• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

গণতন্ত্রের বিপদ

গণতন্ত্র মানে শুধু নির্দিষ্ট সময়সীমা অন্তর ভোটগ্রহণ ও সরকার গড়া নয়৷ গণতন্ত্রের পরিধি আরও সুদূরপ্রসারিত৷ গণতন্ত্র মানে প্রতিটি নাগরিক সত্তার স্বাতন্ত্র্য৷ ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, ধর্মান্তরের স্বাধীনতা এবং কোনও ধর্মে বিশ্বাস না থাকারও স্বাধীনতা৷ গণতন্ত্র মানে স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় মতপ্রকাশ, সমালোচনা, বিরোধিতা ও ভিন্ন মত পোষণের অধিকার৷ গণতন্ত্র মানে খাদ্য, পোশাক, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি বাছাই করার

গণতন্ত্র মানে শুধু নির্দিষ্ট সময়সীমা অন্তর ভোটগ্রহণ ও সরকার গড়া নয়৷ গণতন্ত্রের পরিধি আরও সুদূরপ্রসারিত৷ গণতন্ত্র মানে প্রতিটি নাগরিক সত্তার স্বাতন্ত্র্য৷ ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, ধর্মান্তরের স্বাধীনতা এবং কোনও ধর্মে বিশ্বাস না থাকারও স্বাধীনতা৷ গণতন্ত্র মানে স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় মতপ্রকাশ, সমালোচনা, বিরোধিতা ও ভিন্ন মত পোষণের অধিকার৷ গণতন্ত্র মানে খাদ্য, পোশাক, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি বাছাই করার অধিকার৷ গণতন্ত্র মানে সব ধর্মের, জাতিগোষ্ঠীর, ভাষার, সংস্কৃতির মানুষের ঐতিহ্যকে বহন করে নিজেদের মতো করে বাঁচার অধিকার৷ এই হাজারো স্বাতন্ত্র্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সুরটাই হল ভারতবর্ষ৷ ভারতের গণতন্ত্র এই ভারতবর্ষকেই সুরক্ষিত রাখতে বদ্ধপরিকর৷

বিজেপি ও আরএসএসের নির্দেশে মোদি সরকার এর মূলেই কুঠারাঘাত করে তাকে নির্মূল করার অভিযানে নেমেছে৷ ইউপিএ, এনএসএ, পিএমএলএ প্রভৃতি আইনকে কঠোর থেকে কঠোরতম করে যাবতীয় ভিন্নসুর ও বিরোধিতার কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে চাইছে৷ শিক্ষক, অধ্যাপক, গবেষক, আইনজীবী, সমাজকর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সরকারের সুরে সুর না মেলানো লোকদের বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ আত্মসমর্পণ না করে স্বাধীন নিরপেক্ষ সাংবাদিকতাকে যাঁরা দৃঢ়ভাবে অাঁকড়ে ধরে আছেন তাঁদের ঠিকানা এখন জেল৷ শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবীসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের দমন করা হচ্ছে নির্মমভাবে৷ সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেরও অধিকার নেই৷ সংসদও চলছে একদলীয় দাপটে৷ কোনও আলোচনা ছাড়া, বিরোধীদের মতামত ছাড়া একতরফা পাশ হয়ে যাচ্ছে যাবতীয় বিল৷ এমনকী বিরোধী সদস্যদের বহিষ্কার করে বিল পাশের পথও মসৃণ করা হয়েছে৷

আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক এজেন্ডার চৌহদ্দির মধ্যে এক দেশ, এক ভাষা, এক ধর্ম, এক দল, এক নেতার ধারণাকে যেভাবে শাসনব্যবস্থার মর্মবস্ত্ত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে, আসলে সেটাই ভারত রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে নির্মূল করার প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ আধুনিক বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের পথ পেরিয়ে যে গণতন্ত্রের বিকাশ সেখানে কোনও ব্যক্তি মানুষই পুরোপুরি নির্ভুল, কলুষমুক্ত, সমালোচনা বা বিতর্কের ঊর্ধ্বে হতে পারে না৷ তাই গণতন্ত্রে স্বৈরতন্ত্রী বা একনায়কের কোনও জায়গা নেই৷ কিন্ত্ত মোদির নেতৃত্বে শাসকদল এবং সরকারের যে রূপান্তর ঘটেছে সেখানে দলে এবং সরকারে একজনই শেষ কথা বলার অধিকারী৷ নেতা একজন৷ বাকিরা সব নেতার জয়ধ্বনি করা ভক্ত বা অনুগত৷ নিঃশর্তে, নিঃসঙ্কোচে, অন্ধের মতো নেতার আদেশ পালন ও নেতাকে অনুসরণ করাই ভক্তদের একমাত্র কাজ৷ নেতাকে প্রশ্ন করার বা অন্য কিছু বলার বা ভাবার অধিকার তাদের নেই৷ ধর্ম ও রাজনীতির মিশেলে এমন এক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সচেতনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেখানে ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করছে দল আর নেতা হয়ে উঠতে চাইছেন ধর্মগুরুদেরও গুরু৷ শঙ্করাচার্যরাও এহেন রাজনৈতিক ধর্মগুরুর কাছে পাত্তা পান না৷

যুক্তি ও বিজ্ঞানবর্জিত অন্ধ বিশ্বাসই হল ধর্ম৷ ধর্মের মোড়কে রাজনীতির প্রতিষ্ঠা মানেও তাই রাজনৈতিক অন্ধ বিশ্বাস৷ নরেন্দ্র মোদিরা রাজনীতিকে এইভাবে ধর্মান্ধতার আখড়ায় পরিণত করে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুবাদের আড়ালে রাষ্ট্রক্ষমতাকে একদলীয় স্বৈরাচারী কবজায় আনতে চান৷ গণতন্ত্রের স্তম্ভ হিসাবে পরিগণিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে করে তোলা হয়েছে সরকারের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানে৷ সিবিআই, ইডি, আইটি-কে শাসকদলের শাখায় পরিণত করে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ভাঙিয়ে শাসক দলে ভেড়ানোর অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ অর্থনৈতিকভাবে রাজনৈতিক তোলাবাজিতে সংগৃহীত বিপুল অর্থ ঘুষ হিসাবে ব্যবহার করে বিরোধী দলের বিধায়ক কিনে সরকার দখল করা হয়েছে৷ এক দলের হয়ে ভোটে জিতে বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে শত কোটি টাকায়৷ জনমতকে গুরুত্বহীন করে এইভাবে মোদির নেতৃত্বে ভারতের গণতন্ত্র ধর্ষিত হচ্ছে৷ এইভাবে চলতে থাকলে ভারতের বুকে গণতন্ত্র বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না৷ বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের তকমাটিও কালিমালিপ্ত হবে৷ এই নির্বাচন সামনে নিয়ে এসেছে গণতন্ত্রের জয় বা হার প্রশ্নটিকে৷ ৪ জুন ফলাফলের দিকে শুধু ভারতবাসী নয়, বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষও অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন৷