সুনীত রায়
আমি একটা ছোট্ট দেশলাই কাঠি, এত নগণ্য হয়তো চোখেও পড়ি না, তবু জেনো মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ, বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস, আমি একটা দেশলাই কাঠি…. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের দেশলাই কাঠি কবিতাটি কারোর অজানা নয়। এই দেশলাই কাঠির মত অত্যন্ত সাধারণ পদার্থ হলো গ্রাফাইট। এটি একটি কার্বনের রূপভেদ। কার্বনের আরেকটি রূপভেদ হলো হিরে। হিরে যেমন অত্যন্ত মূল্যবান, গ্রাফাইট আবার ততটাই মূল্যহীন। কিন্তু সাধারণ, মূল্যহীন গ্রাফাইট থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এমনই এক পদার্থ যা বর্তমান বিজ্ঞান প্রযুক্তির জগতে একটা বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষের চুলের ১০ লক্ষ ভাগে এক ভাগের মত পাতলা, স্বচ্ছ আর নমনীয়। কিন্তু এর শক্তি স্টিলের থেকে ২০০ গুণ বেশি। এতই অভেদ্য যে বিশ্বের সবথেকে ছোট উপাদান হিলিয়াম কণাও একে ভেদ করে যেতে পারে না। তামার থেকে অনেক গুণ বেশি বিদ্যুৎ পরিবহন করার ক্ষমতা আবার হীরের থেকেও বেশি তাপ সঞ্চালন করার ক্ষমতা। বিদ্যুৎ অপরিবাহী হিসেবে এতদিন জেনে এসেছি যাকে, সেই প্লাস্টিকের সাথে যদি এক শতাংশের মতন মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে প্লাস্টিকও হয়ে উঠবে বিদ্যুৎ পরিবাহী। সাধারণত উত্তপ্ত করলে যে কোন উপাদান আয়তনে বৃদ্ধি পায় আর ঠান্ডায় আয়তন হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টো। উত্তপ্ত করলে আয়তন হ্রাস পায় আর ঠান্ডা করলে আয়তন বৃদ্ধি পায়। জলের মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে পচে নষ্ট হয়ে যায় না আবার মরচেও ধরে না। এতসব অদ্ভুত গুণের অধিকারী, ন্যানোলেভেলের এই পদার্থটির নাম গ্রাফিন। এটিকে মাটির মধ্যে পুঁতে দিলে ধীরে ধীরে মাটির সঙ্গে মিশে বিলিন হয়ে যায় অর্থাৎ কোন প্রকার পরিবেশ দূষণ করে না।
জার্মান রসায়নবিজ্ঞানী হানজ পিটার বুম,গ্রাফাইট থেকে এর উৎপত্তি বলে এটির নামকরণ করেন গ্রাফিন। গ্রাফিনের পাতলা স্তর গুলি যদি একটার উপর একটা পর পর সাজানো হয় তাহলেই তৈরি হবে ত্রিমাত্রিক রূপভেদ গ্রাফাইট। গ্রাফিন হল ষড়ভুজাকৃতি একটা বিশাল কার্বনের জালিকা। জালিকাটির পুরুত্ব হল একটি কার্বন অনুর পুরুত্বের সমান, সেটা হলো ০.০৯১৪ ন্যানোমিটার। এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ হলো এক ন্যানোমিটার। এই অসাধারণ পাতলা বস্তুটি বিশ্বে একমাত্র দ্বিমাত্রিক পদার্থ হিসেবে পরিচিত। দ্বিমাত্রিক গ্রাফিনে ইলেকট্রনের গতিবিধি মাত্র একটা দিকেই সীমাবদ্ধ। তাই বিদ্যুৎ পরিবহন করার ক্ষমতা তামার থেকে কয়েক লক্ষ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এক গ্রামেরও কম ভরের জালিকা দিয়ে একটা ফুটবল মাঠ ঢেকে দেওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় গ্রাফিন এতটাই হালকা যে ১ সেন্টিমিটার লম্বা আর এক সেন্টিমিটার চওড়া গ্রাফিন এরোজেলের ভর প্রায় ০. ১৬ মিলিগ্রাম। এটিকে একটা ফুলের ওপর অনায়াসে বসিয়ে রাখা যায়।
আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডের বড়ডেল উপত্যকায় রাখালেরা প্রথম গ্রাফাইটের সন্ধান পায়। এটি হাতে ধরলেই হাত কালো হয়ে যেত কিন্তু পাথরের উপর খুব ভালোভাবে দাগ কাটা যেত। তখন রাখালেরা ভেড়া গোনার কাজে এটিকে ব্যবহার করত। তারপর আস্তে আস্তে গ্রাফাইট পেন্সিলের মাধ্যমে মানব সমাজে জ্ঞানের লৈখিক প্রকাশে প্রকাশিত হলো। গ্রাফিন সম্বন্ধে প্রথম ধারণা হয় ১৮৫৯ সালে। তারপর থেকে বহু বছর নিরলস গবেষণা চলতে থাকে, কিভাবে গ্রাফাইটের ভেতর থেকে গ্রাফিনকে আলাদা করা যায়। যে যুক্তরাজ্যে প্রথম গ্রাফাইট সম্বন্ধে ধারণা হয়, আর সেই যুক্তরাজ্যেই ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হলো সেই যুগান্তকারী পদার্থ- গ্রাফিন। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় দুই প্রথিতযশা বিজ্ঞানী আন্দ্রে গেইম আর কনস্ট্যান্টিন নভোসেলভ প্রথমবারের মতো গ্রাফিনকে গ্রাফাইট থেকে পৃথক করতে সক্ষম হন।
