শান্তনু রায়
অল্প বয়সে জেদের বশে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অনুতপ্ত কিন্তু শাস্ত্রাদি অধীতী ও সেকালেও নিয়মিত ডায়েরি লেখক হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলে ভবিষ্যতে উকিল হবে এই আশায় সিউড়ি আদালতের প্রতিষ্ঠিত উকিল পিতার বিশেষ শামলাটি সযত্নে রেখে তার উদ্দেশ্যে ডায়েরীতে লিখে রেখেছিলেন-ব্যবসা করিয়া অর্থ প্রচুর হয়,কিন্তু তাহার মূল্য তত নয়-যতমূল্য বিদ্যাবলে উপার্জন করা অর্থের’৷ কিন্তু বিধাতার লিখন বোধকরি ছিল অন্য কিছু৷
বিপ্লবী নলিনী বাগচির সংস্পর্শ সেই পুত্রের সদ্য তরুন মনে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ জাগালেও বিপ্লবাত্মক ধ্যানধারণা ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ তাঁর মনে কখনো তেমন দাগ কাটতে পারেনি৷ তিনি নিজেই এক লেখায় বলেছেন- আমি বিপ্লবী ছিলাম না৷ কিন্তু১৯১৬য় ম্যাট্রিক পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হলেও কলেজ ছাড়তে হয় পুলিশের কাছে রাজনৈতিক সন্দেহভাজনদের তালিকায় তাঁর নাম থাকায়৷তবে বিপ্লবী সম্প্রদায়ের চিন্তাধারা প্রতিফলিত ‘কালিন্দী’র স্রষ্টা ছিলেন তাদের সহমর্মী।
অহিংসা নীতি ও ১৯২১এ অসহযোগ আন্দোলন গভীরভাবে আলোড়িত অনুপ্রাণিত তরুন দেশসেবার ব্রত গ্রহণকরে বীরভুমের গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন, গান্ধিজীর আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩০ এ কিছুদিনের জন্য তার কারাবাসও হয়৷
তিনি রাঢ় বাংলার জীবনের সফলতম আখ্যানকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।১৯২৯ নাগাদ কল্লোল এ প্রকাশিত ‘রসকলি’ গল্প দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক অভিযাত্রা শুরু হলেও ‘আমার সাহিত্য জীবন’ এ তিনি উল্লেখ করেছেন যে তাঁর সাহিত্যসাধনা শুরু হয়ে যায় জেল থেকে মুক্তির পরপরই বন্দিজীবনে সৃজিত ‘চৈতালি ঘূর্নি’ উপন্যাস প্রকাশের মধ্যদিয়ে৷
তিনি রাঢ় বাংলার জীবনের সফলতম আখ্যানকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।১৯২৯ নাগাদ কল্লোল এ প্রকাশিত ‘রসকলি’ গল্প দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক অভিযাত্রা শুরু হলেও ‘আমার সাহিত্য জীবন’ এ তিনি উল্লেখ করেছেন যে তাঁর সাহিত্যসাধনা শুরু হয়ে যায় জেল থেকে মুক্তির পরপরই বন্দিজীবনে সৃজিত ‘চৈতালি ঘূর্নি’ উপন্যাস প্রকাশের মধ্যদিয়ে৷
এরপর একে একে রাইকমল, নীলকণ্ঠ,কবি, ধাত্রীদেবতা, মন্বন্তর, গণদেবতা, পঞ্চগ্রাম,হাঁসুলীবাঁকের উপকথা’র মত তাঁর অসংখ্য রসোত্তীর্ন ও বঙ্গের সমগ্র জীবনচিত্র অঙ্কিত সৃজন সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে।
