• facebook
  • twitter
Monday, 23 December, 2024

অস্তিত্বরক্ষার সংগ্রাম

প্রথাগত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মতে দেশের সাধারণ নির্বাচন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনগুলির সম্মিলিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (Photo: iStock)

প্রথাগত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ মতে দেশের সাধারণ নির্বাচন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনগুলির সম্মিলিত ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না। বিপরীতভাবে, আদর্শবাদ, ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন রাজ্যের প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক দলগুলির রাজনৈতিক কর্মসূচি, বিশেষত বৃহত্তম রাজ্যে যেখানে লােকসভা ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা বেশি, সেখানে জাতীয় পর্যালােচনার নিরিখে তা অতিরঞ্জিত হতে বাধ্য।

এঘটনা জাতীয় দল এবং বৃহত্তম আঞ্চলিক দলগুলির ক্ষেত্রে ঘটে থাকে যারা কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের অংশীদারিত্ব দাবি করার মতাে অবস্থায় থাকে। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ঘােষণার আগেই বাম-কংগ্রেস ও মুসলিম ধর্মীয় নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট এর ক্ষেত্রে পর্যালােচনার বিষয়টি প্রযােজ্য কিনা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।

তিন জোটের যৌথভাবে ব্রিগেডের সভায় আব্বাস সিদ্দিকী একবারও জোটের অন্যতম জাতীয় দল কংগ্রেসের নাম পর্যন্ত করেননি তার বক্তৃতায়। অথচ আৰ্বাস সিদ্দিকীকে জাতীয় স্তরে কেউ চেনেই না।

এমনকী স্পর্ধার সঙ্গে বক্তৃতার মধ্যেই বলেছেন, আমি কেন জোটের একটি দলের নাম করছি না একথা যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন তবে বলব, তাদের নেতাদের বামফ্রন্টের নেতা বিমানদার (বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান) মতাে বুদ্ধি পাকা হয়নি। বিমানদা এবং মহ. সেলিমকে ধন্যবাদ তাদের জন্যই আমি ত্রিশটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সুযােগ পেয়েছি।

কিন্তু সিদ্দিকী তার দলের নীতি আদর্শের বিষয়ে কোনও কথা না বলেই নিজেকে রাজনৈতিক পাকা মাথা হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। এমনকী সমাবেশের পর সাংবাদিক সম্মেলনেও সিদ্দিকী কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সমালােচনার তীব্রতা কোনও অংশে কম করেননি।

সাংবাদিকরা সিদ্দিকীকে কংগ্রেসের সমালােচনার জন্য দল যদি মুশিদাবাদে ও মালদায় কোনও আসন না ছেড়ে দেয় তবে তিনি কি করবেন এই প্রশ্নের উত্তরে সিদ্দিকী জানান, বামেদের সঙ্গে সমঝােতার আসন ব্যতীত সকল আসনেই সেক্ষেত্রে ইএসএফ প্রার্থী দেবে। অন্যদিকে বিজেপির ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তার নিরিখে বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস মুসলিম দলগুলির সঙ্গে জোট করে বিধানসভা ভােটে লড়াইয়ের ছক তৈরি করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে আইএসএফ-এআইএমএম, কেরলে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ, অসমে বদরুদ্দিন আজমল নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ এর সঙ্গে জোট করে ভােটে অবতীর্ণ হয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই কিন্তু মুসলিম দলগুলি তাদের স্বার্থের অগ্রাধিকার বিষয়ে দ্বৰ্থহীন ভাষায় বক্তব্য প্রকাশ করেছে।

এর ফলে বিজেপি তাদের জাতীয় তথা প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করবে? কারণ নির্বাচনে জেতার জন্য এমন নেংরা খেলায় নেমেছে যে তার প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমতে বাধ্য। অন্যদিকে বাম দলগুলি আঞ্চলিক চরিত্র নিয়ে এবং কেন্দ্রের সঙ্গে আপস নীতি নিয়ে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছে, এটাই তাদের চরিত্র।

২০২১ তে রাম, ২০২৬ বাম’ এই নীতিতে পশ্চিমবঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে তারা। এমনকী ত্রিপুরাতেও তারা এমন সুযােগের অপেক্ষায় রয়েছে। কেরলে যেকোনও উপায়ে ক্ষমতা দখল করে রাখাই এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য। কংগ্রেসের এখন নিজেদের ক্রমহ্রাসমান জনপ্রিয়তাকে প্রতিরােধ করাই একমাত্র কাজ।

তবে কংগ্রেসকে সিদ্দিকীদের বিষয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ সিদ্দিকীরা তাদের স্বার্থের জন্য পরবর্তীতে যেকোনও দলের বিরুদ্ধেই বিষােদ্গার করতে দ্বিধা করবে না বা জোট ভেঙে দিতে কসুর করবে না।