বাংলাদেশ কোন দিকে?

ছবি: আইএএনএস।

স্নেহাশিস সুর

বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রায় তিন মাস হতে চলল। সকলেরই মনে এখন একটাই প্রশ্ন, সে দেশ কোন্ দিকে এগোচ্ছে। আগামী দিনে শাসন ব্যবস্থা কী হতে চলেছে। রাষ্ট্রপতি বদল হবেন কিনা, হলে কীভাবে? বাংলাদেশে সামরিক শাসন হবে কিনা? যেহেতু সেদেশে সেনার সরকার পরিচালনার ইতিহাস আছে তাই এই ভাবনাও অনেকের মনে দানা বাঁধছে। এই সব প্রশ্নের মানে মহম্মদ ইউনূস কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন?

আরেকটা বড় প্রশ্ন, বাংলাদেশে নির্বাচন কবে হবে এবং নির্বাচনের পর সেদেশে নির্বাচিত সরকারের চেহারা কেমন হবে? আর আগে যেমন বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বা নেবার মতো পরিস্থিতি ছিল না— এবার কি আওয়ামী লিগ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে? দলের নেতৃত্ব কে বা কারা দেবে?


অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপি-র নেতৃত্ব দিতে কি বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমন বিদেশ থেকে দেশে আসতে পারবেন? বিগত আওয়ামী লিগ সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার জেরে তিনি দেশছাড়া। এই সরকার কি তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলো তুলে নেবে? মানে বিএনপি কি এই অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জোর খাটিয়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধের মামলাগুলো তোলাতে সক্ষম হবে? আসলে এই মুহূর্তে আওয়ামী লিগের সর্বোচ্চ নেত্রী সহ দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা দেশের বাইরে। তার পরের সারির অনেকেই পলাতক বা আত্মগোপন করে আছেন বা বিভিন্ন মামলায় বন্দি। সেই সঙ্গে দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলিগকে এই সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাই বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ কবে নির্ভয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রকাশে অংশ নিতে পারবেন— সেটাও দেখার। তবে নির্বাচনের ঘোষণা হলে তবেই এসব বেশি করে ভাবার দরকার।

অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কার নিয়ন্ত্রণ কতটা? মানে বিএনপি-র নিয়ন্ত্রণ কতটা, জামাতের নিয়ন্ত্রণ কতটা? আর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ কতটা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নিজেদের স্বাধীনভাবে সরকার চালানোর পরিস্থিতি কতটা— সেটাও দেখতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কোন গোষ্ঠীর সরকারের ওপর কর্তৃত্ব কতটা, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর ওপরেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ।

যদি বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? এর উত্তর একটাই— তা হল জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। এই মূল্যবৃদ্ধি এতটাই মাত্রাছাড়া যে গরিব ও মধ্যবিত্তের অবস্থা একেবারে সঙ্গীন করে তুলেছে। দৈনিক জীবনধারণের সমস্যা তাদের জর্জরিত করেছে। এটা আগের সরকারের আমলেই মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছিল— আর এখন যে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে তা বলা মুশকিল। আগের সরকার দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আগের সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের রাগ ও অনাস্থার অন্যতম কারণ যে এটা তার কোনও দ্বিমত নেই।

এখন অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কতটা কৃতকার্য হয়, সেটা দেখার। যদি বলা যায় যে এই সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা কী— তাহলে উত্তর হচ্ছে, জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। এই প্রশ্ন এবং উত্তরটা সকলের জানা। কিন্তু এটা কাজে করে দেখানো খুবই কঠিন। আর এটা যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তা নয়। এর মধ্যে সহজ শর্তে আমদানিরও যোগ আছে। তবে খাদ্যশস্য, মাছ এইসবের বেশ কয়েকটিতে বাংলাদেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। তাহলে সমস্যাটা কিছুটা হলেও ন্যায্যমূল্যে খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যথাযথ বণ্টনর। তিন মাসের প্রথম মাসটা বাদ দিলেও ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কতটা কী করতে পেরেছে সেটা বাংলাদেশের মানুষই সবচেয়ে ভালো বলবেন। বিগত সরকার এতদিনে যা পারেনি (বা করেনি) এই সরকার নির্দিষ্ট সময়ে তার কতটা কী করতে পারবে— তা সময় জবাব দেবে। কিন্তু আগেও ছিল এবং এখনও এটাই দেশের মূল সমস্যা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