গ্রাফিন আবিষ্কারের পিছনে একটা মজাদার গল্প লুকিয়ে আছে। বিজ্ঞানী নভোসেলভ আর বিজ্ঞানী গেইম প্রায় প্রতি শুক্রবার রাতে এমন কিছু বিষয়ের উপর গবেষণা নিয়ে আলোচনা করতেন যা তাদের দৈনন্দিন গবেষণার কাজের সঙ্গে কোনোই সম্পর্ক নেই। এইরকম এক সন্ধ্যায় কিছু একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে করতে যতবার পেন্সিল দিয়ে কাগজে কিছু লিখতে যাচ্ছিলেন তখনই সেটা বারবার করে ভেঙে যাচ্ছিল। অবশেষে হতাশ হয়ে আলোচনা বন্ধ করে ভাঙ্গা পেন্সিলের টুকরোগুলো পাউডারের মতো গুঁড়ো করে স্বচ্ছ সেলোফেন স্কচ টেপের মধ্যে রেখে একের পর এক ভাজ করতে লাগলেন। তার ফলে গ্রাফাইটের পাউডার থেকে কার্বনের কিছু স্তর (ফ্লেকস)আলাদা করতে সক্ষম হলেন। লক্ষ্য করলেন প্রথমদিকে স্তরগুলির থেকে পরের দিকের স্তরগুলি ক্রমশ পাতলা হতে শুরু হয়েছে। এইভাবে এমন একটা স্তর আলাদা করে ফেললেন যেটি মাত্র একটি কার্বন পরমাণুর সমান পুরু। ব্যাস,পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্দ্রে ও নভোসেলভ গ্রাফিন আবিষ্কার করে ফেললেন। বাকিটা তো ইতিহাস। ২০১০ সালে এই দুই বিজ্ঞানী পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন। এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দিয়ে শুরু হলো বিজ্ঞানের এক নব্য প্রগতির যাত্রা।
গ্রাফিনের বহুমুখী উপযোগিতার কথা শুনলে অবাক হয়ে যেতে হবে।
মোবাইল ফোন থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি কয়েক মিনিটের মধ্যে রিচার্জ হয়ে যাবে। গ্রাফিনের তৈরি ব্যাটারি এতটা হালকা আর নমনীয় যে জামা কাপড়ের সঙ্গে সেলাই করে খুব সহজে বহন করা সম্ভব। সৈনিকদের ইউনিফর্মে এরকম দীর্ঘস্থায়ী হালকা আর নমনীয় ব্যাটারি বসিয়ে দিতে পারলে ভারী জিনিসের তালিকা থেকে প্রায় ৮ কেজি ওজনের ব্যাটারির ওজন খুব সহজে বাদ দেওয়া যাবে। গ্রাফিনের সাহায্যে উইনড মিল আর সৌর প্যানেল গুলির মধ্যে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
গ্রাফিন বিজ্ঞানীদের মাইক্রোমিটার (১০০০ মাইক্রোমিটার= ১ মিলিমিটার ) আকারের সেন্সর তৈরি করতে সাহায্য করছে। তার ফলে কোন কিছুর মধ্যে অনু- পরমাণু পর্যায়ের সামান্য পরিবর্তন হলে খুব সহজে শনাক্ত করা যাবে। পচনশীল খাদ্যের অনেকদিন সংরক্ষণ আর মানের অবনমন সহজে খুঁজে বের করা, রাসায়নিক যুদ্ধের মোকাবিলা, কৃষি ক্ষেত্রে যে কোন ক্ষতিকর গ্যাসের সামান্য থেকে সামান্যতম উপস্থিতি চাষীদের জানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রকম কাজে গ্রাফিন সেন্সর কাজে লাগতে পারে।
গ্রাফিনের কল্যাণে বিজ্ঞানীরা এখন স্মার্ট ফোনকে ঘড়ির মতো কব্জিতে নিয়ে আসা কিংবা ট্যাবলেট জাতীয় ডিভাইস গুলোকে কাগজের পত্রিকার মত ভাঁজ করে রাখার কথা চিন্তা করছেন। ইলেকট্রনিক্স শিল্পে এর যথেষ্ট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। গ্রাফিন দিয়ে তৈরি যে কোন যন্ত্রটি হবে খুব পাতলা,স্বচ্ছ আর মজবুত। হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলে ভাঙবে না জলে নষ্ট হবে না আর মরচেও পড়বে না। ইতিমধ্যে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গ্রাফিন দিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ট্রানজিস্টার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। মাইক্রোচিপস তৈরি করতে সিলিকনের বদলে গ্রাফিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তার ফলে মাইক্রোচিপসের ক্ষমতা সিলিকনের থেকে দশগুণ বেড়ে যাবে। বর্তমানে মাইক্রোচিপসের প্রধান সমস্যা হলো তাপমাত্রা। যত তাড়াতাড়ি গরম হবে তত তাড়াতাড়ি তার কর্মক্ষমতা কমে যাবে। তাই তাপমাত্রা কম রাখাটা খুবই জরুরী। মাইক্রোচিপস গুলিতে গ্রাফিন ব্যবহার করলে তাপমাত্রা সহজে বাড়বে না কারণ এটা অত্যন্ত সুপরিবাহী। সেমিকন্ডাক্টর দুনিয়ায় দীর্ঘদিন রাজত্ব করে আসা সিলিকনের বিদায় ঘন্টা বাজার সময় মনে হয় শুরু হয়ে গেছে। এবার সিলিকনকে খুব শিগগিরই রাজ্য আর রাজত্ব গ্রাফিনের হাতে তুলে দিতে হবে।
২০১৭ সালে ৩রা এপ্রিল বিখ্যাত বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা নেচারে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে দেখা গেছে ডক্টর রাহুল নায়ারের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এমন এক ধরনের জালিকা তৈরি করেছেন যার সাহায্যে সমুদ্রের লবণাক্ত জল থেকে লবণ আলাদা করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জালিকাটি তৈরি হয়েছে গ্রাফিন অক্সাইড দিয়ে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। যদি তিন ভাগ সমুদ্রের অফুরন্ত লবণাক্ত জল থেকে পানীয় জল তৈরি করা সম্ভব হয় – তাহলে জাতিসংঘের মতে ২০২৫ সালে ১৪ শতাংশ মানুষ পানীয় জলের সংকটে পড়বে, এই ভবিষ্যৎবাণী ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হবে।
গ্রাফিন ন্যানোপাটিকেল চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ক্যান্সার কোষের ধ্বংস থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যেখানে সাধারন ভাবে অপারেশন অসম্ভব – সেসব জায়গায় গ্রাফিন ন্যানোপার্টিকেলের অবাধ যাতায়াত। গ্রাফিন যেহেতু খুব পাতলা আর কার্বন দিয়ে তৈরি, তাই মানবদেহের টিস্যু প্রযুক্তিতে কাজে লাগানো যেতে পারে। কৃত্রিম হাড় কিংবা পেশি তৈরিতেও কাজে লাগবে। এক কথায় চিকিৎসা সেবায় গ্রাফিনের অবদান অসামান্য।
গ্রাফিন অক্সাইড মেমব্রেন ফিল্টারের সাহায্যে খুব সহজে যেকোনো ধরনের নোংরা জলকে পরিশোধন করে পানীয় জলের উপযোগী করা যায়। জলের মধ্যে কোন তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকলে তা সহজেই পৃথকিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে। সমুদ্রের জলে ছড়িয়ে থাকা তেল আলাদা করা সম্ভব হবে। ভারতবর্ষের প্রায় ১০-১২ হাজার তৈলকূপ পরিত্যক্ত, কারণ পেট্রোলের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত জলের উৎপাদন। গ্রাফিন মেমব্রেন পদ্ধতির সাহায্যে তেল আর জল খুব সহজেই আলাদা করা সম্ভব হবে। এই সমস্যার সমাধান হলে পেট্রোলিয়ামের উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাবে। শিল্প কারখানা থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ আজও একটা বিরাট প্রশ্নবোধক জিজ্ঞাসা। এই অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারবে গ্রাফিন।
খেলাধুলার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীর বিখ্যাত ডাচ কোম্পানি হেড ২০১৩ সাল থেকে গ্রাফিন দিয়ে টেনিস ৱ্যাকেট তৈরি করছে আর এই বিশেষ প্রযুক্তি বাজারে আসার সাথে সাথে সাফল্য দেখা দিতে শুরু হয়েছে। আন্ডি মারে, নোভাক জাকোভিচের সাম্প্রতিককালে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে ধরার আগে ছিল গ্রাফিন দিয়ে তৈরি ৱ্যাকেটের জাদু। শুধু টেনিসিই নয় গ্রাফিনের জাদু ভেলকি স্কি থেকে শুরু করে ফর্মুলা ওয়ান পর্যন্ত কিভাবে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু হয়েছে – সেটা দেখাই এখন সময়ের অপেক্ষা।
