বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন গভীর সঙ্কটের সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে। এখন সমবেত ভাবে আমাদের শান্তিনিকেতন এই সঙ্গীত উচ্চারিত হওয়া জরুরি। তিনজন ছাত্রনেতাকে বহিস্কারের কারণে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।
কবে বিশ্ববিদ্যালয় আবার চালু হবে তার কোনও ঠিক নেই। অতিমারির সময়ে মঙ্গলবার যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ব্যবস্থা দেওয়া হয় তাতেও হতবাক করেছে বিজনেদের। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন এগজিকিউটিভ কাউন্সিল কোনও প্রথাগত নােটিশ ব্যতীতই বন্ধের ফরমান জারি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি অনলাইনে জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়, তৃণমূল কংগ্রেসের এক সাংসদ কবিগুরুর গাত্রবর্ণের বিষয়ে প্রকাশ্যে যে ঘৃণ্য মন্তব্য করেছেন তারই প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত বলে জানানাে হয়েছে। ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধের অব্যবহিত ঘােষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘােষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর উপাচার্যের কাছে সকালে দুগ্ধ ও সংবাদপত্র-পত্রিকা কিছুই সরবরাহ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতদিন অঞ্চলের বর্ষার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভােগেও ছাত্র বিক্ষোভের ফলে এক বাধার সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রশ্ন হল উপাচার্য রাজনৈতিক বিজ্ঞানী বলেই কি তাকে এখানে নিয়ােগ করা হয়েছে।
তিনি নিজে যা মনে করেন তাই করছেন। কোনও যুক্তি গ্রাহ্য করছেন না। ফলে ছাত্ররা মনে করেন বহিষ্কারের নির্দেশ প্রত্যাহার করলেই এমন অচলাবস্থার অবসান হতে পারে। বহিষ্কার সমস্যা শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে আলােচনার মাধ্যমেই মীমাংসা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ মহল।
কিন্তু এমন কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি কর্তৃপক্ষের তরফে। উল্টে কর্তৃপক্ষ তৃণমূল সাংসদের বিশ্বকবি সম্পর্কে অমূলক ও অপমানজনক মন্তব্য প্রত্যাহারের বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ উপাচার্যের সামনেই সাংসদ এমন মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, উপাচার্য ও এগজিকিউটিভ কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রস্তুতি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘােষণা করেছেন। পরবর্তীতে যথাসময়ে যথাযথ নােটিশ দেওয়া হবে। স্মরণ রাখতে হবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এই প্রথম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘােষণা করা হয়েছে।
এর ফলে সকল পঠনপাঠন ও প্রশাসনিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমনকী করােনা সংক্রমণের কারণে গ্রহণ করা অনলাইন কাজকর্মও বন্ধ রাখতে হয়েছে। এক পূর্বর্তন উপাচার্যের মতে বর্তমান উপাচার্য ও তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ছাত্র আন্দোলন সমস্যা সমাধানে একেবারেই অপারগ।
একদিকে ছাত্র আন্দোলন প্রশমনে অপারগতা এবং তান্যদিকে সঠিক নােটিশ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া এক চরম অশনী সঙ্কেত এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। এমতাবস্থায় শিক্ষক ও ছাত্র উভয়কেই কবিগুরুর প্রতিষ্ঠিত এমন প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসার প্রয়ােজন রয়েছে।
এই দায়িত্ব সকলের বিশেষত শিক্ষার এক উজ্জ্বল আলােক বর্তিকা যাতে নিভে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পঠনপাঠনের দিক দিয়ে চলতি সময়ে কোনও গর্বের ভূমিকা পালন করতে পারছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল স্মরণ করতে পারছেন না।