বাংলার মানুষ মনে করেন, ক্ষমতাসীন দল কর্মসংস্থানকেই সর্বাধিক গুরত্ব দিক। সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষিত বেকার যূবক-যুবতীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।যত সংখ্যায় তারা শিক্ষা সমাপ্ত করে বের হচ্ছেন, তত সংখ্যায় চাকরির সুযোগ মিলছেনা। স্বাভাবিকভাবেই তাদের মনে একটা হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও রাজ্য সরকার গত সাত-আট বছরে প্রচুর সংখ্যায় বেকারদের চাকরি দিয়েছে বলে দাবি, কিন্তু এখনও কর্মহীন যারা তাদের স্নখ্যাই বেশি। তারা দিশাহীন।
এই মূহূর্তে এই রাজ্যে বেকারের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই শ্রম দফতরের কাছে। কিন্তু বেকারত্ব যে দিন দিন বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে তা এই দফতরের আধিকারিকরা স্বীকার ক্রেন।যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বলেছিলেন, আগামী পাঁচ বছরে তাঁর সরকার কর্মসংস্থান সৃষ্টিকেই অগ্রাধিকার দেবে। মনে হয় উনি তা বলেছিলেন এই কথা ভেবেই যে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন হ্যেছে-এখন বেকারদের মুখে হাসি ফোটানোই হবে প্রধান লক্ষ্য।
সরকারি শূন্যপদ সীমিত। সুতরাং বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান আর বেশি করে সৃষ্টি না হলে সমস্যার কিনারা সম্ভব নয়।বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে তখনই যখন ভারী শিল্পের প্রসার ঘটে অর্থাৎ ভারী শিল্পে বেশি করে বিনিয়োগ হ্য।গত কয়েক বছরে ভারী শিল্প যা এসেছে তা যথেষ্ট নয়, যদিও প্রতি বছরই একের অধিক বার শিল্পপতিদের সম্মেলন করে উদ্যোগকারীদের পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়। এপর্যন্ত প্রতি শিল্প সম্মেলনে দেশবিদেশের বহু শিল্পপতি এখানে লগ্নি করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু যতটা আশ্বাস, ততটা শিল্প আসেনি।এ বছরও শিল্প সম্মেলন সাফল্যলাভ করেছে। অনেক বিদেশি শিল্পপতি এখানে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব রেখে গেছেন।
কিন্তু তাঁরা যতটা বলেন, যতটা আগ্রহ দেখান, যতটা আশ্বাস দেন, পরবর্তী পর্যায়ে তা করে দেখান না।নইলে এ পর্যন্ত যতগুলি শিল্প সম্মেলন হয়েছে এবং তাতে দেশবিদেশের শিল্পপতিরা ভারী শিল্পের যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন, তার সিংহভাগ কার্যকরী হলে এখন পশ্চিমবঙ্গে ভারী শিল্প ভরে যেত এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হত। বেকার সমস্যাও এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত না।প্রতিটি শিল্প সম্মেলন শেষ হয় বড় বড় আশা দিয়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিরাশাই দেখা যায় বেশি।
এখন দেশময় নির্বাচনের প্রচার চলছে।বিভিন্ন দল, তাদের প্রার্থীরা, ভোটারদের প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন।মনে হয় ক্ষমতায় এলে তারা মানুষকে স্বর্গসুখ পাইয়ে দেবে।এত মাতামাতি হলেও সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এ রাজ্যের মানুষ কর্মসংস্থান, রাস্তাঘাটের সংরক্ষণ নির্মাণ এবং সম্প্রসারণকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।আর প্রাধান্য দিয়েছেন পানীয় জলের পর্যাপ্ত সরবরাহকে।
রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের ভোটদাতাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে,শিক্ষিত,উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ে উপযুক্ত চাকরি পেতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চাকরির বাজারে এত বড় সংকট যে, উচ্চশিক্ষিতরাও অত্যন্ত নীচু স্তরের পদের জন্য দরখাস্ত করে বসে আছেন। কারণ তাঁরা বলছেন, ঘরে বসে থাকার চেয়ে কিছু কাজ নিয়ে থাকা শ্রেয়। দুটি সংগঠনই এই সমীক্ষা চালিয়েছে: ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ এবং অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস। এই দুটি সংস্থাই তাদের রিপোর্টে বলেছে কৃষিঋণ,কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম, জল ও বায়ু দূষণ যে একটি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে তার উল্লেখ করেছেন।
এখন যে জিনিসটা ভোটারদের মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে তা হল, ভোটে জয়ী হওয়ার পর প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিভঙ্গ। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ প্রতিনিধি জয়ী হওয়ার পর আর কেন্দ্রমুখী হননা- ফলে নির্বাচন কেন্দ্রের উন্নয়নও সেভাবে চোখে পড়ে না।যাঁরা উন্নয়নের জন্য কাজ করেন, তাঁরাই আসল জনপ্রতিনিধি।