নির্মাণ শিল্পে গ্রাফিনের এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বাড়ির রংয়ের সঙ্গে গ্রাফিন মিশিয়ে রং করলে – রং ফিকে হবে না,বাড়িতে জল বসবে না, লোহায় মরচে ধরবে না। তাছাড়া বিদ্যুৎ সুপরিবাহী,তাপ শোষণ ও সংরক্ষণ করার ক্ষমতা থাকার জন্য সৌরশক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে সারা বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে, যার ফলে সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই হবে পরিবেশ বান্ধব। ঘরের যে কোন জায়গায় বসে টিভি, কম্পিউটার বা যে কোনো ইলেকট্রিক্যাল গ্যাজেট ব্যবহার করতে কোন অসুবিধা হবে না।
পরিবহনশিল্পেও আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে চলেছে গ্রাফিন। গ্রাফিনের সাহায্যে গাড়ি,এরোপ্লেন অদূর ভবিষ্যতে তৈরি করা সম্ভব হবে। এগুলি হবে মজবুত অথচ হালকা। এদের কাঠামোটিই হবে একটা ব্যাটারি। সৌরশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই গাড়িগুলি চলবে আর ব্যাটারি চার্জ ফুরিয়ে গেলে নিজে থেকে মুহূর্তের মধ্যে চার্জিং করে ফেলবে। বর্তমানে পেট্রোল বা গ্যাস চালিত গাড়ি গুলি mপরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ। অটোমোবাইল শিল্পে গ্রাফিনের ব্যবহার শুরু হলে জ্বালানি থেকে দূষণ বন্ধ হয়ে যাবে।
যেকোনো প্রকার হেডফোন, মাইক্রোফোন,স্পিকার সর্বত্র গ্রাফিনের পাতলা চাদর দিয়ে ডায়াফ্রাম তৈরি করতে পারলে আওয়াজ এর গুণমান কয়েকশো গুন শ্রুতিমধুর হবে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তৈরি করলে তা এতো স্বচ্ছ, নমনীয়,পাতলা আর হালকা হবে যে সাধারণ পোশাকের ওপর পড়লে বোঝাই যাবে না যে ব্যক্তিটি বুলেটপ্রুফ জামা পড়েছে।
গ্রাফিনের ব্যবহার সর্বত্র। বিমানের কাঠামো,পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে মহাশূন্যে পর্যন্ত গ্রাফিনের প্রয়োগ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবনা চিন্তা করে চলেছেন। শুধুমাত্র গ্রাফিন আর গ্রাফিনের মত স্বজাতিদের ওপর গবেষণা করার জন্য ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যাশনাল গ্রাফিন ইনস্টিটিউট।
গ্রাফিনের চাহিদা ব্যবসায়িক শিল্পের বাজারে ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৪ সালে ৯০ লক্ষ ডলারের ব্যবসা সারা বিশ্বে হয়েছিল। অনুমান করা হচ্ছে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে গ্রাফিনের ব্যবহার এতটাই বাড়বে, তখন ব্যবসার পরিমাণ বেড়ে হবে ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। টেসলা তাদের বৈদ্যুতিক গাড়িতে লিথিয়ামের বদলে গ্রাফিনের ব্যবহারের কথা ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। সারাবিশ্বে মাইক্রোচিপ্স গবেষণায় তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সমগ্র বিশ্বের বিজ্ঞান জগত এই শতাব্দীর বিস্ময়কর আবিষ্কার গ্রাফিনকে নিয়ে মাতোয়ারা। ভবিষ্যৎ সভ্যতার ইতিহাস লেখার সময় যেসব পদার্থের নাম মানুষের মুখোমুখি ঘুরবে – সেখানে যে গ্রাফিন থাকবে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ভাবতেও অবাক লাগে ছোট্ট একটা সাধারণ পেন্সিলের গ্রাফাইটের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার আলোকবর্তিকা। এক লাফে পৃথিবী তথা মানবজাতি এগিয়ে যাবে শত সহস্র যোজন দূরে অপেক্ষমান ভবিষ্যতের প্রযুক্তি আর প্রগতির কাছে। গ্রাফিন হলো এমন একটা উপাদান যা কল্পবিজ্ঞানে কল্পনার বাস্তব রূপায়ণের একমাত্র রূপকার।