জামিন মিলল না সন্ন্যাসীর

চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। ফাইল চিত্র

এটা কি একটা কৌশল চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য জেলবন্দি করে রাখা বাংলাদেশের ‘অবৈধ তদারকি’ সরকারের? চট্টগ্রাম দায়রা আদালতে চরম অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনিভাবে তাঁর হয়ে সওয়াল করার জন্য কোনও আইনজীবীকে দাঁড়াতে না দেওয়া—যাকে ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ গর্হিত কাজ বলে অবিহিত করেছে। তাঁর হয়ে সওয়াল করার জন্য ৫১ জন আইনজীবীকে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে আদালত কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হল না। পুলিশ ও মৌলবাদীরা চক্রান্ত করে এই সন্ন্যাসী যাতে জামিন না পায় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা অবলম্বন করেছিল। ফলে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন মিলল না— সুতরাং তাঁকে জেলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কাটাতে হবে আরও একমাস। এর পরের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে জানুয়ারির ২ তারিখ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে সেদিনও কি কোনও আইনজীবী তাঁর জন্য সওয়াল করতে হাজির হতে পারবেন? কোনও আইনজীবী তাঁর পক্ষে না দাঁড়ালে বিচারক হয়তো আবার তাঁকে জেলবন্দি থাকার আদেশ দেবেন—এই কায়দায় সন্ন্যাসীকে শাস্তিস্বরূপ যতদিন জেলে রাখা যায় তা করবে ইউনূস সরকার।

আইনজীবী সহ অনেকের মনে প্রশ্ন, কেন পরবর্তী শুনানির দিন একমাস অন্তর করা হল? তার আগে করা যেত না? তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা ভয়ভীতি নিয়ে বাস করছেন। কারণ দু’জন আইনজীবীকে বেদম প্রহার করে তাঁদের প্রাণহানির স্তরে পৌঁছে দিয়েছে সরকার পক্ষের লোকেরা। তাঁদের মধ্যে একজন হাসপাতালে আইসিইউ’তে থেকে জীবন বাঁচানার জন্য লড়াই করছেন। অপরজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সরকারের অপর কদর্য কাজ হল যে দু’জন সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের জন্য জেলে খাবার নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদেরও পুলিশ আটক করেছে। এখন এই সন্ন্যাসী জেলের খাবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। আসলে বাংলাদেশের এই তদারকি সরকার চায় চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে যেনতেন প্রকারে জেলবন্দি করে রাখা, কারণ সরকারের ভয় তাঁকে ছেড়ে দিলে সরকারের অনেক কথা, জেলে তাঁর কষ্টার্জিত জীবনযাপনের কথা প্রকাশ্যে বলে দেবেন এবং সরকারের সমালোচনা করবেন, যা ইউনূস খানের সরকার চায় না।

কিন্তু এই মহম্মদ ইউনূসের সরকার কী চায়? ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরিয়ে এবং বৈরতা নিয়ে মহম্মদ ইউনূস কতদিন তাঁর এই উপদেষ্টার পদ আঁকড়ে থাকবেন? কারণ ভারতের ওপরে বাংলাদেশ অনেক ব্যাপারে নির্ভরশীল। আর্থিক দিক থেকে এবং ব্যবসাবাণিজ্যের ব্যাপারে ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের চলা কঠিন। দুই দেশের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়ে এই তদারকি সরকার কতদিন টিকতে পারবে? সুসম্পর্ক বজায় রাখতে না চাওয়ার একটি নিদর্শন ইতিমধ্যেই দেখা গেছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে বালাদেশের বিদেশ মন্ত্রক ডেকে পাঠিয়ে নানা বিষয় জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সর্বপ্রথম ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ওই দেশের মন্ত্রক ডেকে পাঠাল। এটা কি মহম্মদ ইউনূস সরকারের সুসম্পর্ক জিইয়ে রাখার কাজ?


জানা গেছে, আগরতলায় বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনারের অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় হাইকমিশনারকে বিদেশ মন্ত্রক ডেকে এই কাজের সমালোচনা করা হয়। এরপর বাংলাদেশের তদারকি সরকার আগরতলার অফিস বন্ধ করে দেয়—এই কাজও ঠিক নয় বলে ত্রিপুরা সরকার মনে করে। কারণ যারা এই কাজ করেছে, তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারপরেও কমিশনারের অফিস বন্ধ করে দেওয়া ঠিক কাজ নয়।

এদিকে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন, এক বিবৃতিতে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসই সাম্প্রতিক গণহত্যার ‘মূলচক্রী’। বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে সোমবার একটি সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকেও হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রাণে বাঁচতে গণভবন থেকে বের হয়ে ভারতে চলে আসেন। সশস্ত্র লোকদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল গণভবন আক্রমণ করতে। কিন্তু গণভবনের রক্ষীরা গুলি চালালে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। তিনি গুলি চালানোর নির্দেশ না দিয়ে গণভবন ছেড়ে বের হয়ে আসেন।

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে এসে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি গঠনমূলক এবং স্থিতিশীল সম্পর্ক চাই। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক বহুমুখী। একটি বিষয়ে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়।

এদিকে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি এবং সংঘাতময় পরিবেশের মধ্যেই দৌত্য করতে ঢাকায় যাবেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্ত্রি। আপাতত স্থির হয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিদেশ সচিব ঢাকায় যাবেন ওই দেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে। আলোচনায় প্রাধান্য পাবে বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয়। তবে বর্তমানে ঢাকায় তথা বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি চলছে, তার পরিবর্তন না হলে বিদেশ সচিব ঢাকায় নাও যেতে পারেন। যদি শেষ পর্যন্ত বিদেশ সচিবের ঢাকায় যায়ো হয়, তাহলে তিনি সে দেশে হিংসা বন্ধ করতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বলবেন ভারতের তরফে।

এদিকে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদ্শের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ওই বাংলায় হিন্দু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর চরম পীড়ন ও অত্যাচার চলছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবির প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেন, ভারত সরকার রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশে শান্তি সেনা পাঠানোর ব্যবস্থা করুক।