আজ ‘এভারেস্ট ডে’, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পা রাখার ৭১ বছর

হীরক কর

আজ ২৯ মে৷ আজ ‘‘এভারেস্ট ডে’’৷ এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গে মানুষের পা রাখার ৭১ বছর পূর্ণ হল আজ৷
মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার জন্য পরিকল্পিত ও পেশাদার অভিযানের সূচনা হয়েছিল ১৯২২ সালে৷ অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক একশো বছর এক আগে; কিন্ত্ত বিশ্বের উচ্চতম শিখরে প্রথম সফল অভিযানটি সম্পন্ন করতে তার পরেও লেগে যায় পুরো একত্রিশ বছর৷ ২৯ মে ইতিহাস তৈরি করে বিশ্বে প্রথমবার এভারেস্ট সামিট করেন তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি৷

২৯ মে, ১৯৫৩ তারিখে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে, শেরপা তেনজিং নোরগে এবং নিউজিল্যান্ডের এডমন্ড হিলারি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন৷ প্রথমে, তারা একটি ব্রিটিশ পর্বতারোহন দলের সদস্য হিসাবে ছিলেন৷ কিন্ত্ত তারপরে তেনজিং-হিলারি বিশ্বের শীর্ষে প্রথম উচ্ছ্বসিত আলিঙ্গন করেন৷ তাঁরা প্রায় ১৫ মিনিট সেখানে ছিলেন৷ তেনজিং নেপাল, ব্রিটেন, ভারত এবং জাতিসংঘের পতাকা তোলেন৷ পতাকা উত্তোলনের সময় হিলারি একটি ছবি তুলেছিলেন৷ তেনজিং ক্যামেরার কারিগরির সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন, তাই সামিটে হিলারির কোনো ছবি নেই৷ তেনজিং নোরগে ১৯১৪ সালের ২৯ মে জন্মগ্রহণ করেন৷ কাকতালীয়ভাবে এডমন্ড হিলারিকে সঙ্গী করে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন ১৯৫৩ সালের ২৯ মে৷


পর্বতাহোরণের ইতিহাসে ২৯ মে দিনটি এই কারণেই অমর৷ দিনটিকে স্মরণে রাখতে এই দিনটিতেই পালন করা হয় ‘মাউন্ড এভারেস্ট দিবস’৷ তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারির জেদ, সাহস আর পর্বতারোহণের কৌশলকে সম্মান জানানোর পাশাপাশি, বাকি অভিযাত্রীদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাতেই পালিত হয় এই দিনটি৷

সংস্কৃত ও নেপালি ভাষায় ‘এভারেস্ট’ শৃঙ্গের আসল নাম ছিল ‘সাগরমাথা’৷ পরে ইংরেজরা এই শৃঙ্গের নামকরণ করেন ‘এভারেস্ট’ বলে৷ তিব্বতি ভাষায় সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গের নাম ‘চোমোলাংমা’ অথবা ‘ধরিত্রীর মাতৃদেবী’৷ ১৮৬৫ সালে ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল জর্জ এভারেস্টের সম্মানার্থে ইংরেজ সরকার শৃঙ্গের নাম রাখে ‘এভারেস্ট’৷ শোনা যায়, এই নাম পরিবর্তনে নাকি স্বয়ং এভারেস্ট সাহেবের ঘোরতর আপত্তি ছিল৷

আজ থেকে ৭১ বছর আগে এভারেস্ট জয়ের আগেও ছয়টি পর্বত অভিযান করেছিলেন নোরগে৷ নানা কারণে তিনি প্রত্যেকটি সফরেই সাফল্য লাভ করতে পারেননি৷ ১৯৫৩ সালে জন হান্টের নেতৃত্বে একটি ব্রিটিশ এভারেস্ট পর্বত অভিযাত্রীদলে অংশ নেন হিলারি৷ ২৬ মে টম বুর্দিলঁ ও চার্লস ইভান্স শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করেন কিন্ত্ত ইভান্সের অক্সিজেন সরবরাহকারী ব্যবস্থায় গোলোযোগ দেখা দিলে তাঁরা শৃঙ্গের ৩০০ ফুট নিচ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ এরপর দলপতি হান্ট তেনজিং নোরগে ও এডমন্ড হিলারিকে শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করতে নির্দেশ দেন৷ সেই মতো ২৮ মে তাঁরা আলফ্রেড গ্রেগরি প্রমুখের সহায়তায় ৮,৫০০ মিটার (২৭,৮৮৭ ফুট) উচ্চতায় শিবির স্থাপন করেন৷ গ্রেগরি ও তাঁর সঙ্গীরা নীচে ফিরে যান৷