দ্বিতীয় যে সমস্যায় বাংলাদেশ জর্জরিত হয়ে পড়েছিল তা হল দুর্নীতি। শুধু দুর্নীতি বললে হয়তো কিছুটা কমই বলা হবে— আসলে পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি কথাটা বলাই বোধহয় ভালো। এটা কমানো আপেক্ষাকৃত সহজ। কিন্তু এই বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে সেটা দেখার। কারণ এ কাজ সহজ নয়। বিশেষত যাদের দিয়ে দুর্নীতি দমন করানো হয় তারা সে কাজ কতটা দ্রুততা ও সততার সঙ্গে করবে, সে ব্যাপারে অতীত অভিজ্ঞতা যে খুব ভালো নয়, তা সবারই জানা।

যে কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া কিন্তু বাংলাদেশে নতুন নয়। রাজনৈতিক নেতা বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লিগ সরকারের আমলেও হত্যা মামলা দেওয়া হত। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংখ্যাটা অনেক বেশি বেড়েছে। মুখে মুখে কিন্তু সেইসব লোকের সম্বন্ধে দুর্নীতি এবং বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জনের এবং আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির কথা ফেরে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বদলে দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলা। ফলে তারা এখন কারাগারে। অতীতেও অর্থাৎ আওয়ামী লিগ সরকারের সময় তাদের বিরোধীদের হঠাৎ হঠাৎ কিডন্যাপ করে রাষ্ট্র ক্ষমতার আওতাধীন স্থানে দিনের পর দিন বন্দি রাখার কথা এখন সামনে আসছে। শুধু বন্দি করে রাখা নয়— সেই আয়না ঘরে তাদের ওপর অত্যাচারের কথাও প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি, বেআইনি সম্পত্তি করা বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দোষে দুষ্ট ব্যাপক সংখ্যক আওয়ামী লিগ নেতা বা সাংবাদিক তথা বুদ্ধিজীবীকে কোনও না কোনও ভারী মামলায় জড়িয়ে জেলে ঢোকানোর বিষয়টা আন্তর্জাতিক মহলে কতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, সেটা যথেষ্ট চিন্তার। এর মধ্যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার ভলকার টার্ক বাংলাদেশে সংক্ষিপ্ত সফর করেছেন। সফরে তিনি সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের প্রশংসা করেছেন, সেদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হত তার উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক আইন প্রত্যাহারের কথাও বলেছেন যার মধ্যে স্বাধীন মত প্রকাশের পরিপন্থী সাইবার আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে নিহতদের হত্যাকারীদের বিচারের প্রয়োজনের কথাও ভলকার টার্ক উল্লেখ করেছেন। আয়নাঘরের কথা উল্লেখ করে টার্ক বলেছেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়। সেই সঙ্গে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে আওয়ামী লিগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে যে ফৌজদারি মামলা দেওয়া হচ্ছে, তা কোনওমতেই ঠিক নয়। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অযথা হত্যা মামলা দেবার যে পূর্বতন ধারা এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও দেখা গেল, তা একেবারেই কাম্য নয়। হত্যা মামলা দেবার আগে যে একটা প্রাথমিক তদন্ত ও তথ্য প্রমাণের প্রয়োজন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান সেকথাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেন। তাঁর কথায় যেমন ছাত্রদের আন্দোলন, পূর্বতন সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং স্বাধীন মত প্রকাশের পরিস্থিতি না থাকা— সেসবের মান্যতা রয়েছে; তেমনই বর্তমানেও যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং বিশেষ করে কারণ ছাড়াই সাংবাদিক ও আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে অযথা হত্যা মামলা দেওয়া যে সঠিক কাজ নয়, তাও তিনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তব্যে। কিন্তু অতীতের সমস্যার যেমন উল্লেখ আছে, তেমনই ভবিষ্যতেও তার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে। সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রসঙ্ঘে কোনও উচ্চ পদাধিকারীর এটাই সেদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে এক যথার্থ বিশ্লেষণ। এখন দেখার বিষয় এই অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে কতটা তৎপর, সচেষ্ট এবং সক্ষম হবে।

টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিগত জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভকে ঘিরে প্রায় তিন হাজারের বেশি পুলিশকর্মী এবং প্রায় সা্ড়ে ছ’শো ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এর প্রভাব নিঃসন্দেহে দেশের পুলিশি ব্যবস্থার ওপর পড়েছে। এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসতে অনেকটাই দেরি হয়েছে এবং সেনাবাহিনীকে পুলিশের কাজ করতে হয়েছে। তবে এইসব হত্যার বিচার হবে বলে জানানো হয়েছে।

সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান— সকলের সংখ্যাই ক্রমান্বয়ে কমছে। আর যেহেতু দেখা যায় মূলত সংখ্যালঘুরা বা হিন্দুরা আওয়ামী লিগের সমর্থক তাই অন্য দলগুলির হয়তো সংখ্যালঘুদের ততটা সদয় নয়। তবে আওয়ামী লিগ শাসনেও সংখ্যালঘুরা ঠিক কতটা নিরাপদ বা কতটা স্বাধীন ছিলেন, তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তবে এবারে সরকার বদলের পর বেশ কয়েক জায়গায় সনাতনী বা হিন্দুরা জমায়েত করে তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। সম্প্রতি জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়েছে বলে চট্টগ্রামের এক স্থানীয় বিএনপি নেতা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনেন চট্টগ্রামের ইসকনের পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ সহ ১১ জন সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে। পুলিশ দু’জন তরুণকে গ্রেপ্তার করে ৩০ অক্টোবর। এর ফলে চট্টগ্রাম সহ দেশের সব জেলাতেই সনাতন জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এর চেয়েও বড় কথা, আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং সেদেশের আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে সমস্ত ধর্মের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা করে তাঁর ব্যক্তিগত এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশ নিয়ে পূর্বতন বাইডেন সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে কিন্তু বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুক্ত থাকা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নিযুক্তিতে আমেরিকার মদতের যে কথা চালু আছে, তাকেই আরও মান্যতা দিল। সেই সঙ্গে আমেরিকায় ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার নীতি কী হবে, তারও সুস্পষ্ট একটা আভাস পাওয়া গেল। অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে তিনি বাংলাদেশের বিষয় তাঁর পূর্বসূরী বাইডেনের নীতি কতটা একইরকম ভাবে মেনে চলবেন, তা নিয়েও একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, ভারতীয় বংশদ্ভূত বলে বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভারতীয় বিদেশনীতির কোনও প্রভাব থাকবে কিনা, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটা ভবিষ্যতের কথা, তাই এর উত্তর দেবে সময়।

তবে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আমেরিকা সফর কবে এলেন। সেনাপ্রধান বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মানে তাঁর পদের গুরুত্ব যথেষ্ট। তার এই মুহূর্তে তাঁর ভূমিকার ওপর নজর রাখছে গোটা পৃথিবী। তাই নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাস শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের আমেরিকা সফর যথেষ্ট আগ্রহ জাগিয়ে তুলেছে। সেখানে সেনাপ্রধানের সঙ্গে কী কথা হলো, তা জানতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনে তিনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার জন্য।

বাংলাদেশ নিয়ে কোনও নিবন্ধই সম্পূর্ণ হবে না ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়টির উল্লেখ না থাকলে। একটা বিষয় পরিষ্কার, ভারত এখন পর্যবেক্ষকের ভূমিকায়। সেদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে রয়েছেন ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে। তাই বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা যে বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। তবে ভারত বিরোধিতার চোরা স্রোত আওয়ামী লিগ আমলেও যে ছিল না, তা বলা যাবে না। আবার ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী। ভারত থেকে আমদানি রপ্তানি শুধু বাংলাদেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, অর্থনীতির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ তা নয়— বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের দাম নিয়ন্ত্রণেও ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের একটা বড় ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপরও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ নির্ভর করে। আদানিদের টাকা বাকি থাকায় তারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ রপ্তানি কমিয়েছে বলে খবর। ভারতের কাছে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশের মাটি ভারতবিরোধী সন্ত্রাসমূলক কাজে ব্যবহার হবে কিনা? যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে কার্যত বন্ধ হলেও আগের বিএনপি সরকারের সময় যে ছিল, তা সকলেরই জানা। দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন যে কথাটা উঠে আসছে তা হল, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কটা ক্রমেই ভারত-আওয়ামী লিগ সম্পর্কে পর্যবসিত হয়েছিল। এখন হয়তো এটা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের যে কোনও ধরনের সঙ্কট বাড়লে তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে পড়বে। এখন দেখার বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হয়, তাতে কী ধরনের সরকার স্থাপিত হয়। অথবা, তার আগে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে গড়ায়।