তবে রাঢ় বঙ্গজীবনের সার্থক চিত্রকর তারশংকরকেও একবার চরম বিড়ম্বনা এমনকি শারীরিকভাবে নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছিল পঞ্চাশোর্ধবয়সে হাওড়ার একটি সংঘের রজতজয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে ফেরার পথে-জাতিবিন্যা্সের জটিলতা অনুধাবনে স্বীয় বিভ্রান্তিতে ‘সন্দীপন পাঠশালা’ উপন্যাসে মাহিষ্য ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে,যদিও লেখকের যুক্তি ছিল গ্রন্থে কোথাও চাষী-কৈবর্ত নায়কের (সীতারাম) প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃ্না প্রকাশ পায়নি বরং সমাজ যে অবজ্ঞা প্রকাশ করে তারই প্রতিবাদ ছিল৷ কিন্তু তাঁর এ যুক্তি সম্প্রদায়গত ক্ষোভ নিরসনে বিফলতায় অনেক কটুক্তি,হুমকী আসছিল, গালিগালাজপূর্ণ অনেক চিঠিও,তবে হয়ত এভাবে শারীরিক নিগ্রহের কল্পনাও করতে পারেননি। তবে ঘটনায় অনুভব করেছিলেন এ তাঁর ‘জীবনের এক শ্রেষ্ঠ যোগ’—চরম শিক্ষা— ‘সকল পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, সকল তিরস্কারের তীব্রতম তিরস্কার’। মাস কয়েক পরে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে এলেও ইচ্ছে করেই শনাক্ত করেননি, নিজগুণেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন-হয়ত নিজেরই বিভ্রান্তিতে একটি সম্প্রদায়ের আহত ভাবাবেগ উপলব্ধি করে।
কিন্তু ঐ ঘটনায় তাঁর সাহিত্যকৃতী বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি।উপন্যাস ও ছোট গল্পে বৈচিত্রভরা জীবনকে ফুটিয়ে তোলার অসাধারন দক্ষতার অধিকারী রবীন্দ্রোত্তর যুগের বাংলা সাহিত্যের তিন ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর অন্যতম তারাশঙ্করেরও কিন্তু সাহিত্যকর্মের সূচনা সে সময়কার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘ভারতবর্ষ’-এ প্রকাশিত একটি কবিতায় হলেও পরে আর কবিতা বিশেষ লেখেননি৷ আত্মজৈবনিক রচনা ‘আমার কালের কথা’য় বিধৃত আছে— ‘আমার জীবনের প্রথম রচিত কবিতা খড়ি দিয়ে লিখেছিলাম আমাদের বৈঠকখানা বাড়ির একটা খড়খড়ি ওয়ালা দরজার গায়ে৷ তখন বয়স আমার সাত বৎসর-আটে পড়েছি৷’
তবে তাঁর মধ্যে যে এক কবিয়াল সত্তা সতত বিরাজমান ছিল তার সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন তাঁর কালজয়ী সাহিত্যকর্ম ‘কবি’। শ্যামাঙ্গী ঠাকুরঝি’র প্রতি বর্ণ-কটাক্ষে সহমরমে অনুরাগী, যদিও তার নিরুচ্চার ভালবাসার স্বীকৃতিদানে অপারগ, তথাকথিত অন্ত্যজ ‘নিতাই কবিয়াল’-এর কণ্ঠে উচ্চারিত আপাতসরল উক্তি ‘…কালো যদি মন্দ তবে /কেশ পাকিলে কাঁদে কেনে— যেন স্রষ্টা্রই সূক্ষ্ম জীবনবোধের প্রকাশ। প্রেয়সী বসন্তের আকস্মিক মৃত্যুতে অপূর্ণ ভালবাসার তৃষায় সকাতর নিতাইএর আক্ষেপ-এই খেদ মোর মনে/ভালবেসে মিটল না আশ, কুললো না এ জীবনে যেন জীবনবোধের গভীর উপলব্ধিতে বৃহত্তর পটভুমিকা ও বিস্তৃততর জীবনের ক্যানভাসে মানবজমিনের চিত্রকর স্রষ্টারই নিরুচ্চার উচ্চারন। শাক্ত ও বৈষ্ণব সংস্কৃতির প্রভাবে সমৃদ্ধ লাভপুরে উনবিংশ শতাব্দীর উপান্তে ভূমিষ্ট ‘ভাগ্যবান’ তারাশঙ্কর চন্ডীমন্ডপের সমাজের নীরব ভাঙ্গনের অভিঘাতে সত্তার গভীরে হয়েছিলেন আলোড়িত। তাঁর সাহিত্যে বারবার প্রতিবিম্বিত হয়েছে সেই ভাঙ্গন প্রক্রিয়ার এক শ্রেণীনিরপেক্ষ নৈর্ব্যক্তিক কিন্তু মরমী চিত্রন। শুধু নিতাই কবিয়াল নয়, তাঁর রচনায় লোকায়ত সংস্কৃতির কেন্দ্রভুমি বীরভূম অঞ্চলের সাধারন মানুষের কথা,যাদের জীবন ও যাপন কিঞ্চিৎ রহস্যেঘেরা হলেও বারংবার প্রতিবিম্বিত তাঁর সাহিত্যে-বিনির্মিত চরিত্রে-ঘনিষ্ঠ মেলামেশা ও প্রত্যক্ষ করার সুযোগে৷