এদিকে এডমন্ড বা তেনজিং কেউই খেয়াল করেননি এডমন্ডের জুতো সারা রাত তাঁবুর বাইরে পডে় থাকল৷ পরদিন সকালে যথারীতি সেই জুতো ব্যবহারের অযোগ্য৷ সেগুলো জমে গিয়েছে৷ কিন্ত্ত জুতো ছাড়া অভিযান তো সম্ভব নয়! শেষে দ’ঘণ্টা ধরে দু’জনে মিলে চেষ্টা করে সেগুলোকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসেন৷ এরপরে তাঁরা বাকি সরঞ্জাম নিয়ে শৃঙ্গ আরোহণের চেষ্টা করতে শুরু করেন৷

সকাল সাডে় এগারোটা নাগাদ এভারেস্টে আরোহণের সেই বিরল মুহূর্ত এল৷ পর্বতশৃঙ্গে তাঁরা মিনিট পনেরো ছিলেন৷ এই সময়ে হিলারি তেনজিংয়ের ছবিও তোলেন, বিতর্ক বাঁধল এবার ছবিটিকে কেন্দ্র করে৷ এভারেস্ট শীর্ষে মানুষের প্রথম আরোহণের ছবিটি আজও পৃথিবীর সেরা আলোকচিত্রগুলোর মধ্যে একটি৷ ছবিটি জনসমক্ষে প্রকাশের পর বিশ্বজুড়ে জোর শোরগোল পড়ে যায়৷ সেই চিত্রটিতে দেখা যায়, এভারেস্টের বরফসাদা শৃঙ্গে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আর কেউ না, শেরপা তেনজিং৷ আর সেই ছবিটি তুলেছেন এডমন্ড হিলারি৷ ছবি তোলা অবধি না হয় ঠিকই ছিল, কিন্ত্ত এভারেস্টে হিলারির কোনো ছবি নেই কেন? অনেক প্রশ্নের পর হিলারি স্বয়ং এর কারণ জানান৷ এভারেস্টে আরোহণের পর হিলারি জানতে পারেন, তেনজিং ক্যামেরা ব্যবহার করতে জানেন না৷ অতএব তাঁকে দিয়ে ছবি তোলানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না৷ এভারেস্টের স্মৃতি হিসেবে তাই হিলারি তেনজিং-এর ছবি তুলে দেন, যা ইতিহাস রচনা করে৷ সেযুগে সেলফি থাকলে হয়ত এই বিতর্ক উঠতই না৷

সপ্তমবারে এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে সফল হন নোরগে৷ বর্তমানে এভারেস্টের উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার৷ ১৮৫৬ সালে যখন এই শৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছিল, তখন এটির উচ্চতা ছিল ৮৮৪০ মিটার৷ প্রতি বছর শৃঙ্গের উচ্চতা একটু করে বৃদ্ধি পায়৷ প্রতি বছর মে মাসেই শুরু হয় এভারেস্ট পর্বত আরোহণ৷

হিমালয় পর্বতমালার মুকুট, নেপাল ও তিব্বত (এখন চিন)-এর ঠিক সীমান্তে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি৷ উচ্চতা ৮৮৪৮ মিটার৷ ভয়ঙ্কর ঢাল, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, যে কোনও সময় বদলে যাওয়া আবহাওয়া, অক্সিজেনের ঘাটতি- এরকম আরও নানা প্রতিকূলতা জয় করেই এভারেস্ট সামিট করেন পর্বতারোহীরা৷
নিউজিল্যান্ডে মৌমাছি প্রতিপালনের কাজ করতেন এডমন্ড হিলারি৷ বিভিন্ন পর্বতে আরোহণ করছিলেন৷ ১৯৫১ সালে একবার এভারেস্ট সামিটের চেষ্টা করেছিলেন৷ তেনজিং নোরগে অত্যন্ত অভিজ্ঞ পর্বাতরোহী এবং শেরপাও৷ ছোট থেকেই হাতের তালুর মতো করে চিনতেন পাহাড়৷ তাঁরা দুজনে মিলে অসাধ্য সাধন করেন৷

