বিকশিত রেল, বিকশিত ভারত– ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ থেকে ‘বেস্ট ইন ক্লাস’

প্রতীকী চিত্র

এম. জামশেদ

ভারতবর্ষের উন্নয়ন যজ্ঞে ভারতীয় রেল ‘ব্যাঘ্র গর্জন’-এর সমান। কিন্তু তার ভূমিকার তুলনায় ভারতের জনমানসে কম চর্চিত ও প্রচারিত হয়েছে। যদিও রেলের পরিকাঠামো নির্মাণের কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও পরিবহন ব্যবস্থায় যোগাযোগ বৃদ্ধির জনকল্যাণমূলক নীতি দেশের উন্নয়নের সূচককে আরও ঊর্ধ্বমুখী করেছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত দশ বছরে অর্থাৎ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল অবধি ভারতীয় রেলের যে উন্নয়নমূলক অগ্রগতি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে রেলের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত উন্নয়নশীল রেলওয়ে নেটওয়ার্ক হিসেবে ধরা যেতে পারে।

এখন আলোচ্য বিষয় হল, ভারতবর্ষের রেলের এই রূপকথার কাহিনীটি অন্যান্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী দেশ ও অঞ্চলের ক্ষেত্রে কীভাবে একটি শিক্ষণীয় বা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে? এবিষয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ভারতীয় রেলের উন্নয়নের এই সোনালি যাত্রাপথের মূল চাবিকাঠি জনকল্যাণমুখী নীতি। অর্থাৎ ভারতের জন্য রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হলেও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই সমান্তরালভাবে রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়েছে। সুতরাং এটি দেশের জাতীয় উন্নয়নের একটি অপরিহার্য অংশ। এক কথায়, রেল পরিকল্পনা হয়েছে ‘ভারতের জন্য এবং ভারতের সঙ্গে’।


রেলের এই উন্নয়নের উদ্দেশ্য ছিল, দেশের রেল ব্যবস্থা একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন দেশের প্রায় ২ কোটি ২৪ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক শুধুমাত্র তাঁদের অর্থনৈতিক জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে এই রেল পরিষেবা ব্যবহার করে থাকেন। একই সঙ্গে রেল ব্যবস্থা ভারতের শিল্প, বাণিজ্য ও দেশকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেও কাজ করে চলেছে। সেজন্য ব্যবসা পরিচালনা পদ্ধতিতেও আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে।

অতীতে রেলকে নিয়ে মানুষের অনেক অভিযোগ ছিল। যেমন– ধীরগতি সম্পন্ন, আধুনিকীকরণের অভাব ও পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হতে হয়েছে। তবে যাঁরা ভারতীয় রেল সম্পর্কে পুরনো ধারনায় আবদ্ধ হয়ে আছেন, তাঁরা আজও একই সমালোচনা করে থাকেন। যেমন– ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মাত্র ৬৮ হাজার কিলোমিটার সম্প্রসারিত হয়েছে বলে অনেকের ধারনা। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে, রেলের প্রকৃত পরিকাঠামো সম্প্রসারিত হয়েছে ট্র্যাক কিলোমিটারে। সেই ট্র্যাক কিলোমিটারে বর্তমানে রেলের সম্প্রসারিত নেটওয়ার্ক ১ লক্ষ ৩২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।

গত দশ বছরের তুলনামূলক বিশ্লেষণে রেলের প্রকৃত উন্নয়ন মাত্রার স্পষ্ট ছবি ধরা পড়ে। এই বিশ্লেষণে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরে রেলের ট্র্যাক নির্মাণ হয়েছে ৩১ হাজার কিলোমিটার, অথচ ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মাত্র ১৪ হাজার ৯০০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ হয়েছে। আগের দশ বছরে অর্থাৎ ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে রেলে পণ্য পরিবহন হয়েছে মাত্র ৮৪৭ কোটি ৩ লক্ষ টন। আর পরের দশ বছরে অর্থাৎ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালে রেলের মোট পণ্য পরিবহন হয়েছে ১ হাজার ২৬৬ কোটি টন। তুলনামূলক এই বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রেলের রাজস্ব আয়ও সমানতালে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী দশকে যে আয় ছিল ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, গত দশ বছরে তা হয়েছে ১৮ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

গত দশ বছরে রেলের আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে উন্নয়ন পরিকল্পনা। বিশেষ করে এই বৈদ্যুতিকীকরণের কাজে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। পূর্ববর্তী দশ বছরে (২০০৪-২০১৪) রেলের বিদ্যুতায়ন হয়েছিল মাত্র ৫ হাজার ১৮৮ কিলোমিটার। গত দশকে সেই কাজ প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ২০১৪-২০২৪ সালের মধ্যে ৪৪ হাজার কিমোমিটার বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে ২ হাজার ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বমানের মালবাহী করিডোর তৈরি করা হয়েছে, যা আগের দশকে ছিল সম্পূর্ণ শূণ্য। লোকোমোটিভ উৎপাদনও ৪ হাজার ৬৯৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ১৬৮, অর্থাৎ আগের তুলনায় দ্বিগুণ। সমানতালে বেড়ে কোচ উৎপাদন সংখ্যা। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ভারতীয় রেলের মোট কোচ উৎপাদন হয়েছিল ৩২ হাজার। কিন্তু গত দশ বছরে অর্থাৎ ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল অবধি মোট ৫৪ হাজার কোচ উৎপাদন হয়েছে। এই দশকে উৎপাদনশীলতা ও কর্মদক্ষতার নিরিখে অতীতের সকল সূচককে অতিক্রম করে ভারতীয় রেল একটি নজির সৃষ্টি করেছে।

