বুলডোজারে সুপ্রিম ধাক্কা

যোগী আদিত্যনাথের হাত ধরেই শুরু হয় বুলডোজার সংস্কৃতি। উত্তরপ্রদেশে অপরাধীদের বাড়ি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করে যোগী সরকার। অভিযোগ, যার বেশির ভাগই সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের। যে কারণে যোগীর নামও হয়ে যায় ‘বুলডোজার বাবা’। প্রকাশ্যেই উত্তরপ্রশের বিজেপি নেতৃত্ব হুমকি দিতে থাকেন, বেশি ‘বাড়াবাড়ি’ করলে বুলডোজার বাবা চলে আসবে। অল্প সময়ের মধ্যেই সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে মধ্যপ্রদেশ, বিহার-সহ বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, বাংলা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারদের মুখেও শোনা গিয়েছে বুলডোজার হুমকি। এর প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয় বেশকিছু মামলা। সেই মামলার রায়ে বিজেপির বুলডোজার নীতি খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট।

‘প্রশাসন কখনও বিচারক হতে পারে না’। বুলডোজার ব্যবহার করে অভিযুক্তদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্ত রায়দানে এই কথা জানিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ তাঁদের রায়ে স্পষ্ট করে বলেছেন— প্রথমত, কাউকে দোষী স্যব্যস্ত করার অধিকার রাজ্যের নেই। একই সঙ্গে কেউ অভিযুক্ত প্রমাণ হলেও তার বাড়ি ভেঙে ফেলার কোনও অধিকার নেই কোনও রাজ্যের। কারও ঘর বা অন্য কোনও অবৈধ কাঠামো ভাঙার জন্য বেশ কিছু নির্দেশাবলীও তৈর করে দিয়েছে আদালত। যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো, বাড়ি বা কাঠামো ভাঙার অন্তত ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে তার মালিককে। করতে হবে ভিডিও রেকর্ডিং। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বেআইনি নির্মাণটি যদি সরকারি রাস্তা, রেললাইন, ফুটপাথ বা জলাশয়ের উপরে হয়, কিংবা ওই ভাঙার কাজটি কোনও আদালতের নির্দেশে হয়, সেক্ষেত্রে এই গাইডলাইন মানতে হবে না।

সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য ও অন্যতম মামলাকারী বৃন্দা কারাত সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই রায় আগে এলে অনেক বাড়ি, অনেক পরিবার রক্ষা পেত।’ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই যোগী তথা বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘বুলডোজার তো একটা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা। পছন্দ করি না, তাই বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিলাম। এসব হাততালি পাওয়ার রাজনীতিকে গণতন্ত্র বলে না। এসব স্বৈরাচার ও হিংসা। কোথও কোনও ঘটনা ঘটলে তা নিয়ে মামলা হোক, গ্রেপ্তার করো। বুলডোজার কেন? এগুলি যারা করছে, তাদের উচিত এখন ক্ষমা চাওয়া।


এরও আগে ২২ অক্টোবর হওয়া শুনানিতে বুলডোজার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়েছিল, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বুলডোজার চালালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই হুঁশিয়ারি উড়িয়ে বেআইনিভাবে এক ব্যক্তির বাড়ি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় আগেই উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল শীর্ষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
এবারে বিজেপির বুলডোজার নীতির তীব্র সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলেছে, মাথার উপরে ছাদের স্বপ্ন প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি পরিবারের। একটি বাড়ি আসলে একটি পরিবারের সম্মিলিত আশার প্রতীক। অথবা কোনও ব্যক্তির সুরক্ষা ও স্থায়িত্বের। মহিলা ও শিশুরা বাস্তুহীন হয়ে থাকবে এটা দেখা যায় না। ভাঙা যাবে শুধু বেআইনি নির্মাণ, তাও আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া নয়।