২০২০ সালের গােড়ায় যখন কোভিড সংক্রমণ শুরু হল তখনই সরকারিভাবে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার ফরমান জারি করা হয়। প্রায় দু’বছর পর আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে পঠন পাঠন।
এর মধ্যে আবার সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি কোভিডের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে বিশেষভাবে মহিলা ও শিশুদের সতর্কিত থাকার রিপাের্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি অনির্দিষ্টকাল বন্ধ থাকার ফলে সামাজিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংসদীয় কমিটির পক্ষে আরও জানানাে হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিশু শ্রমিক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহের প্রবণতা বাড়ছে।
সংসদীয় কমিটি তার রিপাের্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি অবিলম্বে চালু করার সওয়াল করে জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকার ফলে পরিবারে নঞর্থক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। পড়াশােনা বন্ধ থাকায় অলস মস্তিস্ককে কর্মক্ষম করতে শিশু বিবাহ বাড়ছে ও শিশু শ্রমিকের কাজে নিয়ােগ করা হচ্ছে।
করােনার প্রভাবে দুই বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার হার কোভিড়ের পূর্বের অবস্থার থেকে আরও নিম্নগামী হচ্ছে বলে কমিটির রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুদের মধ্যে কোনও সদর্থক চিন্তারই উন্মেষ ঘটছে না। বরং ক্লিপ মনােভাবের সৃষ্টি হচ্ছে।
সংসদীয় কমিটির রিপাের্টকে সমর্থন করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউট সমীক্ষায় জানিয়েছে, শিক্ষা তথা লেখাপড়ার অগ্রগতি বন্ধ থাকার ফলে বিশেষত প্রাথমিক পড়ুয়া যারা মধ্য আয়ের পরিবারে সদস্য তাদের শিক্ষা একেবারেই বন্ধ হয়েছে। কারণ তাদের কাছে মােবাইলে পঠন পাঠন চালানাের রসদই নেই।
ফলে পড়াশুনাের ক্ষেত্রেও চরম অসাম্য ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংস্থাটি বছরের গােড়ার দিকে দেশের বেশি সংখ্যক জন অধ্যুষিত শহরের মধ্যে পঞ্চম স্থানে থাকা চেন্নাইতে এই সমীক্ষা চালায়। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিতে পঠন পাঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তির ব্যবহারে ব্যাপারে ফারাকের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনার পূর্ব ও করােনাকালের তুলনামূলক সমীক্ষায় এই পার্থক্য ধরা পড়েছে। এমনকী কন্যা শিক্ষার্থী ও পুত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যেও পার্থক্য ব্যাপক আকার নিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত একজন যে বিদ্যালয়ে বন্ধের সময়ে অনলাইনে পঠন পাঠনের প্রস্তাব দেয়নি তেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হয়েছে।
এমনকী যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করােনার কারণে বন্ধ থাকার সময়ে অনলাইনে পঠন পাঠনের ব্যবস্থা করা হয় সেখানেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাতে যােগদান করতে অনীহা প্রকাশ করে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বন্ধের সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আর্থসামাজিক সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে এমন এবং ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশােনার ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে সড়গড় তাদের থেকে অপেক্ষাকৃত আর্থসামাজিক অসুবিধাজনক অবস্থার শিক্ষার্থীদের মধ্যে পঠন পাঠন নিয়ে ব্যাপক ফারাক পরিলক্ষিত হয়।
এর ফলে শুধু যে শিক্ষার ক্ষেত্রেই ক্ষতি হয়েছে তাই নয়, শিক্ষার্থীদের মানসিকতাতেও ব্যাপক পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোভিডের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না। কারণ এতে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারত ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
রাজধানী দিল্লিতে আংশিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার সরকারি নির্দেশ জারি হয়েছে। উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, কর্নাটক, তামিলনাড়ু , রাজস্থান, মহারাষ্ট্র এবং বিহার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খােলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ১২-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রতিষেধক দেওয়া আবশ্যিক করতে হবে বলে সরকারিভাবে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।