সন্ত্রাসবাদ

প্রতীকী চিত্র

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শেষ পর্যন্ত একটা বড় ইস্যু নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন— তা হল সন্ত্রাসবাদ। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, সেই সঙ্গে সন্ত্রাসের ধরন-ধারণেরও পরিবর্তন হয়েছে। সন্ত্রাসের সেই পরিবর্তন কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তার জন্য একটি নতুন নীতি প্রবর্তনের কথা তিনি ভাবছেন। সেই নীতি হবে শীতল সন্ত্রাস মোকাবিলা নীতি। এই নীতি যখন প্রয়োজনে বাস্তবে রূপাণ হবে, তখন রাজ্যগুলির মতামত তথা সমন্বয় রেখেই হবে। বর্তমান সমাজে সন্ত্রাসবাদ একটা বড় আকার ধারণ করেছে— তা দমন না করতে পারলে স্বদেশের মানুষ সর্বদাই নিরাপত্তার অভাব অনুভব করবে।

সম্প্রতি দিল্লিতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আয়োজিত অ্যান্টি টেরর সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত এই সন্ত্রাসবাদ দমননীতি প্রয়োগ করা হবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে। অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি মিলেই এই সন্ত্রাস দমনের কাজ করবে। অতীতে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্নে বিরোধিতা এসেছিল কোনও কোনও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলি প্রশ্ন তুলেছিল সন্ত্রাস দমনে রাজ্যের সহযোগিতা বা কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে সন্ত্রাস দমনে হাত মেলালে— যে সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিতে পারে, তা হল আইনশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস মোকাবিলা রাজ্যের এক্তিয়ারের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতা হওয়ায়, চিদাম্বরমের সন্ত্রাস দমনের কাজে বাধা পড়ে। এক্ষেত্রেও অ-বিজেপি রাজ্যগুলির এ ব্যাপারে বিরোধিতার প্রশ্ন একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় কিনা। যদিও রাজ্যগুলি চায় কেন্দ্রের সহযোগিতা সন্ত্রাস এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ নয়।

এই দিনের অ্যান্টি টেরর সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্ব করেন এডিবি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বিনীত গোয়েল। সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ২০০৬-২০১৩ পর্বের তুলনায় ২০১৪-২০১১ পর্বে দেশের সন্ত্রাসের ঘটনা সত্তর শতাংশ কমেছে। বাকি যে ৩০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে, তা মূলতঃ সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন, জম্মু-কাশ্মীরে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।


শাহ বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সন্ত্রাসবাদীরা বিদেশের মাটিতে থেকে সন্ত্রাসমূলক নানা কাজ করে যাচ্ছে। সেই কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আরও কঠোর হতে হবে। তবে তিনি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে রাজ্যগুলির এক্তিয়ারে কেন্দ্র হাত দেবে না। রাজ্যগুলির হাতেই সন্ত্রাস দমনের সেই ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্র যে নীতি গ্রহণ করতে চলেছে, তা হল কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা সার্বিকভাবে করা। রাজ্যের এক্তিয়ারে হাত না দেওয়া। কেন্দ্রীয় এজেন্সি প্রয়োজন বিষয়ে পিছন থেকে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে। তাছাড়া সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তথ্যাদি রাজ্যগুলি কেন্দ্রকে জানাবে। কেন্দ্র তার পরিপ্রেক্ষিতে তার নির্দেশ দেবে কীভাবে সন্ত্রাস দমন আরও জোরদার করা যায়। এটাকে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ বলা চলে না। রাজ্যকে সাহায্য করা নানাভাবে। সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্র যে নীতি অবলম্বন করতে যাচ্ছে, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে— তারপর সেই নীতি পাকাপাকিভাবে গ্রহণ করা হবে।

আগামী দিনে অ্যান্টি টেরিরিজম স্কোয়ার (এটিএস) এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্স কীভাবে সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা নেবে তার একটি মডেল তৈরি করা হবে। যদি রাজ্যগুলি এই মডেল অনুমান করে কাজ করে, তাহলে তার ভাল ফল পেয়ে যাবে। যেভাবে সন্ত্রাসবাদ সারা পৃথিবীতে ছড়াচ্ছে, তা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সুতরাং ভারত সহ সব দেশেরই এমন কিছু করা দরকার, যাতে সন্ত্রাসবাদ মাথা তুলতে না পারে। রাজ্যগুলিকেও সন্ত্রাসবাদ দমনে একটি কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে সন্ত্রাস দমনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের কোনও প্রশ্ন ওঠে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সন্ত্রাসবাদ দমনে যে নীতি গ্রহণ করতে চলেছে, তা কার্যকর করা হলে সন্ত্রাসবাদ কমা ছাড়া বাড়বে না।

বিশ্বের সব দেশেই কমবেশি সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। তা দমন না করতে পারলে সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সুতরাং সন্ত্রাসবাদকে কোনওভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।