• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

উগ্র হিন্দুত্বের ডাক

এতদিন এই রাজ্যে ছিল জাতপাত এবং আদিবাসীদের তুষ্ট করার রাজনীতি। তা দূরে সরিয়ে রেখে এবার সরাসরি উপজাতিদের নিজস্ব ধর্মীয় সত্তাকে বেশি করে প্রচারে আনা হবে। এই বিভাজনে ইতিমধ্যে সাড়া মিলেছে বলে বিজেপির দাবি।

একটি অনুশীলনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্যরা। ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপিকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সাফ নির্দেশ, এবার উগ্র হিন্দুত্বে ফিরতে হবে। আসন্ন মহারাষ্ট্র এবং এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ভোটের প্রচারে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা, স্লোগান, প্রচার এবং ইস্যুকেই সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে। ইস্তাহারও তৈরি হবে সেই মতো। তা নিয়ে বিজেপিকে প্রচারে নামার নির্দেশের পাশাপাশি ময়দানে নেমে পড়েছে আরএসএস। সঙ্ঘের ধারণা, লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বিজেপির হিন্দুত্ব এজেন্ডায় কিছুটা মরচে ধরেছে। আর দল হিসেবেও তার ঝাঁঝ ও আকর্ষণ কমেছে। সদস্য নবীকরণে নেতিবাচক প্রবণতা দেখে সেকথা বুঝতে পারছে বিজেপি নেতৃত্ব।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ স্লোগান তুলেছেন, ‘বাঁটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’। অর্থাৎ যদি হিন্দুরা বিভাজিত হয়, তাহলে শেষমেশ মৃত্যু অনিবার্য। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক প্রধান মোহন ভাগবত আহ্বান করেছেন হিন্দু ঐক্যের। দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসনে চলে যাওয়া কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়াকে হঠাৎ দশেরার সমাবেশে দেখা গেল সরসঙ্ঘচালকের পাশে বসে থাকতে। তারপরেই জানা গেল, মোহন ভাগবতের সঙ্গে দোগাড়িয়ার বৈঠক হয়েছে। তোগাড়িয়া সঙ্ঘকে জানিয়েছে, হিন্দু সমাজ কোনও রাজনৈতিক দলকে পূর্ণমাত্রায় বিশ্বাস করে না। কারণ, তাদের যে মনোবাসনা ও লক্ষ্য কোনওটাই পূরণ হতে দেখা যাচ্ছে না। সেই হতাশার প্রকাশ দেখা গিয়েছে লোকসভার ভোটে। আচমকা তোগাড়িয়ার অতিসক্রিয় হয়ে ওঠা মোটেই অস্বাভিক নয়। খোদ সঙ্ঘও মনে করছে, লোকসভা ভোটে বিজেপির নৈরাশ্যজনক ফলাফলের কারণ হিন্দুত্বের ঝাঁঝ কমে যাওয়া।

সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আরএসএস তৈরি করেছে ডিভিশন স্তরের কমিটি। থাকছে বিধানসভাভিত্তিক ১৫০ জনের একটি করে গোষ্ঠী। এই স্বয়ংসেবকরা পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে যাবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ও হিন্দুত্ব, এই ডাবল ইঞ্জিনকে প্রচারের অভিমুখ করা হবে। হাই ভোল্টেজ হিন্দুত্ব প্রচারই হবে মহারাষ্ট্রের ভোটের স্ট্র্যাটেজি। উদ্ধব থ্যাকারেপন্থী শিবসেনার কাছে যেন হিন্দুত্ব ভোটব্যাঙ্ক অবশিষ্ট না থাকে— এই হল পরিকল্পনা। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের কাছে প্রচার করা হবে ‘লাভ জিহাদ’। অর্থাৎ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এই রাজ্যে এসে আদিবাসী মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করছে। এইভাবে আদিবাসীদের জমি ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের হাতে। অসমের ধাঁচে এবার ঝাড়খণ্ডে এনআরসি করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসা হচ্ছে বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে। এতদিন এই রাজ্যে ছিল জাতপাত এবং আদিবাসীদের তুষ্ট করার রাজনীতি। তা দূরে সরিয়ে রেখে এবার সরাসরি উপজাতিদের নিজস্ব ধর্মীয় সত্তাকে বেশি করে প্রচারে আনা হবে। এই বিভাজনে ইতিমধ্যে সাড়া মিলেছে বলে বিজেপির দাবি।

নরেন্দ্র মোদী প্রবীণ তোগাড়িয়াকে পছন্দ করেন না বলে সঙ্ঘ পরিবারের নেতৃত্ব থেকে সাময়িক হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ এবার বিজয়া দশমীর দিন তাঁর পুনরাবির্ভাব হয়েছে। বেশ কিছু দায়িত্বভারও তাঁকে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য সফরেও তিনি বের হবেন।

উগ্র হিন্দুত্বই ৪৪ বছর ধরে বিজেপির সাকসেস ফর্মুলা। আরএসএস শতবর্ষে পা রাখছে ২০২৫ সালে। আর ওই বছরই বিজেপি পৌঁছে যাবে ৪৫ বছরে। তাই এবার সঙ্ঘের কঠোর নির্দেশ, স্বধর্ম থেকে বিজেপি যেন কোনওমতেই বিচ্যুত না হয়। আর স্বধর্ম মানেই হল উগ্র হিন্দুত্ব।