পুরোনো একটা যুগের বিলীয়মানতা ও নতুন যুগের আগমনের পদধ্বনি-মূল্যবোধের পরিবর্তনজনিত নতুন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিদায়ী পুরাতন ও নবীনের সংঘাত ও মিথষ্ক্রিয়ার দ্যোতনা যেন সুপরিস্ফুট ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘আরোগ্য নিকেতন’-নাটকেও৷ সম্পূর্ন আধুনিকতা-বিমুখ নাহলেও প্রাচীন সমাজবিধির প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ, প্রতীতি এবং কিঞ্চিৎ রক্ষণশীলতাও ছিল কিন্তু নবজীবনের চিত্রও সৃজিত হয়েছে তাঁর লেখনীতে৷ এক কথায় সাধারনের জীবন ওযাপন কাহিনিই তাঁর সৃজনের প্রধান উপজীব্য ছিল। সেই প্রেক্ষিতেই নিজের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আত্মপ্রজ্ঞাপনে দ্বিধাহীন উচ্চারণে তিনিই বলবার অধিকারী-জাতির জীবনে যে মহিমা দেখলাম যে ক্ষুদ্রতা দেখলাম তা মানুষেরই মহিমা, মানুষেরই ক্ষুদ্রতা। ক্ষুদ্রতার চেয়ে মহিমাই বড়।মানুষের মহিমাকে প্রণাম জানাই। মানুষের ক্ষুদ্রতা, তাকেও প্রণাম করি। বাংলার পল্লী অঞ্চলের সাধারন মানুষের মধ্যে যে প্রাণলীলা প্রত্যক্ষ করেছি সাহিত্যে তাকেই রূপদানের চেষ্টা করছি আজীবন। তাই তিনিই নিজের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে আত্মপ্রজ্ঞাপনে দ্বিধাহীন উচ্চারণে-জাতির জীবনে যে মহিমা দেখলাম যে ক্ষুদ্রতা দেখলাম তা মানুষেরই মহিমা মানুষেরই ক্ষুদ্রতা।ক্ষুদ্রতার চেয়ে মহিমাই বড়। মানুষের মহিমাকে প্রণাম জানাই।মানুষের ক্ষুদ্রতা তাকেও প্রণাম করি। বাংলার পল্লী অঞ্চলের সাধারন মানুষের মধ্যে যে প্রাণলীলা প্রত্যক্ষ করেছি সাহিত্যে তাকেই রূপদানের চেষ্টা করছি আজীবন।
‘ধাত্রীদেবতা’র মত তাঁর জীবনের অনেকখানি জুড়ে ছিলেন গভীর স্বদেশানুরাগী মা প্রভাবতী দেবী যিনি প্রথম রাখীবন্ধনের দিন কিশোর তারাশঙ্করের হাতে একটি রাখী বেঁধে দিয়ে মন্ত্র পড়েছিলেন— বাংলার মাটি-বাংলার জল…৷ সে সময়কার তারাশঙ্করকে ‘ধাত্রীদেবতা’র (১৯৩৯) শিবনাথের মধ্যে অংশত খুঁজে পাওয়া সম্ভব তন্নিষ্ঠ পাঠকের পক্ষে৷
তাঁর নিজের কথায়-আমার অহিংসা ও সত্যের উপর বিশ্বাস ধাত্রীদেবতা থেকে মন্বন্তর পর্যন্ত সর্বত্র সুস্পষ্ট। পঞ্চগ্রামের মধ্যে আমার ধ্যানধারণা সর্বাপেক্ষা স্পষ্ট। তারাশঙ্করের দ্বিতীয় সত্তাসরূপ পঞ্চগ্রামের দেবুপণ্ডিত আমন্ত্রন জানিয়েছে ‘ভারতের চিরন্তন কল্পনার কাল সত্যযুগকে নূতন ভঙ্গিতে, নূতন ভাষায় নূতন আশায়, নূতন পরিবেশে’। যেখানে ‘সুখস্বাচ্ছন্যভরা ধর্মের সংসার’।
