এবঙ্গেও যে মারণ করােনা ভয়ঙ্কর রূপে হাজির, তা ভাবার তেমন অবকাশ নেই। কারণ চলতি নির্বাচনই প্রথম কথা—ছলে বলে কৌশলে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভােট আদায় করা। কিন্তু যেভাবে প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় করােনার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেই গতি অব্যাহত থাকলে, এপ্রিল মাসের শেষ প্রান্তে, যখন ভােট শেষ হবে, এই ভাইরাসের থাবা কতটা বিস্তার হবে, তা চিন্তা করলে শিউরে উঠতে হয়।
এক মাসেরও কম সময় আগে রাজ্যে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শােতে নেমে এসেছিল —এখন ওই সময় তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। যদিও এ মৃত্যুর সংখ্যা সে তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি-সান্ত্বনার জায়গা এটাই।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছিলেন, করােনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক হবে। সেই কথাই সত্যি হল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র বলেছে, গত সাত মাসের দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড ভেঙে ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৩ হাজারের বেশি লােক করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সংক্রমণের নিরিখে আট রাজ্যকে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়, উক্ট্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং মধ্যপ্রদেশের অবস্থা ভয়াবহ। গবেষক এবং চিকিৎসকরা বলেছে, বিধি মানতে সাধারণ মানুষের গাফিলতি, গা ছাড়া মনােভাব এবং নয়া ট্রেনের দাপট এই বাড়বাড়ন্তের কারণ।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন চলছে–সেখানে ভােটের প্রচার মিছিল, মিটিং, রােড শাে–লক্ষ লক্ষ লােকের সমাবেশ দূরত্ববিধি উড়িয়ে দিয়ে এবং মাস্ক ব্যবহার না করে, পরিস্থিতিতে জটিল করে তুলেছো, কেন্দ্রীয় টাস্ক ফোর্সের প্রধান বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি সামলিয়ে, ছােট ছােট অঞ্চলে পুরাে লকডাউনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খােলা নেই।
সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনকে করােনা রােখার নানা বিধি যাতে মেনে চলেন, তা যেভাবেই হােক, নিশ্চিত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে এখন কোভিড-১৯ ছড়ানাের একটা উৎকৃষ্ট সময়। মাঝে মাঝেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি আসছেন–জনসভা করে বিজেপির পক্ষে ভােট চাইছে শাসক তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়ে। লক্ষ লক্ষ লােকের সমবেশ হচ্ছে কোনও বিধি মানা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাঙা পা নিয়ে হুইল চেয়ারে করে রাজ্যময় চষে বেড়াচ্ছেন, তৃণমূলের হয়ে ভােট চাইতে। আসছেন বিজেপির বড় বড় নেতা-সবার মুখেই ভােটের কথা। ভােট চাই। কেউ বলছেন না করােনা নামক ভাইরাসটি কিন্তু আবার ভয়ঙ্কর হয়েছ ছােবল মারতে উদ্যত। আপনারা সতর্ক মাস্ক ব্যবহার করুন। কারওর মুখেই কিন্তু সে কথা নেই।
তাই পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে জীবনের চেয়ে ভােট বড়। ভােট পেয়ে সমতা ধরে রাখতে হবে, অথবা সমতা অর্জন করতে হবে। এর বাইরে কিছু নেই। পড়শি বাংলাদেশ আর কোনও ঝুঁকি নেয়নি। সেখানেও করােনার বাড়াবাড়ি। বিধিভঙ্গ করে মানুষ চলছে। তাই এক সপ্তাহ ব্যাপী লকডাউন ঘােষণা করার সিদ্ধান্ত।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন মানুষ যাতে করােনা বিধি মেনে চলেন, তার জন্য প্রশাসনকে কঠোরতম পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশে তাে ভােট নেই। তাই কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধা নেই। কিন্তু এপার বাংলায় এখন ভােট ছাড়া কোনও কথা নেই, ভােট ছড়া কোনও চিন্তা নেই। রাস্তায় কান পাতলে শােনা যায়। বলুন তাে দাদা, কে জিতবে? পদ্ম না ঘাসফুল?’
যদি হয় পদ্ম, তাহলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ানাে নয়। যদি উত্তর হয় ঘাসফুল, তাহলে খুশি। ঠিক বলছেন? কিন্তু আপনার মুখে মাস্ক নেই কেন? উত্তরে বললেন, “আমাকে একজন চিকিৎসক বলছেন, যখন কারওর সঙ্গে কথা বলবেন, তখন মাস্ক পরবেন, অন্য সময় দরকার নেই। দম বন্ধ হয়ে আসে না? আমার সাথে তাে কথা বলছেন, মাস্ক পরছে না কেন?
দুই পকেট হাতড়িয়ে বললেন, ‘যা ফেলে এসেছি। এই তাে আমাদের মনােভাব। তাহলে করােনাকে ঠেকানাে যাবে কী করে? করােনা আমাদের জীবন, ধনসম্পদ, রােজগার, কেড়ে নিয়েছে। মানুষকে পথে বসিয়েছে। জীবনে চলার ছন্দ নষ্ট করে দিয়েছে।
আবার কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও শিখিয়েছে। আগে দিনভর, একমাত্র খাওয়ার আগে আমরা কোনও মতে হাত দিতাম– এখন কিছু করলে, কাগজ পড়ার পর, টাকার নােট গােনার পর হাতটা না ধুলে ভালাে লাগে না। বাজার থেকে এসে জামা-প্যান্ট, না ধুলে মনটা ভালাে লাগে না।
বাইরের কোনও কিছু স্পর্শ করলে, স্যানিটাইজার হাতে না লাগালে। কোনও কাজ অপূর্ণ রয়ে গেল বলে মনে হয়। এই সব বিধি করােনাই কিন্তু আমাদের শিখিয়েছে। বলেছে, আমাকে রাখতে হলে এসব বিধি মেনে চলুন।