উৎসবের মরশুমে খুচরো বাজারে কৃষিপণ্যের দাম ফের চড়া হারে বেড়ে চলেছে। সারা ভারত ভোগ্যপণ্য মূল্যসূচকের কৃষিপণ্যের চড়া হারে মূল্যবৃদ্ধি ধরা পড়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকে এই মূল্যবৃদ্ধিপর হার ৬.৩৬ শতাংশ। গ্রামীণ ক্ষেত্রে ভোগ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৩৯ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে ওই দুই ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৬.৭০ এবং ৬.৫৫ শতাংশ। এ বছর আগস্টে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৫.৯৬ এবং ৬.০৮ শতাংশ। ইতিমধ্যে চড়া হারে বেড়ে চলেছে সব সবজির দাম। সরকার অবশ্য বর্ষায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে দায় সেরেছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাজারে কৃষিপণ্য সহ খাদ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া ভবে বেড়ে চলেছে। দামের ক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই সরকারের।
বস্তুত, ভয়াবহ হারে মূল্যবৃদ্ধি ধরা পড়েছে সরকারি দুই পরিসংখ্যানেই। সেপ্টেম্বরের ক্রেতা মূল্যসূচক এবং পাইকারি মূল্যসূচক দেখাচ্ছে, খাদ্যপণ্য এবং সবজির দাম চড়া হারে বেড়েছে। মূলত সবজি সহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের অগ্নিমূল্যের জেরে সূচকের হারও বেড়ে গিয়েছে।
ভোগ্যপণ্যের মূলসূচক ভিত্তিক খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার আগস্ট মাসেই ছিল ৩.৬৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে সেই হার গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৪৯ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৫.০২ শতাংশ। গত ডিসেম্বরেই অবশ্য খুচরো মূল্যসূচক পৌঁছে গিয়েছিল ৫.৬৯ শতাংশে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য দিয়ে সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি আগস্টে ৫.৬৬ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৯.২৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৬২ শতাংশ। খাদ্যশস্য, সবজিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে খুচরো পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার কমানো কঠিন হবে বলে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন।
আসলে সবজির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। প্রতিটি সবজির দাম গত এক মাসে কয়েক গুণ লাফিয়ে বেড়েছে। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, সবজিতে বৃদ্ধির হার ৩৫.৯৯ শতাংশ। আগস্টেপর পাইকারি মূল্যসূচক দেখিয়েছিল গত বছরের তুলনায় সবজির দাম বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান এবং প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সেপ্টেম্বরে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকের নিরিখে ডালের দামও বেড়েছে চড়া হারে। দাঁড়িয়েছে ৯.৮১ শতাংশে। আগস্টেও ডালের দাম বারা মাস আগের তুলনায় বেড়েছিল ১৩.৬ শতাংশ। জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের দাবি, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল আবহাওয়া।
গত সেপ্টেম্বরে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮৪ শতাংশ। বলা হচ্ছে, সবজির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণেই পাইকারি মুদ্রাস্ফীতি এমন চড়া হারে বেড়েছে। এই সূচকের ভিত্তিতেই জানা যাচ্ছে, পাইকারি বাজারের হিসাবে খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধি ১১.৫৩ শতাংশ। আগস্টে এই হার ছিল ৩.১১ শতাংশ, পেঁয়াজের ৭৮.৮২ শতাংশ।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ২০২৩ সালে ভারত ছিল ১২৫টি দেশের মধ্যে ১১১ তম স্থানে । তীব্র জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতে এই সমস্যা দিন দিন তীব্রতর হয়ে উঠছে। ভৌগলিকভাবে জনঘনত্ব বাড়ছে, কমছে চাষের জমি, কমছে পশুপালনের সুঅভ্যাস, বাড়ছে শ্রমবিমুখতা। উন্নততর কৃষির মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ছিল ওয়ার্ল্ড ফুড ডে বা বিশ্বখাদ্য দিবস। এবারে ওই দিনের স্লোগান ছিল ‘রাইট টু ফুড ফর এ বেটার লাইফ অ্যান্ড এ বেটার ফিউচার’। খাদ্যপণ্যের লাগামছাড়া দরবৃদ্ধি ‘বেটার ফিউচার’-এর পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।