মানুষ বাঁচিতে চায়। মানুষের পরম কামনার মুক্তি একদিন আসবেই৷… আমি যাহা শিখিয়াছে শোন, আমি কাহারও চেয়ে বড় নই; কাহারও অপেক্ষা ছোট নই৷ কাহাকেও বঞ্চনা করিবার অধিকার আমার নাই আমাকে বঞ্চিত করিবারও অধিকার কাহারও নাই-অন্তিমে এ অপরীসীম আশার বানী তো ঔপন্যাসিকেরই।
জমিদারী প্রথার ক্রমবিলীয়মানতায় নব শিল্পায়নের আবহে শিল্পপতিদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও প্রতিপত্তি এবং ব্যাপকতায় গ্রামীন সমাজেও দ্রুত ও ব্যাপক রূপান্তরে স্বতস্ফুর্ত সমর্থন দিতে বংশানুক্রমিক জমিদারির শরিক তারাশংকরের দ্বিধাগ্রস্ততার জন্য অনেকে তাঁর সাহিত্যেও জাতীয়জীবনে শিল্পায়নের ভূমিকার গুরুত্ব অনুধাবনে খামতির উল্লেখ করেন৷ তবে জমিদারির আয়-অন্নে জীবনধারণে ছিলেন তীব্র বিরোধী তিনি লাভপুরের জমিদারবাড়ি-বাসের স্বাচ্ছন্দ্য স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে চলে এসেছিলেন কোলকাতায়।
১৯৪৪ এ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ‘মন্বন্তর’ উপন্যাসের ভূমিকায় তারাশঙ্কর লিখেছিলেন-দেশের বর্তমান অবস্থার পটভূমিতে বাঙ্গালির এযুগের নতু্ন আদর্শে প্রাণিত ছেলেমেয়েদের জীবন নিয়ে এই বই লিখবার কল্পনা আমার ছিল। কিন্তু সে কল্পনা শীঘ্র কর্মে রূপান্তরিত হবে এ ভাবিনি। একটি আলোচনা বাসরের বিতর্ক থেকে মন ব্যগ্র হয়ে ওঠে এবং ‘মন্বন্তর’ লিখতে আরম্ভ করি। তবে ‘মন্বন্তর’ নিয়ে বিতর্ক তারাশঙ্করকে ছাড়েনি। বিপ্লবী বা ‘বামপন্থী আদর্শে আস্থাহীন তারাশঙ্করের ‘মন্বন্তর’ আনন্দবাজারে প্রকাশের পর (১৯৪৩) সাহিত্যক্ষেত্রে এক আলোড়ন ওঠে— এদেশের কম্যুনিস্ট মনোভাবাপন্ন সাহিত্যিকরা তাঁকে একটু স্বীকৃতি দিতে লাগলেন। তাঁদের প্রশংসায় মুগ্ধ তারাশঙ্কর কিছুদিন ফ্যাসীবিরোধী লেখক শিল্পী সংঘের সভাপতিও হয়েছিলেন সরোজ দত্ত ও বিনয় ঘোষের অনুরোধে।
কিন্ত অচিরেই তাঁর মোহভঙ্গ হল৷ তিনি উপলব্ধি করলেন-কম্যুনিষ্ট দলভুক্ত সাহিত্যিকের কাছে সাহিত্যের চেয়ে দল বড়।সুতরাং দলের স্বার্থ বড় করে দেখতে গিয়ে সাহিত্যবিচারকে খর্ব করা,ক্ষুন্নকরা-এটা তাদের প্রায় জীবনবোধে পরিনত হয়েছে। যদিও তাঁর মতে ‘মার্কসবাদ সম্মত সমাজ পরিকল্পনা পৃথিবীর শাস্ত্রে একটি মহত্তম আবিষ্কার’ কিন্তু ১৯৫১-য় সোভিয়েত ইউনিন সফরের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং তাঁর উপলব্ধি— এই (কম্যুনিষ্ট) দলের কর্মী সাহিত্যিকদের মতো অন্যেরা আজকের মতের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধ মত কাল প্রচার করেন না। …সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি এদের শ্রদ্ধা এদের রাজনৈতিক দলগত স্বার্থ ও দলীয় প্রধানদের নির্দেশের কাছে নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। …সাহিত্য এদের কাছে শ্রেণী সংগ্রামের বা বিপ্লবের হাতিয়ার-একথা এরা ঘোষণা করেই বলেন।
