আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্মস্পর্শী ঘটনার পর জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ চেয়ে প্রতিবাদে উত্তাল আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হলেও, সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিষাক্ত স্যালাইন পুস করায় একজন প্রসূতির মৃত্যু এবং আরও তিনজন এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। তাঁদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, অন্যজন অপেক্ষাকৃত ভালোর দিকে। এই স্যালাইন যাঁরা রোগীনিদের জন্য ব্যবহার করেছিলেন, তাঁদের কর্তব্যে গাফিলতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও ১২ জন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক শিক্ষার্থীকে সাসপেন্ড করেছেন— প্রত্যক্ষ প্রমাণ সাপেক্ষে।
সুতরাং তিনি যথার্থ কাজই করেছেন। যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অন্যত্র একটি নার্সিংহোমে একজন রোগীর অপারেশন করতে গিয়েছিলেন— তাঁর কর্ম অবহেলা করে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী এই বারো জনকে সাসপেন্ড করে একটি সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। যা দেখে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও সতর্ক হবেন এবং তাঁরা যে কাজে নিয়োজিত তা সঠিক ভাবে পালন করবেন।
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকরা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনরা আন্দোলন চালাচ্ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে রোগীদের স্বার্থে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তার অবসান কল্পে মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের বোঝাতে কম চেষ্টা করেননি। তিনি যেমন যে শিক্ষার্থী মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছিল, তাঁর মা-বাবাকে সান্ত্বনা জানিয়েছিলেন এব দোষীদের যাতে কঠোরতম শাস্তি হয়, তার আশ্বাস দিয়েছিলেন, তেমনই জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করে হাসপাতালে রোগীদের স্বার্থে আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
নবান্ন সভাঘরে তিনি জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনান্তে তাঁদের দাবি মেটানোর জন্য অগ্রণী হয়েছিলেন। তিনি সভাঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একাকী বসেছিলেন চিকিৎসা প্রতিনিধিদের আসার অপেক্ষায়, কিন্তু তাঁরা আসেননি। এরপরও মুখ্যমন্ত্রী ধৈর্য হারাননি—মীমাংসার পথ খুঁজে পেয়েছেন এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে যোগদানে আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টাকে সম্মান জানিয়ে তাঁরা কাজে যোগদান করেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রায় সব দাবিই মুখ্যমন্ত্রী মেনে নেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর যথার্থ ভূমিকা পালন করেন।
তারপর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের একজন প্রসূতির মৃত্যু ঘটল চিকিৎসকদের গাফিলতি এবং কর্তব্যের জন্য। এক্ষেত্রেও মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন।
ভুললে চলবে না, স্বাস্থ্য দপ্তর প্রশাসনের অন্যতম এক দপ্তর। সুতরাং কোনও কেন্দ্রে যদি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে, তাহলে তার যথাযথ তদন্তও করা হয়। দোষী অথবা কর্তব্যে গাফিলতির জন্য শাস্তিও দেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তাঁদের কাজে নিয়ে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ তাঁরা অসুস্থদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার কাজে ব্রতী। কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞদের ভুলে যদি কোনও রোগীর মৃত্যু ঘটে, তা কখনও কাঙ্ক্ষিত নয়। চিকিৎসকরা সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা করে তাদের সারিয়ে তোলেন। তাই রোগীদের কাছে তাঁরা ভগবান। একজন চিকিৎসকের কথায়, এবং ভালো হওয়ার আশ্বাস পেয়ে রোগীরা বাঁচার আশা ফিরে পায়। সুতরাং চিকিৎসা যাতে ত্রুটিহীন হয়, তার জন্য তাঁদের সজাগ থাকা উচিত।
আজকাল এমন ঘটনা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। হাসপাতলে তাঁর কর্তব্যে অবহেলা করে প্রাইভেট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসা করছেন। যেমন মেদিনীপুর হাসপাতালে প্রসূতির চিকিৎসার কাজে ফাঁকি দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাইরে চলে গিয়েছিলেন অপারেশন করতে। এটা গুরুতর অন্যায়। বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাইভেট হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়া তারা বিভিন্ন স্থানে ক্লিনিকে বসে রোগী দেখেন। এটা গর্হিত কাজ।