পাগলের প্রলাপ

ফাইল চিত্র

ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসির বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর সেদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, মন্দির অপবিত্র ও মূর্তি ভাঙার অপকর্ম, যা এখন চলছে, বন্ধ হবে? মনে হয় না। কারণ বাংলাদেশে এখনকার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতাদের আন্দোলন, লং মার্চ, চারদিনের মধ্যে কলকাতা দখল এবং বাংলা-বিহার এবং ওড়িশাকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তিকরণ (যুদ্ধ করে)— এই সব ‘পাগলের প্রলাপ’ বন্ধ না হলে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চলতেই থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারতের রাজনৈতিক মহল।

এই মহল বলছে, বাংলাদেশের তূণে এমন কী অস্ত্রশস্ত্র আছে যে ভারতের সঙ্গে লড়ে কলকাতা দখল? আর সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ না হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কখনওই উন্নতি হবে না। ভারতের সঙ্গে বৈরতা চললে বাংলাদেশেরই দুর্যোগ পোহাতে হবে— কারণ প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতার হাসপাতালে জটিল রোগের চিকিৎসা করে গেছেন। তাঁদের চেক আপের জন্য মাঝে মাঝেই কলকাতায় আসতে হয়, তা এখন বন্ধ বর্তমান পরিস্থিতির জন্য। তাঁরা ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ বাংলাদেশে তাঁদের পরবর্তী চিকিৎসার চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। এই রোগীদের না আসার ফলে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরাট আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

ভারতের বিদেশ সচিবের একদিন অবস্থানের মধ্যেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। এখন বিএনবি ও তার দোসর জামায়েত ইসলামী এবং পাকিস্তানপন্থীদের যোগসাজশে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ দিনদিন বাড়ছে। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের কথা ভারতের বিদেশ সচিব বাংলাদেশের বিদেশ সচিবের কাছে বৈঠকে তুললে বলা হয়, ‘এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আসে না— যা আজব কথা।


সুতরাং একটা পরিকল্পনা করেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ করে বিএনপি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে মৌলবাদীদের একজন নেতা ‘ইসকন’কে বাংলাদেশ থেকে উপড়ে ফেলার ডাক দিয়েছে। ইসকনকে ক্যানসারের সঙ্গে তিনি তুলনা করেছেন। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এখন ওই দেশের কারাগারে বন্দি। আগামী জানুয়ারির ২ তারিখে তাঁর কেসের শুনানি হবে। সেদিনও কোনও আইনজীবী তাঁর হয়ে সওয়াল করতে উঠে না দাঁড়ালে, ওই দিনও তিনি জামিন পাবেন কিনা, সন্দেহ। তিনি যাতে জেলবন্দিই থাকেন, তার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে চট্টগ্রামের আইনজীবীরা। কলকাতায় ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমন দাস চিন্ময় মহারাজের জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি জেলের কোনও খাবার খাচ্ছেন না— সুতরাং প্রায় অনাহারেই রয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বিধানসভায় বাংলাদেশের ঘটনাবলীর ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে সে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের বলেছেন, এমন কিছু না করতে যাতে হিংসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। একটি রাজনৈতিক দলের দিকে আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যাঁরা ভাবছেন এটা নিয়ে রাজনীতি করবেন, জেনে রাখুন, ওটি করতে গেলে আপনার রাজ্যেরই ক্ষতি হবে। তাই আমরা যেন এমন কোনও মন্তব্য না করি, যাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। বাংলাই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান স্তম্ভ। সেই সঙ্গেই বাংলাদেশের কোনও রাজনৈতিক নেতার হুমকিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন বাংলা, বিহার, ওড়িশা দখল করবে। এতবড় হিম্মত আপনাদের কেন, কারওরই নেই। আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। বাংলা, বিহার ওড়িশা নিয়ে নেবেন, আর আমরা বসে বসে ললিপপ খাব। আমরা ধর্মের পরীক্ষা দিই। আমরা যথেষ্ট সচেতন এবং সক্রিয়।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে এই বাংলার সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, আমরাও প্রতিবাদ করতে জানি। এদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে হিন্দু ঐক্যের স্লোগানে সরব ভারতীয় জনতা পার্টি। এই বিজেপির এক নেতা বলেছেন, সময় এসেছে বাংলাদেশকে একটা শিক্ষা দেওয়ার।

কিন্তু অনেকই হতাশা বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা দেখে। প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলছে। নিজ ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তবুও প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করছেন।

এদিকে ভারতীয় বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, হাসিনাকে নিয়ে তাঁদের অসন্তোষের কথা বলা হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই। তিনি বলেছেন, প্রাক্তন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে সেখান থেকে যেসব বিবৃতি দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের ক্ষতি করবে। তাঁকে সংযত থাকার কথা বলে দিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিবকে। আমরা যে তাঁর বিবৃতি পছন্দ করছি না, সেটা যেন তাঁকে জানানো হয়।

এটা অত্যন্ত পরিতাপের বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে যা করছে, তা নজিরবিহীন। বাংলাদেশ কেন ভুলে গেল, ভারতের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশ কখনওই স্বাধীন হতে পারত না। পশ্চিম পাকিস্তানের গোলাম হয়েই বাংলাদেশকে থাকতে হতো। ভাবা যায় না কারণ বাংলাদেশ ভারতের অবদানের কথা না ভেবে এমন অকৃতজ্ঞ হবে।