দেশের অন্যান্য সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো জমানার অচলায়তন দূর করে রেল বাজেটকে সাধারণ বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেওয়াটাও একটি বড় সংস্কার বলে বিবেচিত হয়েছে। একসময়ে অর্থের অভাবে রেলের অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলির দীর্ঘসূত্রতা উন্নয়ন প্রকল্পকে বার বার ব্যাহত করেছে। এখন সেই দীর্ঘসূত্রতা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছে। বাজেটে রেলের বরাদ্দও বেড়েছে অনেকগুণ। পূর্ববর্তী দশকে (২০০৪-২০১৪) রেলের মোট বরাদ্দ ছিল মাত্র ১ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর গত এক দশকে (২০১৪-২০২৪) -এর মধ্যে রেলের মোট বরাদ্দ হয়েছে ৮ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত দশ বছরে রেখে প্রায় সাড়ে পাঁচগুণ বরাদ্দ বেড়েছে, যা কল্পনাতীত।

এদিকে ভারতের সর্বোচ রেলপথের প্রথম ট্রেন খুব শীঘ্রই শ্রীনগরে পৌঁছবে, যেখানে উচ্চতম ব্রিজ ও দীর্ঘতম সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের মাধ্যমে সুউচ্চ পর্বতমালার ওপর রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। আরও চাঞ্চল্যকর খবর হল, ভারতীয় রেলওয়ে পৃথিবীর প্রথম সবচেয়ে বড় রেল সংস্থা হিসেবে ১০০ শতাংশ বৈদ্যুতিকীকরণের স্বীকৃতি অর্জন করতে চলেছে। এর ফলে কয়লা ও খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কার্বন নিঃসরণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করবে।

বিশ্বের বৃহত্তম মিশ্র ট্রাফিক রেল সিস্টেম হিসেবে পরিচিত ভারতীয় রেলের সর্বত্র ইতিমধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ‘কবচ’ প্রযুক্তি চালু করা হচ্ছে। ভারতের ট্রেন আজ বিশ্বমানের সীমানা অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থা উন্নত আন্তর্জাতিক প্রযুক্তির সঙ্গে দেশীয় চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে আরও নিরাপদ, দ্রুত, পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক ট্রেন তৈরিতে সফলতা লাভ করেছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষেও খুবই সাশ্রয়ী।

রেলওয়ে তার অন্যান্য ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে, যাত্রী পরিবহন খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পণ্য পরিবহন খাতে হওয়া আয় থেকে পুষিয়ে নিয়ে আরও লাভের মুখ দেখতে সমর্থ হয়েছে। প্রধানত অন্যান্য দেশের উন্নত রেল পরিষেবাগুলি হয় বেসরকারী সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। সেইসব সংস্থার ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয় তাদের উচ্চ হারে ভাড়া নির্ধারণের স্বাধীনতা রয়েছে, নয়তো তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারি ভর্তুকি ধার্য করা হয়ে থাকে। ভারতীয় রেল তার ব্যতিক্রম, যা নিজস্ব পরিচালন ও কার্যক্রম সংক্রান্ত সমস্ত ব্যয় বহন করে এবং মূলধনী ব্যয়ের জন্য একটি স্থূল বাজেট সহায়তা অর্থাৎ জিবিএস গ্রহণ করে থাকে। দেশের অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার তীব্র প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও ভারতীয় রেল তার রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় সফলতা অর্জন করেছে এবং প্রতি বছর নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছে।

এই নজির বুমার ও ‘৯০-এর দশকের প্রজন্মের কাছে অবাক করার মতো বিষয় হতে পারে, যাঁরা ভারতের একসময়ের সাধারন যুগের বাইরে কিছু ভাবতে পারতেন না। একসময় ভারতে ‘রপ্তানি মানের’ নামে লেবেলযুক্ত যেকোনও পণ্য খুবই উচ্চমূল্যে বিক্রি হতো, যেখানে বিশ্বমান সম্পন্ন শ্রেষ্ঠ পণ্য শুধুমাত্র ইউরোপ ও আমেরিকার ধনী দেশগুলির জন্য সংরক্ষিত থাকত। ভুল সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতির কারণে ভারতীয়দের জন্য খুবই নিম্নমানের পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করা হতো। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাদের প্রত্যাশা কমিয়ে আনতে বাধ্য করা হয়েছিল। ভারতীয় রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তবে ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগামী ও প্রগতিশীল হয়েছে। দেশের উন্নয়ন ও পরিকাঠামো নির্মাণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আধুনিক ভারত এমন একটি জাতীয় পরিবহন ব্যবস্থা পাওয়ার যোগ্য, যা উদ্ভাবনের অভাবে ভুগবে না এবং সঙ্কীর্ণ ও রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রবলভাবে আঞ্চলিকীকরণ ও উৎপাদন ক্ষমতা নজিরবিহীন মাত্রায় সম্প্রসারণের ফলে এই অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

