বিধি ভাঙার ভোট

A polling official applies indelible phosphorus ink on the fore finger of a voter. (File Photo: IANS)

চারটি পুর নিগমের নির্বাচন, যা রাজ্য নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে তা হবেই , যতই করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হোক না কেন। কারণ এই ভোট ক্ষমতা দখলের লড়াই।

আর কমিশন যে বিধিনিষেধ জারি করেছে, তাও অবলীলায় লঙ্ঘিত হবে, শাসক দল সহ বিরোধী দলের প্রার্থীরা যাঁরা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ।

মনোনয়ন জমা দিতেই জমায়েতের যে বিধি ভাঙা হল, নির্বাচন কমিশন তা শুধু দেখল, কোনও ব্যবস্থা নিল না।


আসানসোলে তৃণমূলের প্রার্থীরা সমর্থক ও দলের স্থানীয় নেতা বেষ্টিত হয়ে ঢাকঢোল সহ নাচানাচি করে যেভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন, তা অবলোচন করার পর কেউ বলতে পারবে না।

এখন রাজ্যে করোনা ‘ভয়াবহ’ রূপে তার থাবা বিস্তার করেই চলেছে । এক্ষেত্রে শাসক দলের বিধি ভাঙা তাই তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নির্বাচন কমিশনও মুখ বুজে রইল।

যে দলই শাসক হোক না কেন, সে দলের একটি দায়িত্ব বোধ, কর্তব্য বোধ থাকবে। আর শাসকই যদি নিয়ম ভাঙে, তাহলে বিরোধী দলের দোষ ধরাই বা যায় কী করে? মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে কেন ঢাকঢোল বাজবে?

স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বললেন, কিছু অসৎ কর্মী সমর্থক আনন্দে আত্মহারা হয়ে এই কাজ করেছে।

তারা জানে, তাদের প্রার্থীরাই জয়ের মুখ দেখবেন। তাই ভোট হবে বিধি ভেঙেই। আর রাজ্য নির্বাচন কমিশন তা অসহায়ের মতো দেখবে। সরকার/কমিশন তো বিধিনিষেধ জারি করেই খালাস।

তা যে দলের প্রার্থীরা ভাঙছেন, তা দেখবে কে? পুলিশ? পুলিশ তো শাসক দলের বিধি ভাঙা দেখে, কোথায় ব্যবস্থা নেবে, দূরে সরে আসে। সুতরাং এই ভোট মানেই নিয়ম, বিধি ভাঙার খেলা হবে।

কমিশনের ফতোয়া, প্রার্থীদের প্রচার কালে তাদের সাথে পাঁচ জনের বেশি সহযোগী থাকবে না — মানা হচ্ছে? প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান নেই।

এই যে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাকে গুরুত্ব না দিয়েই ভোট হবে। ভোট বলে কথা-— সেখানে সব বাধাবিপত্তি তুচ্ছ। কী হচ্ছে না?

রাজ্যের নানা অঞ্চলে ঘটা করে এখন মেলা বসেছে— মেলায় যাঁরা যাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগের করোনা বিধি মানার বালাই নেই। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই।

পুলিশ কতজনকে বলবে, শাসন করবে, নিজেরা সচেতন না হলে? রাজ্যের সংবাদমাধ্যম এই মাস্ক পরা এবং বিধিনিষেধ মেনে চলার জন্য আর লেখালেখি করবে।

প্রতিদিন কাগজে ছবি বের হচ্ছে, কীভাবে করোনাবিধি ভেঙে রাস্তায় বের হচ্ছে মানুষ, তা দেখেও তাদের হুঁশ নেই। কোনও দল খোলা জায়গায় জনসভা করলে ৫০০-র বেশি সমর্থক থাকবে না। মানা যাবে?

এই মারণ ভাইরাস নিয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিধি অবহেলা করে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনবেন না। সবটাই সরকারের ওপর ভরসা করে বসে থাকাটা একেবারেই উচিত নয়।

যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে আমাদের আরও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে আসন্ন চারটি পুর নিগমের নির্বাচনে এই বাড়াবাড়িকালে বিধিনিষেধ ভাঙা হলে তার ফল হবে মারাত্মক।