আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির যে ভোট হতে চলেছে, তাতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ এক হয়ে লড়ছে না। এই মঞ্চের শরিক হলেও কংগ্রেস আম আদমির বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে নামছে। সুতরাং এই ভোটে বিরোধীরা এক হয়ে লড়তে পারছে না। অনেকের মতে কংগ্রেস এবং আম আদমি বিরোধী জোটের শরিক হলেও, এখানে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে। ইন্ডিয়া জোটে এই ধরনের অনৈক্য দেখা যেতে পারে অন্যত্রও। তবে জোটের অপর বড় শরিক পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস আম আদমির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ভোটে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিল। কংগ্রেস আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে লড়বে জেনে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি মহাখুশি। বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছে দিল্লির মসনদ দখল করতে। কারণ গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের পর বিজেপির কাছে সুযোগ এসেছে দিল্লির শাসনভার হাতে নেওয়ার। তাই এই দল সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজেপি বলছে ইন্ডিয়া জোটে ঐক্য থাকলে কংগ্রেসকে আপের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে দেখা যেত না।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ফোন করে তাঁর দলের সমর্থনের কথা কেজরিওয়ালকে জানান। তারপরেই কেজরিওয়াল বলেন, দিল্লির ভোটে আম আদমির পাশে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সমর্থন জানাবে জেনে তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মমতাদিদির কাছে কৃতজ্ঞ। বলেন, ‘ধন্যবাদ দিদি, আপনি আমাদের খারাপ ভালো সবসময়েই পাশে থেকেছেন এবং সমর্থন করেছেন। আমাদের আপনি আশীর্বাদ জানিয়েছেন। তৃণমূল এর আগে সমর্থনের কথা না জানালেও, এই দলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়ান ঘোষণা করেছেন আমরা আম আদমির পাশে রয়েছি। ওই নির্বাচনে যে কোনও ভাবেই হোক তৃণমূল কংগ্রেস আম আদমি দলকে সমর্থন জানাবে এবং সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আশা করা যায়, এই দল দিল্লির মসনদ আবার দখল করবে। এর আগে সমাজবাদী পার্টি, এই দলও ইন্ডিয়া জোটের শরিক, দিল্লির ভোটে আম আদমি পার্টিকে সমর্থন জানিয়েছে। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কেজরিওয়ালকে আশ্বস্ত করে জানিয়ে দিলেন, তাঁরা তাঁর দলের লড়াইয়ে পাশে থাকবে।
সুতরাং ইন্ডিয়া জোটের দুই প্রধান দল সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস আম আদমিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করল। এই দুই দল তাঁর দলের পাশে দিল্লি ভোটের লড়াইয়ে থাকার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালও মহাখুশি। সুতরাং রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের প্রধান শরিক হলেও, এই জোটের অপর দুই শরিক তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির সমর্থন লাভে বঞ্চিত। এটাকি জোটে ভাঙনের ইঙ্গিত? দিল্লির ভোটে কংগ্রেস একঘরে হয়ে গেল। লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে দেখা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং আম আদমি পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব রক্ষা করে চলেছে। এই তিন দল ইন্ডিয়া জোটের শরিক হলেও শরিক কংগ্রেস দিল্লির লড়াইয়ে তাদের সমর্থন পাচ্ছে না। তা দেখে বিজেপির সাংসদরা খুশি। এই দলের নেতারা এখন মনে করছেন, এই তিন দল যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে স্পষ্ট ইন্ডিয়া জোটে ঐক্য বলে কিছু নেই।
দিল্লির ভোটে তা আরও স্পষ্ট হয়ে দেখা দিল। আম আদমি পার্টির সবচাইতে বড় লাভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন পেয়ে। তৃণমূল কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি এখন কীভাবে দিল্লির ভোটে আমআদমি পার্টিকে সমর্থন জানাবে সেটাই বড় কথা। তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, তাদের পক্ষে অরবিন্দ কেজরিলালকেই সমর্থন করা স্বাভাবিক। কারণ ২০২১ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আমআদমি পার্টি তাদের প্রার্থী দেবে এই ঘোষণা করলেও, শেষ পর্যন্ত এই দল কোনও প্রার্থী দেয়নি। অপরদিকে কংগ্রেস বিধানসভা, লোকসভা এবং উপনির্বাচনেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। আম আদমি পার্টি শেষ পর্যন্ত বিধানসভা নির্বাচনে কোনও প্রার্থী না দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেজলিওয়ালের প্রতি প্রসন্ন হল। সুতরাং মমতা যদি আপ দলের হয়ে ভোটের প্রচারে অংশ নেন, তাহলে কেজরিওয়াল পুলকিত হবেন সন্দেহ নেই। বড় লাভ হবে আপের।
সংসদের অধিবেশনেও তৃণমূল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যে একটি সমন্বয় ও প্রীতির বন্ধন লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া মমতা ও কেজরিওয়ালের মধ্যে সম্পর্ক মধুর। তবে দিল্লির বাঙালি ভোটকে পাখির চোখ করে মমতা দিল্লিতে এসে আপের সমর্থনে প্রচার করবেন কিনা, তা নিয়ে তৃণমূল সূত্রে কিছু বলা হয়নি এখও। তবে তৃণমূলের কলকাতার এক নেতা বলেছেন, আমরা সবসময়ই আপের পাশে আছি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ব। যেহেতু ভোট শিয়রে (৫ ফেব্রুয়ারি) তাই সব দলই এখন প্রচারে নেমে গেছে। ভোটের ফলাফল জানা যাবে ৮ ফেব্রুয়ারি।
আপ দল মাসে ২১০০ টাকা করে মহিলাদের অনুদান এবং বয়স্কদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করেছে। কংগ্রেস থেকে ঘোষণা করা হয়েছে দিল্লিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসন হলে ২৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা চালু করবে। আপ ও কংগ্রেসের এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বলেছে তারা দিল্লির মসনদ হাতে পেলে দিল্লিবাসীর কল্যাণের জন্য অনেক হিতকর প্রকল্প হাতে নেবে। বিজেপির প্রচারের প্রধান হাতিয়ার কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সরকারি বাসভবন নির্মাণ করতে ৩৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন, যা জনগণের করের টাকা। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, তৃণমূলের সমর্থনে আপের কোনও ফায়দা হবে না।