২৯ মে দিনটাতেই ফাইনাল সামিট শুরু হয়৷ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রম করে বেলা সাডে় এগারোটা নাগাদ শৃঙ্গে পা রাখেন তাঁরা৷ কিন্ত্ত কে প্রথম পা রেখেছিলেন পর্বতশৃঙ্গে? তেনজিং নোরগে বা এডমন্ড হিলারি- এঁরা কেউই সেটা নিজেকে আলাদা করে দাবি করেননি৷ সবসময়েই শৃঙ্গজয়ের কথা বলার সময় ‘আমরা’ ব্যবহার করেছেন৷ হয়তো পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল বলেই৷ হয়তো পাহাড়চূড়োয় ওঠা ওই দুই মানুষের মনটাও পাহাডে়র মতোই বড় ছিল বলেই৷ তেনজিং নোরগে, এডমন্ড হিলারির দেখানো পথ ধরেই পরে বহু অভিযাত্রী এভারেস্ট সামিট করেছেন৷ এখনও করছেন৷

তবে ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নিউজিল্যান্ডের নাগরিক এডমন্ড হিলারি ও নেপালি শেরপা তেনজিং নোরগের সেই এভারেস্ট বিজয়ের খবর যেভাবে বাকি দুনিয়া জানতে পেরেছিল – সেই ইতিহাসও কম রোমাঞ্চকর নয়৷

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সাংঘাতিক খবরটি গোটা দুনিয়ার কাছ থেকে অতি সন্তর্পণে আড়াল করে রাখা হয়েছিল৷ পুরো পাঁচদিন ধরে৷ যাতে লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেকের দিন সকালে তা ঘোষণা করা যায়৷

আজকের যুগে এ জিনিস হয়তো ভাবাই যায় না৷ কিন্ত্ত সে আমলেও কাজটা মোটেই সহজ ছিল না৷ আর তখন এরজন্য ‘দ্য টাইমসে’র সংবাদদাতা জেমস মরিস-কে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল৷ তিনিই ছিলেন সেই অভিযানের ‘অফিশিয়াল করেসপন্ডেন্ট’, আর ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় সেটি ছিল একটি আদ্যন্ত ‘ব্রিটিশ এভারেস্ট এক্সপিডিশন’ এই অভিযানটির অন্যতম লক্ষ্যই ছিল রানির অভিষেকে তাঁকে একটি বিশেষ উপহার দেওয়া; আর সেটি হল এভারেস্ট বিজয়৷ পরে ‘করোনেশন এভারেস্ট’ নামে একটি বই লিখে জেমস মরিস সেই চমকপ্রদ ঘটনার বিশদ বর্ণনাও দিয়েছেন৷

তেনজিং নোরগের পুত্র জামলিং তেনজিং, যিনি নিজেও একজন পর্বতারোহী ও এভারেস্ট-বিজয়ী, তিনি বলেন, ‘‘খুব গোপন রাখা হয়েছিল পুরো বিষয়টা এবং রানির অভিষেকের আগেই এভারেস্টে ইউনিয়ন জ্যাক উড়ুক, ব্রিটেন এটা ভীষণভাবে চেয়েছিল৷ বলা যেতে পারে, অভিষেকের দিন এই খবরটা ছিল রানিকে এম্পায়ারের তরফে একটা দারুণ উপহার’’ জামলিং-এর বাবা অবশ্য এভারেস্টের শিখরে শুধু ব্রিটিশ জাতীয় পতাকাই নয় – জাতিসংঘ, নেপাল ও ভারতের পতাকাও উডি়য়ে দিয়ে এসেছিলেন৷

