• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

নির্বাচনী বন্ড কিছু প্রাথমিক প্রশ্ন

পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রাথমিক প্রশ্ন কেন? কারণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে বিশ্লেষণ করার সময় নেই৷ তাই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত বা সংবাদপত্রের বিশ্লেষণের উপর তাঁদের নির্ভর করতে হয়৷ প্রাথমিক তথ্য যা পাওয়া গেছে তার উপরে নির্ভর করছি বলেই প্রাথমিক প্রশ্নের অবতারণা৷ যাঁদের কাছে সঠিক উত্তর থাকা সম্ভব তাঁদের প্রশ্ন করা নিরাপদ নয় ভেবেই

পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
প্রাথমিক প্রশ্ন কেন? কারণ সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে বিশ্লেষণ করার সময় নেই৷ তাই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত বা সংবাদপত্রের বিশ্লেষণের উপর তাঁদের নির্ভর করতে হয়৷ প্রাথমিক তথ্য যা পাওয়া গেছে তার উপরে নির্ভর করছি বলেই প্রাথমিক প্রশ্নের অবতারণা৷ যাঁদের কাছে সঠিক উত্তর থাকা সম্ভব তাঁদের প্রশ্ন করা নিরাপদ নয় ভেবেই পাঠক সমাজের কাছে প্রশ্নগুলি এক এক করে রাখছি৷ আপনারা সম্ভাব্য যে উত্তর দিতে পারেন সেটা অনুভব করে উত্তরগুলি লিখব৷ বাকি বোঝার কাজটা আপনাদের নিজস্ব৷
প্রশ্ন : আচ্ছা, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কেন পুরো তথ্য ৩০শে জুনের আগে দিতে চায়নি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও?
উত্তর : সরকার বাহাদুর হয়ত এটাই চায়৷ আর হয়ত তাদের তথ্য প্রস্ত্তত নেই৷
প্রশ্ন : তাহলে একদিনের মধ্যে কী করে তথ্য জমা পড়ল?
উত্তর : ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের হাত-পা বাঁধা চেয়ারম্যান বা ম্যানেজিং ডিরেক্টরদের কাছে৷ যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাও জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত৷ পুরো তালিকা এখনও প্রস্ত্তত নেই৷
প্রশ্ন : আচ্ছা, মোট ১২,১১৫ কোটি টাকার বন্ডের মধ্যে প্রায় অর্ধেক ৬,০৬০.৫০ কোটি টাকা ব্যবহার করেছে বিজেপি৷ কেন?
উত্তর : সবচেয়ে বৃহৎ দল৷ তাই তাদের খরচপাতি বেশি৷
প্রশ্ন : এটাই যদি কারণ হয়, তাহলে ব্যাঙ্কের ইতস্তত করার কারণ কী?
উত্তর : সব প্রশ্নের উত্তর থাকে না৷
প্রশ্ন : আপনাকে কমেন্ট করতে বলিনি, শুধু উত্তর দেবেন৷
উত্তর : আচ্ছা৷
প্রশ্ন : আচ্ছা, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল না হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস কেন বিজেপির পরে দ্বিতীয় দল হিসেবে ১,৬০০.৫০ কোটি টাকা ব্যবহার করেছে?
উত্তর : প্রশ্ন করতে থাকুন৷ ঠিক সময়ে উত্তর পেয়ে যাবেন৷
প্রশ্ন : হঁ্যা, সাধারণ মানুষের উপর আমার আস্থা আছে৷ আচ্ছা বিদেশি সংস্থা সান্টিয়াগো মাটিন অধিকৃত সংস্থা ফিউচার গেমিং কেন সবচেয়ে বেশি ১,৩৬৮ কোটি টাকার বন্ড কিনেছে?
উত্তর : নিশ্চয়ই কাগজে পড়েছেন যে এই কোম্পানি ভারতে বেশ রমরমিয়ে ব্যবসা করে৷ তার মধ্যে আছে সংবেদনশীল লটারি ব্যবসা৷ ভারতের নয়টি রাজ্যে এই ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে৷ তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে৷
প্রশ্ন : বাহ! আপনারা তো বেশ সুন্দর উত্তর দিলেন৷ কারণ কী বলতে পারেন?
উত্তর : ফিউচার গেমিং-এর ভারতে ২০২০-২১ সালে ব্যবসার পরিমাণ ছিল ২০,০০০ কোটি টাকা৷ আর লটারি ব্যবসার উপর জিএসটির হার ২৮%৷ এইভাবে তারা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে শুধু ২০১৭ সালে ৬০০০ কোটি টাকা জিএসটি দিয়েছে৷ কেন্দ্র যেখানে অর্থ দেয় না, সেখানে বামপন্থী কেরলের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও এই লটারি ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গে তো ৩৪ বছর ধরে বামপন্থী সরকার ছিল৷
