• facebook
  • twitter
Tuesday, 8 April, 2025

সাধু সাজা

কোটি কোটি টাকার মালিক, যা আত্মসাৎ করা অর্থ

ফাইল চিত্র

আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং তাঁর অধীন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অকাতরে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিলানোর দায়ে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন তিনি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ বরং আঙুল তুললেন প্রশাসনের মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের দিকে। অর্থাৎ আকারে-ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়ে দিলেন ওখান থেকে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য লোকদের চাকরি দেওয়ার সূত্র বেরিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে স্কুল শিক্ষা দপ্তর নয়, প্রশাসনই দায়ী। পার্থর এই মন্তব্য চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সর্বস্তরে, শিক্ষক মহলে ও বিরোধী শিবিরে।

যখন লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্য, অশিক্ষিত লোকদের চাকরির খবর পত্রপত্রিকায় বের হতে শুরু হল, তখন সবাই আঙুল তুললেন শিক্ষামন্ত্রীর দিকে। কারণ শিক্ষা দপ্তরের প্রধান এবং চাকরি দেওয়া থেকে আরম্ভ করে সব প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর দ্বারাই পরিচালিত হয়। শিক্ষা দপ্তরের সব কাজের জন্যই দায়ী তিনি। সুতরাং দেখা গেল লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে অযোগ্য লোকদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, দায়টা পড়ল শিক্ষামন্ত্রীর ঘাড়েই। সুতরাং সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করল। তাঁর বান্ধবী অর্পিতা চ্যাটার্জির ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা বের হল এবং কোথা থেকে এই টাকা এল, তা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধল। পরে অর্পিতা চ্যাটার্জি গ্রেপ্তার হলে তিনি দাবি করেন, ওই টাকা তাঁর নয়। সন্দেহ পার্থ চ্যাটাজিই ওই অর্থ ওখানে গচ্ছিত রাখতেন।

পার্থ চ্যাটার্জি জামিন না পেয়ে এখন এই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার দায় তিনি প্রধান প্রশাসন অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে সাধু সাজার চেষ্টা করছেন। কিন্তু টাকা লেনদেনে জড়িত থাকুন বা না থাকুন, তাঁর দপ্তরেরই এই কাজ— কিছু অসাধু লোভী অফিসারদের কাজ। তাঁদের দিয়েই পার্থ চ্যাটার্জি কাজ সেরেছেন। কারণ তাঁর নির্দেশ ছাড়া এ কাজ হতে পারে না। এই অফিসাররা এখন অনেকেই জেলের ঘানি টানছেন। দলের একজন দুই নম্বর নেতামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজনের বিরুদ্ধে এই অপবাদ দলের সুনাম, সুফলের বিরাট ক্ষতি করল। তাই দল তাঁকে বহিষ্কার করল— দলের সব দায়িত্ব, যা তাঁর ওপর ন্যস্ত ছিল, তা কেড়ে নেওয়া হল। কিন্তু আদালতে শুনানি থাকলে, অনেক বার তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি এখনও তৃণমূলেই আছেন, তৃণমূলেই থাকবেন। তৃণমূল গড়ার কাজে তাঁর অবদান রয়েছে। কিন্তু দল তা স্বীকার করে না। এমনকি যেদিন তিনি এই শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকা চুরির দায়, রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক দপ্তরের ওপর দিলেন, সেদিনও তিনি দাবি করলেন, এখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তাঁর অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রয়েছে। তিনি আমারনেত্রী। যা নিয়ে বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল হাসিঠাট্টা করে।

মুখ্যমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বক্তব্যের কোনও গুরুত্ব দেন না কিন্তু বীরভূমের তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি, গরু পাচার ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত থাকার জন্য এখনও ভুবনেশ্বরের জেলে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেষ্ট যেদিন জামিন পাবেন, সেদিন যেন তৃণমূলের নেতা-সমর্থকরা ফুল মালা দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেন। অথচ সিবিআইয়ের খাতায় তিনি একজন গুরুতর অপরাধী। কোটি কোটি টাকার মালিক, যা আত্মসাৎ করা অর্থ।

পার্থ চ্যাটার্জির সেদিনের আদালত চত্বরে মন্তব্য যে প্রধান প্রশাসনিক দপ্তরই এই যা অনাচার, অনৈতিক কাজের সঙ্গে লিপ্ত। বিজেপির এক নেতা বললেন, এ রকম একজন অসাধু মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীনতার পর আর পায়নি। তিনি মুখে ন্যায়ের বাণী উচ্চারণ করেন, কাজে অনাচারে ডুবে থাকেন। তাঁর গুরুতর অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পার্থ চ্যাটার্জি এত বড় অন্যায় করার সাহস পেয়েছেন।

পার্থ জামিন পাননি—কবে পাবেন, তা অনিশ্চিত। কারণ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত দীর্ঘদিন হল চলছে, কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কোনওদিন যদি পার্থ জমিন পান, তাহলে তাঁর মুখ থেকে কী আরও শোনা যাবে, তা কে জানে? তবে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার পিছনে কী রহস্য আছে, তা তখন বের হবে।