সফল মোকাবিলা

ঘূর্ণিঝড় ফণী (Photo: IANS/PIB)

গত শুক্রবার সকালে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলােমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল। ওড়িশা সমুদ্রতীরবর্তী পুরী, ভুবনেশ্বর, কেন্দ্রপাড়া, কটক ও জগৎসিংপুরে পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের ব্যাপক জাতীয় প্রয়াস গ্রহণের আর্জি জানিয়েছে যে বার্তা সারা দেশে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড় যতটা বিপজ্জনক মাত্রা নেবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল বিপর্যয় সেই ভয়ঙ্কর মাত্রায় পৌঁছয়নি।

১০ বছর আগে ২০০৯-এর ২৬ মে আয়লা ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর সুপার সাইক্লোন ওড়িশাকে ধ্বংস করে দেওয়ার পরও ২০ বছর কেটে গেছে। দুই রাজ্যকে বর্তমান বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে তার জন্য একজন মুখ্যমন্ত্রী ও একজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই থেকে দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানাের প্রয়ােজন হবে।

বিপর্যয়ের মুহুর্তে রাজনৈতিক স্বস্তির একটা গুরুত্ব আছে। সাহায্যের প্যাকেজ বিপর্যয়ের মাত্রার সঙ্গে মানানসই হবে এমনটাই আশা করা যায়। সুপার সাইক্লোনের পর ঘূর্ণিঝড় ফণীই সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার, যা শুক্রবার ভূখণ্ডের ওপর আছড়ে পড়ে। অনেক দিক থেকেই এটা যথেষ্ট ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল। তবে কলকাতা ও উপকুলবর্তী দক্ষিণবঙ্গ চরম বিপর্যয় থেকে রেহাই পেয়েছে।


অন্যের দুর্ভোগ থেকে যারা আনন্দ খুঁজে পান তারা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ভুবনেশ্বরে মােবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়া সাধারণভাবে যােগাযােগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ারই ইঙ্গিত। কলকাতা বিমানবন্দরও প্রায় ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। বাতিল করা হয়েছে ২২৩টি ট্রেন। এর সঙ্গে যােগ করতে হবে প্রায় ভেঙে পড়ার মতাে বিদুৎ সরবরাহ, যা জলের ঘাটতির উপক্রম করেছে।

বিধ্বস্ত ওড়িশা বিচ্ছিন্নভাবে দুর্ভোগ পােহালেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ন্যাশনাল ডিসাস্টার রেসপন্স ফোর্সকে (এনডিআরএফ) কৃতিত্ব দিতেই হবে, অন্যথায় মৃতের সংখ্যা অনেক বেড়ে যেত। উল্লেখযােগ্য বিষয় হল সাইক্লোনের দুদিন আগে ওড়িশার উপকুলবর্তী জেলাগুলির নীচু অঞ্চল থেকে ১২ লাখ লােককে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

‘জনগণের যত্নকে অগ্রাধিকার দেওয়াই আমার লক্ষ্য’ বলে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক যে ঘােষণা করেছিলেন তিনি তা কাজে করে দেখিয়েছে। সােমবার সকালের মধ্যে যােগাযােগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ফিরিয়ে আনাও তাঁর কৃতিত্বের পরিচায়ক।

প্রথম রাজ্য হিসাবে ওড়িশা স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটিকে কাজে লাগানােও ওড়িশার বিজেডি সরকারের পক্ষে কৃতিত্বের পরিচায়ক। এই অথরিটিকে পূর্ণ সহযােগিতা করেছে ওড়িশা র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। এই দুই সংস্থা মিলে একটা কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। আসন্ন সাইস্লোন সম্পর্কে প্রথম পূর্বাভাস থেকেই জেলা প্রশাসনগুলি সময় ধরে কাজ করে গেছে। সতর্কতার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা গ্রহণ– এর মধ্যে তারা কোনও ফাঁকি রাখেনি।

এর সঙ্গে এখন জরুরি প্রয়ােজন হচ্ছে জিনিসপত্রের দামকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা, যাতে কোনওরকম খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি দেখা না দেয়। কারণ গ্রামীণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতা সম্পর্কে সরকারের সচেতন থাকা উচিত, যাদের বেশিরভাগই বিপিএল শ্রেণিভুক্ত। যে রাজ্য বিনিয়ােগের গন্তব্য হিসাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, তাদের কাছে এটুকু ব্যবস্থাগ্রহণ অবশ্যই কাম্য। পুরীর কথা বলা যায় যা একদিকে দারিদ্র্য ও অন্যদিকে পর্যটনের সম্ভাবনার সাক্ষ্য বহন করছে। ওড়িশার ভারতের সাহায্য দরকার।