তবুও তো কিছুটা স্বস্তি। কিছুটা রেহাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন রাজ্যের গ্রিন জোনভুক্ত জেলাগুলিতে প্রাইভেট বাস চলবে। কিন্তু ২০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না। বাসে বসার সমস্ত যাত্রীদের দূরত্ব রক্ষা করে বসতে হবে- মাস্ক ছাড়া কোনও যাত্রীকেই বাসে উঠতে দেওয়া হবে না।
আর গ্রিন জোনের জেলায় যেসব বাস চলবে, তার চলাচল জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। জেলাগুলি করোনা মুক্ত হিসেবে চিহ্নিত। বাকি রইল অরেঞ্জ এবং রেড জোনভুক্ত জেলা। সেখানে যান চলাচল নিষিদ্ধই থাকবে। কারণ করোনার প্রকোপ।
এই গ্রিন জেলাগুলির মানুষ, জেলার মধ্যেই প্রয়োজনে বাসে যাতায়াত করতে পারবেন। যাত্রীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাস চলাচল শুরু হলে, বোঝা যাবে, সরকার অনুশাসন মেনে বসগুলি চলেছে কিনা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে অনেকে স্বাগত জানালেও, তারা যে মনে আনন্দ নিয়ে তা করলেন বলা যাবে না। কারণ এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের আক্রমণ এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসার কোনও লক্ষণ নেই। প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন— তুলনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা কম। সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারের নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলিতে নতুন করোনা আক্রান্ত, রোগীদের ভর্তি করার পয়সা নেই। তাঁদের চিকিৎসা সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। রোগী ভর্তির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির কোনওটিতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে, কিন্তু সেখানেও শয্যা সংখ্যা বেশ সীমিত।
তা ছাড়া এই সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের স্বার্থে, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি করতে চরম অনীহা প্রকাশ করছেন। বাধ্য হয়ে এই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে কোনও করোনা রোগীর ভর্তি হতে গেলে তাদের যেন ফিরিয়ে না দেওয়া হয়। সরকার ওই সব রোগীর চিকিৎসায় যে খরচ হচ্ছে তা বহন করবে।
শুধু কি রোগী ভর্তির সমস্যা? দু’জন চিকিৎসক ইতিমধ্যেই করোনার গ্রাসে চলে গেছে। বেশকিছু চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা রোগীর সংস্পর্শে এসে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন, যা স্বাস্থ্য দফতরকে চরম উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে।
চিকিৎসক এবং চিকিৎসা কর্মীরা আক্রান্ত হওয়া মানেই তাদের সংখ্যা কমে যাওয়া। তারা সুস্থ হয়ে উঠলেও নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে থাকার পরই আবার চিকিৎসার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারবেন।
এক মাসের বেশি সময় লকডাউনের মধ্যে গৃহবন্দি থাকার পর গ্রিন জোনের জেলাগুলির মানুষ মুক্ত হয়ে চলাফেরা, আলোবাতাস ভোগ করতে পারবেন। তারা খুশি হলেও, রাজ্যের সিংহভাগ জেলাগুলির অধিবাসীদের লকডাউনের যন্ত্রণার মধ্যেই থাকতে হবে।
খোদ কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক অঞ্চল রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত। তার অর্থ এই সব অঞ্চলে করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন অনেকেই। তারা এখন চিকিৎসাধীন।
এখন যে প্রতিদিন নতুন করোনায় আক্রমণের কেস হচ্ছে, তার বেশির ভাগ এই জেলাগুলি থেকে। এখানে সংশ্লিষ্ট অঞ্চল সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং নাগরিকদের বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ। উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শয্যা নিয়েছে।
বাকি রইল অরেঞ্জ জোনের জেলাগুলি। এই জেলাগুলিতে করোনা কেস মিললেও, এখন তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই জোনের জেলাগুলিও গ্রিন জোনে রূপান্তরিত হচ্ছে। যদি লকডাউন সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি ঠিক ঠিক মতো মেনে চলা হয়।