বাংলাদেশে দুর্গাপূজা উপলক্ষে দুদিন সরকারি ছুটি

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ দুদিন ছুটি পাচ্ছে সরকারিভাবে। প্রতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুধু দশমীর দিন সরকারি ছুটি থাকে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সপ্তমীর দিন আগামি বৃহস্পতিবারও ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার। নবমীর দিন এই ছুটির মধ্যে পড়ে। সরকার পূজার ছুটি একদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সপ্তমীর দিন ছুটি ঘোষিত হলো। এর ফলে বৃহস্পতি থেকে রোববার টানা চারদিন ছুটি পাচ্ছে বাংলাদেশ।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আজ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন দেখতে ্এসে একথা জানান। তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনাকালে আরও জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া বৌদ্ধ সম্প্রদায় যেন কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে পারে, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে প্রেস সচিব শফিকুল আলমও ছিলেন। মাহফুজ আলমের ঘোষণার অব্যবহিত পরেই ছুটির বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।


এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আজ দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনা তুলে ধরে পূজার পাশাপাশি কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ঢাকার ধামরাই, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, নড়াইল সদর উপজেলা, রংপুর সদরে লাহিড়ীহাট, নরসিংদীর পলাশ, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কুমিল্লার চকবাজার, টাঙ্গাইলে দাইনা ইউনিয়ন, ময়মনসিংহের গৌরিপুর, লক্ষীপুরের রামগঞ্জ, বরগুনার গলাচিপা চন্ডিপুর, ফরিদপুরের ভাঙা, শেরপুরের শ্রীপুর, লালমনিরহাটের আদিতমারি, পাবনার সুজানগর, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড় ভিটা, বরিশালের বাখেরগঞ্জ ও চাপাইনবাবগঞ্জের বটতলায় হামলা চালিয়ে দুর্গাপ্রতিমা ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে সংবাদ সম্মেলনে এও বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পূজার মধ্যে আমরা এসব হামলা দেখতে চাই না। শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ নয়, রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে এই সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে বলতে চাই, পূজার পাঁচদিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে চাইলে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।

নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরে এবার ২৫২টি পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর ঢাকা মহানগরে ২৪৮টি পূজার আয়োজন হয়েছিল। সে হিসেবে মহানগরে ৪টি পূজা বেড়েছে। তবে সারাদেশ থেকে এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে ৩১ হাজার ৪৬১ টি পূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি নিতে অপারগ হওয়ায় ও বন্যার কারণেও দুর্গত এলাকায় কোথাও কোথাও পূজার্থীরা এবার পূজার আয়োজন করতে পারেননি। গত বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ৪০৮টি পূজা হয়েছিল বলে জানা যায়।
নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা মহানগর ও সারাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজায় প্রতি মন্ডপ কিংবা প্যান্ডেলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার ৮ দফা দাবি ব্যানারের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্যে বলা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রত্যর্পণ; জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকার, সংসদ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা; দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন; বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন; হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-এ ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে’তে ১ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা।

এছাড়া সারাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃত্ব ও জনগণের বিরুদ্ধে অসত্য ভিত্তিহীন হয়রানিমূলক মামলা পূজার আগে প্রত্যাহার এবং সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক পদচ্যুতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়ে ব্যানার টাঙাতে বলা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এবার এক অন্যরকম পরিস্থিতিতে শারদীয় দুর্গাপূজা আয়োজিত হচ্ছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে, এসব হামলা রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, এভাবে হামলার বিষয়টিকে সরলীকরণ করা হলে যে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, সে লক্ষ্যে আমরা পৌঁছুতে পারবো না।

সংবাদ সম্মেণনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।