কোনও অভিযান কিছুদূর পর্যন্ত সফল বা ব্যর্থ হলে, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প থেকে সেই খবর ‘রানার’ মারফৎ পৌঁছে দিতে হত নিচের পাহাডি় গ্রাম নামচে বাজারে, সেখানেই ছিল নিকটতম টেলিগ্রাফ অফিস৷ টেলিগ্রাফ অফিসের অপারেটর ছিলেন ভারতীয় পুলিশে চাকরিরত জনৈক মি. তিওয়ারি৷ কিন্ত্ত কোনও গোপন খবর ওভাবে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা ছিল, সেই ‘রানার’ বা মি. তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তা যে কোনও সময় ফাঁস হয়ে যেতে পারত৷ আর তা ছাড়া টেলিগ্রাফে পাঠানো বার্তায় আডি় পেতেও তা যে কেউ শুনে নিতে পারত৷ ফলে জেমস মরিস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অভিযানের খবর পাঠানোর জন্য তিনি একটি সাঙ্কেতিক বা গোপন কোড ব্যবহার করে সেই বার্তা কাঠমান্ডু হয়ে লন্ডনে পৌঁছে দেবেন৷

এডমন্ড হিলারি নাইটহুডে সম্মানিত হয়েছিলেন এভারেস্ট জয়ের বছরেই, ১৯৫৩তে৷ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এডমন্ড হিলারি এবং জন হান্টকে নাইট উপাধি দেন, কিন্ত্ত তেনজিং নোরগে নাইটহুডের পরিবর্তে শুধুমাত্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পদক পেয়েছিলেন৷ ১৯৫৭ সালে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু দক্ষিণ এশীয় ছেলে ও মেয়েদের পর্বতারোহণের দক্ষতায় প্রশিক্ষণ এবং তাদের পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রদানের জন্য তেনজিংয়ের প্রচেষ্টার পিছনে তাঁর সমর্থনের হাত বাডি়য়ে দেন৷ তেনজিং নিজেই তাঁর এভারেস্ট জয়ের পর স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন৷ তিনি দারিদ্র্যতা থেকে সচ্ছলতার একই পথকে অন্য লোকেদের কাছে প্রসারিত করতে চেয়েছিলেন৷

তেনজিংয়ের সঙ্গী গোরা সাহেবের নামও সকলেরই জানা৷ এডমন্ড হিলারি, নিউজিল্যান্ডের নাগরিক৷ তেনজিংয়ের জন্মনাম, নামগিয়াল ওয়াংদি৷ ওরফে শেরপা তেনজিং নোরগে৷ সেই সময়কার নেপালিদের মতো জন্মস্থান কিংবা জন্মতারিখ সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানতেন না নোরগে৷ তবে ১৯১৪ সালের মে মাসের শেষ নাগাদ তিনি জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়৷ আর তিনি নিজে পরে এভারেস্ট জয়ের দিনটিকেই অর্থাৎ ২৯ মে তাঁর জন্মদিন বলে ঘোষণা করেন৷ সেই হিসেবে আজ নোরগের জন্মদিনও৷

১৯৩২ সালে ১৮ বছর বয়সে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে তেনজিং ১২ জন বন্ধুর সঙ্গে দার্জিলিং শহরের দিকে রওনা হন৷ কিন্ত্ত ভারত-নেপাল সীমান্তে তাদের মধ্যে ছাড়াছাডি় হয়ে গেলে তেনজিংকে এক স্থানীয় নেপালি আশ্রয় দেন৷ সেখান থেকে তেনজিং দার্জিলিংয়ের নিকটবর্তী আলুবাডি়তে যান৷ সেখানে দুধ বিক্রি শুরু করেন৷ পরের বছর একটি ব্রিটিশ এভারেস্ট পর্বত অভিযানে মালবাহকের কাজ চেয়েও তা পাননি৷ ব্যর্থ মনোরথে তিনি বাডি় ফিরে আসেন৷ কিছুদিন পরে তেনজিং আবার দার্জিলিং পালিয়ে আসেন এবং টংসুং বস্তিতে বসবাস শুরু করেন৷ ১৯৩৫ সালে দাওয়া ফুটি নামে এক শেরপা মেয়েকে বিয়ে করেন৷ সেই হিসেবে দার্জিলিংয়ের সঙ্গে নোরগের ওতপ্রোত সম্পর্ক জডি়য়ে রয়েছে৷ উনিশ বছর বয়সে দার্জিলিং এসেছিলেন৷ পাহাডে়র সঙ্গে প্রেম ছোট থেকেই৷ তাঁর সাফল্যে নেপাল সরকার ২০০৮ সালের ২৯ মে আন্তর্জাতিক এভারেস্ট দিবস হিসেবে ঘোষণা করে৷

