সুপ্রিম তোপে ইডি

Supreme Court of India. (Photo Courtesy: Twitter)

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে চলেছে কেন্দ্র। বিরোধী দলগুলি এই অভিযোগ করে আসছে দীর্ঘদিন। সম্প্রতি একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তাতে এই দাবি আরও জোরালো হল। এমনটাই জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস আমলে আবগারি দুর্নীতির তদন্ত সংক্রান্ত এক শুনানিতে কেন্দ্রকে সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদের কথা মনে করিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। ওই অনুচ্ছেদ দেশের নাগরিককে জীবনের ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার দেয়। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে আদালত বলে, ৪৯৮এ ধারায় বধূ নির্যাতনের নামে করা মিথ্যে মামলার মতো এবার আর্থিক তছরুপের মামলাও বাতিল করা শুরু করতে হবে।

ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস সরকারের শাসনকালে আবগারি দুর্নীতির যে তদন্ত শুরু করেছে ইডি, তাতে অভিযোগ ২০১৯ থেকে ২০২২ এই সময়কালে ২১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এই মামলাতেই গত এপ্রিলে গ্রেপ্তার করা হয় তৎকালীন আইএএস আধিকারিক অনিল টুটেজাকে। সেই গ্রেপ্তারির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই মামলার শুনানিতে ইডি’র বিরুদ্ধে ‘অতি সক্রিয়তা’র অভিযোগ করে আদালত। প্রশ্ন করা হয়, ‘দুর্নীতি দমন শাখা যখন এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেখানে একই দিনে ইডি’র জিজ্ঞাসাবাদের কী প্রয়োজন? ইডি কীভাবে একটি তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মাঝে সেখানে গিয়ে নোটিশ দিতে পারে? এবিসি’র আধিকারিকরা কেন অভিযুক্তকে ইডি’র অফিসে নিয়ে যাবেন? এত তাড়াহুড়ো তো গুরুতর অপরাধের মামলা বা সন্ত্রাসবাদী মামলার ক্ষেত্রেও ঘটে না।’ একই সঙ্গে কড়া সুরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে আদালত বলেছে, ভুলে যাবেন না দেশের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২১ বলেও কিছু আছে।’ একই সঙ্গে আদালত জানায়, ‘৪৯৮এ ধারায় অপব্যবহার কীভাবে করা হয়েছে, তা সবাই জানে। প্রচুর মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে এর আড়ালে। যা ধরে ধরে বাতিল করা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরাসরি কিছু না বলেও আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, ৪৯৮এ-র মতো পিএমএলএ-রও অপব্যবহার করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ করা হচ্ছে। আদালতের বক্তব্যে তা মান্যতা পেল।


অবশ্য আদালতের কড়া তোপের মুখে ইডি জানিয়েছে, ‘অভিযুক্ত নিজের ইচ্ছেতেই ইডি অফিসে এসেছিলেন। তাঁকে জোর করে আনা হয়নি।’ অন্যদিকে এই গ্রেপ্তারি অবৈধ বলে দাবি করে প্রাক্তন আমলার জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী।

ইডি ও সিবিআই— এই দুই এজেন্সিকে দিয়ে মোদী-অমিত শাহ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলগুলি ও নেতাদের চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সহ বিজেপি-বিরোধী নেতারা এই অসাংবিধানিক কাজের তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের মোদী সরকার ও গেরুয়া শিবির তাতে বিন্দুমাত্র লজ্জিত নয়। সামনে চলে এসেছে ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের উপনির্বাচন। এই নির্বচনী বৈতরণী পার হতে মোদী-শাহদের শেষ সম্বল ইডি ও সিবিআই। স্বশাসিত এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আদালতে বারে বারে ভর্ৎসিত হয়েও মোদী-শাহেরা নির্লজ্জের মতো আচরণ করে চলেছে।