যদিও ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন ও তার বিভিন্ন সংস্করণ বর্তমান যুগের পরিবহন ব্যবস্থায় যথেষ্ঠভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ভারতীয় রেলের অগ্রাধিকারের গভীরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আরও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

আগামী কয়েকমাসের মধ্যে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন ট্রেন চালু করার জন্য প্রস্তুত। ১,২০০ হর্স পাওয়ার (এইচ পি) ক্ষমতাসম্পন্ন এই লোকোমোটিভের উন্নয়নকে ‘অপারেশন স্মাইলিং বুদ্ধা’র সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা ভারতকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, ভারত এখন তথাকথিত উন্নত দেশগুলির তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে, যেখানে অনেক দেশ এখনও তুলনামূলকভাবে কম শক্তিসম্পন্ন হাইড্রোজেন ট্রেন তৈরির জন্য লড়াই করে চলেছে। নিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান সুনিশ্চিত করতে জার্মানির টিইউভি-এসইউডি কর্তৃক ভারতের হাইড্রোজেন ট্রেনের তৃতীয় পক্ষের নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম হাইপারলুপ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থার প্রতিনিধি হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ৪২২ মিটার ট্র্যাকের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন আরও ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ টেস্ট ট্র্যাক নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।

এলন মাস্ক সমর্থিত ‘সুইসপড’ ও ফ্রান্সের ‘সিস্ট্রা’-র সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিশ্বজনীন স্বীকৃতির মাধ্যমে ভারত এখন বিশ্বের সেই নির্বাচিত কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে, যারা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হাইপারলুপ সিস্টেম তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটিয়েছে এবং নিজেকে একটি প্রযুক্তিগত পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

শুধু তাই নয়, শক্তিধর চীনও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যেখানে বেঙ্গালুরু মেট্রোর স্থানীয়করণ প্রচেষ্টাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে সিআরআরসি ইন্ডিয়া। চীনা সংস্থাটি মেট্রো কোচ তৈরির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশের বেশি স্থানীয় উৎপাদন নিশ্চিত করছে, যেখানে ৫০ শতাংশ উপকরণ সরাসরি ভারতের উৎস থেকে নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সিআরআরসি স্থানীয়করণের হার ৯০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি সিআরআরসি নিজেদের একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, এই সুবিধাটি মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় রপ্তানির জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে।

যদিও বুলেট ট্রেনের রোলিং স্টক সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি জাপানের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভারত ইতিমধ্যেই দেশীয়ভাবে উচ্চগতির ট্রেন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রোলিং স্টকের বাইরেও অস্ট্রিয়ান কোম্পানি প্লাসার অ্যান্ড থয়েরারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্লাসার ইন্ডিয়া ট্র্যাক মেশিনের মাধ্যমে রেলওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। তাদের স্থানীয় উৎপাদন প্রচেষ্টা আত্মনির্ভরতাকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি বৈশ্বিক রপ্তানিকে সমর্থন করছে।

ভারতীয় রেলওয়ে কেবল দক্ষিণ এশিয়াকে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করার জন্য শুধু যে ‘বিবিআইএন’ উদ্যোগের পথে এগিয়ে চলেছে, তাই নয়, ‘অ্যাক্ট অ্যান্ড পলিসি’-র অধীনে পূর্বে আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে ‘আইএমইসি উদ্যোগ’-এর মাধ্যমে রেল-সমুদ্র-রেল করিডোরের মাধ্যমে ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। ভারতীয় রেলওয়ে পাবলিক সেক্টর ইউনিট সমূহ অনেক এশীয় ও আফ্রিকান দেশে রোলিং স্টক রপ্তানি, ট্র্যাক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরামর্শ পরিষেবা প্রদান করছে।

নতুন ট্রেন, আধুনিক স্টেশন, দ্রুতগামী পরিষেবা, বিশেষ মালবাহী করিডোর ও উচ্চগতির নেটওয়ার্ক নিয়ে ভারতীয় রেলওয়ে এখন একটি বিশ্বমানের রেল ব্যবস্থা। এটি এমন একটি সাফল্যের কাহিনী, যা ভারত অন্য সেইসব দেশগুলির কাছে পৌঁছে দিতে পারে, যারা এখনও পর্যন্ত জাতীয় উন্নয়নে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।

‘বিকশিত রেল, বিকশিত ভারত’ আদর্শ শুধুমাত্র ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতের রূপান্তর দেখার জন্য অপেক্ষা করা নয়, বরং ভারতীয় রেলওয়ের জন্য এটি এক নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা– ভারতের জন্য এবং ভারতের সঙ্গে, যেখানে প্রতিদিন নতুন রেকর্ড, উন্নয়ন ও বৃদ্ধির মাইলফলক স্থাপিত হচ্ছে।