তেনজিং নোরগের জন্ম নেপালে৷ তবে তাঁর কোথায় জন্ম, তা নিয়ে বহুমত রয়েছে৷ ‘ম্যান অফ এভারেস্ট: দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ তেনজিং’ গ্রন্থে লেখক বলেছেন, উত্তর-পূর্ব নেপালের সোলুখুম্বু জেলার তেনবোচে গ্রামে তাঁর জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা৷ তাঁর ছেলে জামলিং তেনজিং নোরগে যে বই লিখেছেন, সেই ‘টাচিং মাই ফাদার্স সোল: আ শেরপাজ স্যাক্রেড জার্নি টু দি টপ অফ এভারেস্টে’ উল্লেখ রয়েছে তিব্বতের ইউসাং-এ নোরগের জন্ম এবং নেপালে থামে গ্রামে বড় হয়েছেন৷ ৭১ বছর আগে ৮৮৪৯ মিটার (২৯, ০৩২ ফুট) উচ্চতার এভারেস্ট জয়ের পূর্বে তেনজিং নোরগে মোট ৬টি অভিযানে শেরপা বা মোটবাহক হয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত, প্রবল তুষারপাত, ঝোড়ো তুষারবায়ু ও অক্সিজেনের অভাবে কোনওবারই সফল হননি৷ জর্জ ম্যালরি এবং অ্যান্ড্রু আরভিনের মতো পর্বতারোহীসহ ৩০০ জনের বেশি শৃঙ্গজয়ের অভিলাষীর মৃতু্য হয়েছে এভারেস্টের টানে৷ সপ্তমবারে সফল হন নোরগে৷ এই কৃতিত্বের জন্য রানি এলিজাবেথ নোরগেকে সেই বছর জর্জ মেডেল দিয়ে সম্মানিত করেন৷ ভারত সরকার দেয় পদ্মভূষণ৷

হিলারির হিমালয়কেন্দ্রিক আত্মজীবনী ‘‘হাই এডভেঞ্চার্স’’এবং ‘‘ভিউ ফর্ম দ্য সামিট’’, এই দুটি গ্রন্থেই হিলারি লিখছেন, ‘আমরা একসঙ্গে শীর্ষে পৌঁছালাম৷’ তেনজিং তাঁর আত্মজীবনী ‘ম্যান অফ এভারেস্ট’ -এ স্পষ্টভাবে জানালেন, হিলারিই প্রথম শিখর জয় করেছিলেন এবং সেই চল্লিশ ফুট উঁচু আপাত-অসম্ভব পাথুরে দেওয়ালটি, যার নামকরণ পরবর্তীতে করা হয় ‘হিলারি স্টেপ’, অতিক্রমের উপায় হিলারিই খুঁজে বের করেন এবং তেনজিং তাঁকে কেবল অনুসরণ করে শিখরে পৌঁছেছিলেন৷

এদিকে, এভারেস্ট জয়ের পর তেনজিংকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় এক অদ্ভুত আন্তর্জাতিক লড়াই৷ তেনজিং ভারতের, না নেপালের? তবে তেনজিংকে নেপালি নাগরিকের চেয়ে ভারতীয় প্রমাণ করতে ব্যগ্র হল একটি বিশেষ রাজনৈতিক মহল৷ সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তেনজিংকে ভারতে রাখার ব্যবস্থা করলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু৷ দার্জিলিং-এ হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট স্থাপন করে তেনজিংকে সেখানকার প্রথম ডিরেক্টর করে দিলেন তিনি৷

স্যার এডমন্ড ৮৮ বছর বয়সে মারা যান নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে৷ তাঁর আজীবনের বন্ধু তেনজিং নোরগে পরবর্তী জীবনে ভারতের দার্জিলিংয়েই বসবাস করতেন৷ তেনজিং মারা যান ১৯৮৬ সালের ৯ মে, ৭২ বছর বয়সে৷ আজ এই বিশেষ দিনে এই দুই মহান মানুষের প্রতি নতমস্তক শ্রদ্ধা, প্রণাম…..