অন্যদিকে ‘মন্বন্তরে’র জন্য তারাশঙ্কর সমালোচিত হয়েছিলেন বিপক্ষ দ্বারাও। তাঁর নিজের কথায়— এক সময় এদের ভাল বলে কেউ সাহিত্য রচনা করলে অন্য পক্ষেরাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন, বিরূপ সমালোচনা করেছেন।কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ভূতপূর্ব সদস্য শ্রী অরুণ চন্দ্র গুহ ‘মন্দিরা’য় মন্বন্তরের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। কম্যুনিষ্টপার্টি বিরোধী অন্য এক বামপন্থী নেতা মন্বন্তরের জন্য আমাকে ব্রিটিশের অর্থপুষ্ট দেশদ্রোহীও বলেছেন। সুতরাং এ দৃষ্টিভঙ্গী বলতে গেলে রাজনৈতিক দলের কর্মী সাহিত্যিকের স্বভাবের একটি দিক।
সাহিত্যজীবনের প্রথম পর্বে অনেক অপমান অবহেলা ও আর্থিক দৈন্যের শিকার হলেও পরবর্তীকালে নিরলস সাহিত্যসাধনার মাধ্যমেই অনেক পুরস্কার,সম্মান স্বীকৃতি লাভের মত সফল হন লক্ষ্মীলাভেও। তাঁর গল্প উপন্যাস অবলম্বনে অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মান হয়েছে৷
সাহিত্য একাডেমি,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ওসাহিত্য একাদেমির ফেলো, দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট ছাড়াও পদ্মভুষণ প্রাপ্তি- রাজ্য বিধান পরিষদে ও রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যও, তাসখন্দে আফ্রোএশীয় লেখক সম্মেলনে ভারতীয় লেখক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদান— সর্বার্থেই প্রতিষ্ঠালাভ।উল্লেখ্য, তাঁর মহাপ্রয়ানে শোকবার্তা ও পুস্পস্তবকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপিত হয়েছিল কোলকাতাস্থ রুশদূতাবাসের পক্ষ থেকেও৷
সাহিত্য একাডেমি,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ওসাহিত্য একাদেমির ফেলো, দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট ছাড়াও পদ্মভুষণ প্রাপ্তি- রাজ্য বিধান পরিষদে ও রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্যও, তাসখন্দে আফ্রোএশীয় লেখক সম্মেলনে ভারতীয় লেখক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদান— সর্বার্থেই প্রতিষ্ঠালাভ।উল্লেখ্য, তাঁর মহাপ্রয়ানে শোকবার্তা ও পুস্পস্তবকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপিত হয়েছিল কোলকাতাস্থ রুশদূতাবাসের পক্ষ থেকেও৷
তবু রাঢ় বাংলার জীবনই যাঁর সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য ছিল সেই মহান সাহিত্যিকের জীবনের অন্তিমপাদে মৃত্যু ভাবনাই ছিল মুখ্য বিষয়। ‘জীবন এত ছোট কেনে এ ভুবনে’? —এ আক্ষেপ হয়ত জীবন জিজ্ঞাসায় প্রতিনিয়ত তাড়িত নিতাইএর স্রষ্টার মনেরও অন্তর্লীন ভাবনা!
তিয়াত্তর বছর বয়সে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস আক্রান্ত হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে একাত্তরের ১৪ই সেপ্টেম্বর ভোরে মৃত্যু এসে তাঁকে নিয়ে গেল না ফেরার দেশে৷ পরদিন এক বহুলপ্রচারিত বাংলা দৈনিকের অন্যতম শিরোনাম ছিল— ‘তারাশঙ্করের ইহজীবনের অবসান’।