সম্প্রতি ইসরাে বা ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের তৈরি ভূমি পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ইওএস-০৩ সংশ্লিষ্ট কক্ষে স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও কৃত্রিম উপগ্রহটি শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র কেন্দ্র থেকে সফলভাবেই উৎক্ষেপন করা হয়েছিল।
কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ে সঠিক সময়ে রকেট প্রজ্জ্বলনে ব্যর্থতার কারণেই তা ভেঙে পড়ে। জিএসএলভি এফ ১০ ভারতে তৈরি ইঞ্জিন সমন্বিত অষ্টম উদ্যোগ ছিল। গত ৫ মার্চ ২০২০ তারিখে এই কৃত্রিম উপগ্রহটি পাঠানাের কথা ছিল।
কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টা পূর্বে ক্রায়ােজিনিক কিছু ত্রুটির কারণে তা স্থগিত রাখা হয়। ইসরাের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার জানান, ভারতে তৈরি ত্রায়ােজিনিক ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা রাশিয়া বা ইউরােপের যে দেশের তৈরি ইঞ্জিনের থেকে অনেকটাই উন্নত হিসেবে পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে।
তাই তিনি ইসরাের বিজ্ঞানীদের হতাশ না হয়ে আবারও এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরাের বিজ্ঞানীরা অচিরেই তাদের এই ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে আবারও কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে সফল হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
ভারতের তৈরি ভূপর্যবেক্ষণ কৃত্রিম উপগ্রহ ইওএস-৩ জিও-সিংক্রোনাস বলয়ে স্থাপন করে তা দশ বছরের মেয়াদে কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন করে গড়ে তােলা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল গ্রহের প্রকৃত বৃহত অবস্থার ছবি সংগ্রহ করে পাঠানাে। প্রাকৃতি বিপর্যয় বিষয়ে নজরদারি চালিয়ে আগাম সতর্ক বার্তা পাঠানাে, সাইক্লোন পর্যবেক্ষণ, ক্লাউডব্রাস্ট এবং বজ্রপাতের খবর আগাম পাঠানাে।
আর জিএসএলভি মার্ক ২ -যা ভারতে তৈরি বৃহত্তম এক উপগ্রহ প্রেরণ যান। এই যানের মাধ্যমে আড়াই হাজার কেজি ওজনের উপগ্রহ বহন করে সংশ্লিষ্ট কক্ষে প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ইসরাের মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণের দীর্ঘ সফলতার ইতিহাস রয়েছে, তবে ২০২০ সালের শুরু থেকে তেমন কোনও উল্লেখযােগ্য উদ্যোগ দেখা যায়নি।
ইসরাে গত বছরে পঁচিশ এমন উৎক্ষেপনের পরিকল্পনা করেছিল মহাকাশে ২০২৩ সালে মানুষ পাঠানাের গগনযান অভিযানের প্রস্তুতিপর্ব হিসেবে। কিন্তু কোভিড ১৯ যে ইসরাের সকল পরিকল্পনাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলে, তা বলাই বাহুল্য।
ইসরাে দক্ষিণ তামিলনাড়ুর কুলাশেখরাপট্টিনামে শ্রীহরিকোটার মতাে দ্বিতীয় এক উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় আড়াই হাজার একর জমি অধিগ্রহণের জন্য কেন্দ্র সরকারে কাছে চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানায়।
এক বছর পূর্বে, সংস্থার পক্ষে বিকল্প এনট্রিক্স এর জন্য নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড নামে বাণিজ্যিক সহযােগী সংস্থা হিসেবে গঠন করা হয়। কিন্তু এখন সংস্থাটি দেবসের সঙ্গে দুর্নীতির এক কালিমালিপ্ত সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত।
ইসরাে এপর্যন্ত বিশ্বের সবথেকে কম খরচে সফলভাবে মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণের সংস্থা হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের উপগ্রহ প্রেরণের ব্যর্থতা তার এই সুনামকে চুরি করে নিয়েছে।
কিন্তু এমন ব্যর্থতা ও সাফল্যের সকল তথ্যই মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে কারণ ইসরাে দেশের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, তাই হতাশা যেন কেবল সংস্থার বিজ্ঞানীদের গ্রাস করতে না পারে সেটা যাতে সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনাকে আরও ত্রুটিমুক্ত করা যায় তারই লড়াই হিসেবে মেনে নিতে হবে।
এক দশক পূর্বে মার্কিন সরকারের অধীন আমেরিকার বিমান বাহিনী পরিচালিত মার্কিন গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) এর মতাে ব্যবস্থা নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন (নভআইসি) স্থাপনের উদ্যোগ নেয় । আমেরিকা ১৯৮০ সালে। জিপিএস সিগনাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে দিয়েছিল বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্য।
রাশিয়ার নিজস্ব নেভিগেশন ব্যবস্থা রয়েছে গ্লোনাস নামে, ইউরােপিয়ান ইউনিয়নের রয়েছে গ্যালিলিও নামে, চিনের রয়েছে বেইদউ নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম কনস্টেলেশেন এবং চিনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং এর উদ্বোধন করেন বেজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে কয়েক মাস আগেই।