সময়মতো ভর্তির টাকা জমা দিতে না পারায় মাস তিনেক আগে বাতিল হয়েছে আইআইটি ধানবাদে দলিত ছাত্র অতুলের ভর্তির আবেদন। বিশেষ সুযোগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতির এজলাসের সামনে অতুল বলেন, ‘এটাই আমার আইআইটি’তে পড়ার শেষ সুযোগ। এই সুযোগ হাতছাড়া হলে আর কোনওদিনই আইআইটি’তে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না।’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বেঞ্চের তরফে বলা হয়, ‘আবেদনকারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও কোন পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে পড়াশোনা করতে হয়েছে, তা বুঝেই আমরা নিশ্চিতভাবে দেখব, যাতে কোনওভাবেই তাঁর ভর্তি বাতিল না করা হয়।’
তিন মাস অপেক্ষার পর অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন উত্তরপ্রদেশের তিতোরা গ্রামের দলিত ছাত্র অতুল ও তাঁর পরিবার।
সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রে বেঞ্চ স্পষ্ট জানান, ‘আমরা কখনওই এমন একজন তরুণ মেধাবী ছাত্রকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।’ অতুলকে আগামীর জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানান, ‘আমরা কখনওই এমন একজন তরুণ মেধাবী ছাত্রকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। সুযোগের অভাবে এমন কোণঠাসা হওয়ার থেকে তাঁকে আমাদের যে কোনওভাবেই রক্ষা করতে হবে। এতগুলো জায়গায় দ্বারস্থ হয়েও তাঁকে যদি খালি হাতে ফিরতে হয়, তবে তা অত্যন্ত লজ্জার। একজন দলিত ছাত্র হিসেবে যথেষ্ট মেধার পরিচয় দিয়ে সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সমস্ত যোগ্যতা প্রমাণ করেছে অতুল। আইআইটি ধানবাদে যাতে আবেদনকারী ভর্তি হতে পারেন, সেই মর্মেই আমরা নির্দেশ দিচ্ছি।’ সংবিধানের ১৪২ ধারা অনুসারে আদালত তার অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেই এমন নির্দেশ দিয়েছে।
আইআইটি ধানবাদের এ বছরের বি-টেক প্রবেশিকার মেধা তালিকায় জায়গা পেলেও, ভর্তি খরচ বাবদ ১৭,৫০০ টাকা তখনই জোগাড় করতে পারেনি অতুলের বাবা পেশায় দিনমজুর রাজেন্দ্র। ধার করে কোনওমতে টাকা জোগাড় করতে পারলেও, তা জমা দেওয়ার ওয়েব পোর্টালে সময়মতো দিতে পারেননি রাজেন্দ্র। সেই কারণে এত বছরের পরিশ্রমের পরেও ভর্তি বাতিল হয়ে প্রায় হাতছাড়া হতে বসেছিল অতুলের আইআইটি’তে পড়ার স্বপ্ন। তবে হার মানেননি এই পরিবারের কেউই। ‘শেষ দেখে ছাড়ার’ জেদে অতুলের বাবা রাজেন্দ্র আইআইটি ধানবাদের কর্তৃপক্ষকে ফোন করে কৈফিয়ত চান। তাঁদের ধমক আর চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই জাতীয় এসসি-এসটি কমিশন থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ড লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি পর্যন্ত দ্বারস্থ হওয়া বাকি রাখেননি রাজেন্দ্র। অনেক টালবাহানার পর ঝাড়খণ্ড লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি থেকে তাঁদের বলা হয়, এই বছর যেহেতু প্রবেশিকা পরীক্ষা আইআইটি মাদ্রাজের তত্ত্বাবধানে হয়েছে, তাই মাদ্রাজ হাইকোর্টে এই বিষয়ে আবেদন করতে হবে। মাদ্রাজ হাইকোর্ট জানায়, এই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেওয়া তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। ফলে নিরুপায় হয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে বিশেষ ছাড়ের আবেদনে মামলা করে অতুল।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের তিতোরা গ্রামে পায়রার খোপের মতো ছোট্ট একফালি ঘরে অতিকষ্টে পড়াশোনা করেছে অতুল। তবে তাঁর পরিবারে সে মোটেই ব্যতিক্রম নয়। সাংঘাতিক প্রতিকূলতার মধ্যেই পড়াশোনা করে অতুলের বড় দাদা মোহিত এনআইটি হামিরপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে বি-টেক পড়ছেন। মেজো দাদা রোহিত কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন আইআইটি খড়গপুরে। সেজো দাদা অমিত মুজফ্ফরনগরের এক কলেজে স্নাতক স্তরের ছাত্র। ছেলেদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন বাবা রাজেন্দ্র। ১৭,৫০০ টাকা জোগাড় করতে রীতিমতো হিমশিম খায় গোটা পরিবার। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে টাকা জমা না পড়ায় অতুলের আইআইটি’তে পড়ার স্বপ্ন প্রায় হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে হার না মেনে একাগ্রতা দিয়েও যে এমন এক অসম লড়াইয়ে জেতা যায়, তা প্রমাণ করল অতুল।