প্রশ্ন : আপনাদের মন্তব্য করতে নিষেধ করেছি৷ আচ্ছা, ফিউচার গেমিং-এর ওয়েবসাইট বলছে ওই কোম্পানি নাকি ভারতে ব্যবসা করার ফলে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থান করেছে৷ মাত্র ২০,০০০ কোটি টাকার ব্যবসায়ে এত সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব?
উত্তর : তথ্যের মধ্যে ‘পরোক্ষ’ কথাটা আছে৷
প্রশ্ন : সত্যিই আপনাদের বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হবে৷ আচ্ছা, এইভাবেই কী ভারত সরকার নির্ধারণ করেছে ভারতে দারিদ্র্যের হার ৫%-এর নীচে?
উত্তর : আপনি আপনার প্রসঙ্গের বাইরে প্রশ্ন করেছেন, তাই উত্তর দেব না৷
প্রশ্ন : সরি! আগে একটা প্রশ্ন করেছিলাম, দ্বিতীয় দল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ কেন…?
উত্তর : ওই লটারি ব্যবসা করতে দেওয়ার ফায়দা তো তুলতে হবে৷ আর ঘরে ঘরে এত টাকা একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই পাওয়া যায়৷
প্রশ্ন : এই উত্তরটা আমি অংশত নেব৷ আচ্ছা, ফিউচার গেমিং নাকি সিকিম সরকারের ৯১০ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে লটারির টিকিটের মূল্য অত্যধিক বাড়িয়ে? এই নিয়ে সিকিম হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল (জানা যায় বিজেপির মদতে)৷
উত্তর : মামলার রায়ে হাইকোর্ট বলে যে, মামলাতে আবেদনকারী ২৬ জুন, ২০১৭ সালের একটি বিলের মাধ্যমে এই ক্ষতির প্রশ্ন তুলেছেন৷ কিন্ত্ত আবেদনকারীর উকিল যে সিএজি রিপোর্টের কথা বলেছেন তা ২০১০-২০১৬ সাল সংক্রান্ত৷ এর পরের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে আদালত কোনও অসঙ্গতি পাননি আর কোম্পানি সিকিম সরকারের সঙ্গে লটারি ব্যবসার চুক্তি করে ২০১৭ সালে৷ তাই মামলা খারিজ করে দেন মহামান্য হাইকোর্ট৷ অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে, কোম্পানি এর আগে চুক্তি ছাড়াই ব্যবসা করেছে ঘুরপথে৷ আর বিপদ বুঝে চুক্তি করে নিয়ে সতর্ক হয়ে গেছে৷
প্রশ্ন : খুব সুন্দর উত্তর দিলেন৷ মহামান্য হাইকোর্ট অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো হলে হয়ত কোম্পানির ২০১০-১৬ সালের কাজকারবার খতিয়ে দেখতে সিবিআইয়ের রিপোর্ট চাইতেন৷
উত্তর : শেষোক্ত মানুষটির কথা আর বলবেন না৷
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন আদানি-আম্বানির নাম তালিকায় নেই কেন?
উত্তর : দেশ কারা চালায়?
প্রশ্ন : একমাত্র জানতে পারলাম যে অনেক কোম্পানি নিজেদের লাভের থেকে অনেক বেশি অর্থের বন্ড কিনেছে৷ এটা কী করে সম্ভব হল?
উত্তর : গরিব কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা কন্যার বিবাহের জন্য কীভাবে অর্থ জোগাড় করে? পুত্রের ব্রেনে টিউমার হলে গরিব পিতা কী করে? ধার করে৷ তেমনি কোম্পানিগুলি শুধু লাভ থেকে খরচ করবে কেন? হয়ত সঞ্চিত রিজার্ভ ফান্ড আছে৷ অথবা ধার করবে৷ জানেন না ‘আনসিকিউরড লোন’ করার রাস্তা আছে, যা দেবে কোম্পানির ডিরেক্টর বা ডিরেক্টরদের পরিবারবর্গ৷ নির্বাচনী বন্ড কেনা আর গরিব পিতার কন্যার বিবাহ দেওয়া একই কথা৷ আসলে খবরের কাগজ নানানভাবে ফায়দা তুলে, সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করবে৷
প্রশ্ন : ঠিক বলেছেন৷
প্রশ্নকর্তা আকস্মিকভাবে সাক্ষাৎকার মুলতুবি রাখলেন৷ সহূদয় পাঠককুল৷ অন্যায় করে থাকলে মার্জনা করে দেবেন৷