐরূপ করিলে পয়সা পাইবে না৷ ইহাতে তাহারা ক্ষেপিয়া গিয়া বলিল, কেন? শ্যাম দিলে পয়সা পাইব; শ্যাম দিয়াছি; ঠিক সময়ে শ্যাম দিয়াছি৷ পয়সা জোর করিয়া লইব৷ শ্যাম দেকারা পয়সা লোগা৷ গোলমালে বিপিনবাবুর মতো বক্তাও সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিলেন না৷ ’ অবশ্য প্রতিপক্ষের সভা ভন্ডুল করার জন্য অসাধু পন্থা অবলম্বনে কংগ্রেসও কম যায়নি তখন৷

যম দত্ত অকপটে জানিয়েছেন, ‘তাহার পর এক জায়গায় স্বরাজীরা মিটিং করিবে বলে ঢেঁড়া দিল৷ আমরা সেখানকার মেথরদের জমাদার সোনাইকে টাকা দিয়া ব্যবস্থা করিলাম যে, মাঠময় বিষ্ঠা ছড়াইয়া দিবে৷ সোনাই তাহাই করিল৷’ কিন্ত্ত এই দুর্গন্ধযুক্ত কাণ্ডের নেপথ্যে আসলে কারা, তা জানাজানি হওয়ার ফলাফল যে কংগ্রেসের পক্ষে পরে ভালো হয়নি, তা-ও তিনি অম্লান ভঙ্গিতে লিখেছেন: ‘স্বরাজীরা কোনো মিটিং করিতে পারিল না বটে, কিন্ত্ত সেখানকার লোকে আমাদের উপর চটিয়া গেল৷ এইরূপে যতদিন যাইতে লাগিল লোকে আমাদের বিরুদ্ধে যাইতে লাগিল৷’ পরে ভোটের দিন নিউ এম্পায়ার নামের একটি সান্ধ্য দৈনিকে সুরেন্দ্রনাথ জয়লাভ করেছেন এমন ‘পেইড নিউজ’ও কংগ্রেসের তরফ থেকে উদ্যোগ নিয়ে ছাপানো হয়েছিল৷ কিন্ত্ত ভোটবাক্সের ভাগ্যদেবী বিধান রায়ের পক্ষেই শেষমেশ রায় দিলেন৷ পরে জানা যায়, ওই ভোটযজ্ঞে সুরেন্দ্রনাথ ও বিধান রায় যথাক্রমে খরচ করেছিলেন তখনকার দিনের ৭০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা! বাঙালি ভোটযুদ্ধের অতীতকাল খানিক ভেবেচিন্তে পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, সেই সেকালের ভোটেই গণতান্ত্রিক কর্মপ্রক্রিয়ার পাশাপাশি দুর্বৃত্তায়ন ও কূটকৌশলের বীজও রোপিত হয়েছিল৷ ভোট কেনাবেচার কুপ্রথা থেকে আরম্ভ করে পেশিশক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রচারকার্যপণ্ড করার ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’ আজও৷ ভোটার বাঙালির দশা যেন ‘বিভিন্ন কোরাস’ কবিতার অসহায় রচয়িতা জীবনানন্দ দাশের মতোই: ‘কাজ ক’রে চলে গেছি অর্থভোগ ক’রে;/ভোট দিয়ে মিশে গেছি জনমতামতে৷’