• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

স্ট্যালিনের নতুন তামিলনাড়ু

ডিএমকে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেট পেশ করার আগেই নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী পিটিআর পালানিভেল থিয়াগা রাজনের রাজ্যের আর্থিক দুর্দশা নিয়ে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ।

স্ট্যালিনের নেতৃত্বে ডিএমকে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বাজেট পেশ করার আগেই নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী পিটিআর পালানিভেল থিয়াগা রাজন রাজ্যের আর্থিক দুর্দশা নিয়ে এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে পূর্বের এআইএডিএমকে সরকারের রাজস্ব আদায়ে চরম ব্যর্থতার চিত্রটি তুলে ধরেন।

এর ফলে রাজ্যের কোষাগার যে শুন্য তা উল্লেখ করতে কসুর করেননি। নতুন সরকারের এমন শ্বেতপত্র প্রকাশের পিছনে যে কর বৃদ্ধির ইচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছে সে কথা বলেছেন রাজনীতিক ও অর্থনীতির পণ্ডিতরা। এছাড়া নির্বাচন পূর্ব ইস্তেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা যাতে মানুষ দাবি তুলতে না পারে সে বিষয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করারও কৌশল এমন প্রচেষ্টার পিছনে কাজ করছে বলে অভিমত দিয়েছেন রাজনৈতিক পণ্ডিতরা।

ডিএমকে ক্ষমতায় আসীন হওয়া এবং এম কে স্ট্যালিন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে আসীন হওয়ার আগেই রাজ্য সরকার ২০২১-২০২২ সালের জন্য ছত্রিশ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যা দেশের মধ্যে একটি রাজ্যের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পরিমাণ।

গত সপ্তাহে বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী রাজন রাজ্যের পেট্রোল বিক্রিতে যে সেস আদায় হয় তা থেকে লিটার পিছু পেট্রোলের মুল্যে তিন টাকা ছাড় দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের মনে একটা ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা হয়েছে যে নতুন সরকার কখনই সাধারণ মানুষের উপর করে বােঝা বাড়াতে চায় না।

তবে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে কেবল দ্বিচক্র যানের মালিকদের ক্ষেত্রেই। কারণ রাজ্যে দ্বিচত্র যানের ব্যবহার সর্বাধিক দেশের মধ্যে। বাইকই রাজ্যের মানুষের সাধারণভাবে ব্যবহৃত যানবাহন হিসেবে চিহ্নিত। একটি মাত্র সিদ্ধান্তেই সরকার তার রাজস্ব থেকে এক হাজার একশাে ষাট কোটি টাকা বছরে ক্ষতি স্বীকার করেছে।

কিন্তু এর ফলে বারাে শতাংশ পেট্রোল বৃদ্ধি পাওয়ায়-ক্ষতি আর ক্ষতি থাকছে না রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রোল বিক্রির পরিমাণ দিনে একানব্বই লাখ অষ্টাশি হাজার লিটার আশা করা হয়েছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেখানে দিনে বিক্রি হচ্ছে এক কোটি আট লাখ সতেরাে হাজার লিটার।

এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব বাবদ দিনে ৩.৫৫ কোটি টাকা এবং বছরে এক হাজার দুশাে কোটি টাকা আদায় হবে। অন্যদিকে রাজ্যের রাজস্ব আয় তিন টাকা মুল্য হ্রাস করেও অধিক হবে বলে হিসেবে দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের আয় এক হাজার একশাে ষাট কোটি টাকা অতিরিক্ত পেট্রোল বিক্রির ফলে।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের তামিলনাড়ু সরকারের এমন সাহসী সিদ্ধান্তের অনুকরণ করা জরুরি বলে অর্থনীতির পণ্ডিতরা মনে করেন। দুর্ভাগ্যবশত কেন্দ্রের সংগৃহীত করের থেকে প্রাপ্য অংশের হ্রাসই রাজ্যকে দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দশম আর্থিক কমিশন ১৯৯৬ ২০০০ সালে ৬.৬৩৭ শতাংশ থেকে একাদশ আর্থিক কমিশনে ৫.৩৮৫ শতাংশ এবং দ্বাদশ আর্থিক কমিশনে ৫.৩০৫ শতাংশ হয় হ্রাস পেয়ে।

এর পর চতুর্দশ ও পঞ্চদশ আর্তিক কমিশনে ২০১১ সালে আদমসুমারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তামিলনাড়ুর আর্থিক পাওনা আরও হ্রাস পায়। ২০১৭-১৮ সালে কর্পোরেট আয় করের বােঝা অনেকটাই কমিয়ে দেওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যগুলির প্রত্যক্ষ করের থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের অংশ হ্রাস করা হয়।

সাধারণের ঋণের বােঝার পরিমাণ ৫৭০,১৮৯ কোটি টাকা, যা রাজ্যে প্রতি পরিবারের উপর বােঝার পরিমাণ ২৬৩,৯৭৬ কোটি টাকা। থিয়াগাে রাজন তাই রাজ্যের বাজেটে মানুষের উপর আর বাড়তি বােঝা চাপাতে চাননি। কোভিডের সময়ে শিল্পের মন্দা কাটানাের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষে নতুন শিল্প স্থাপনে এক নজির গড়ার লক্ষ্যে সতেরাে হাজার একশাে একচল্লিশ কোটি টাকার পঁয়ত্রিশটি মৌ চুক্তি স্বাক্ষর করে।

দক্ষিণ এশিয়ায় রাজ্যকে সর্বাধিক শিল্পবান্ধব রাজ্য গঠনের জন্যই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এরই মধ্যে তামিলনাড়ুকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য কেন্দ্রের প্রাক্তন অর্থ সচিব এস নারায়ণ, অর্থনীতিবিদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ জিন ড্রেজ, কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ান, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং নােবেল পুরষ্কার প্রাপক ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনােলজির এস্থার ডুফলােকে নিয়ে এক পরামর্শদাতা কমিটি গঠন করা হয়েছে।