• facebook
  • twitter
Tuesday, 26 November, 2024

ছাড় পাননি শিবাজীও

মারাঠীদের কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধার মানুষ শিবাজীর মূর্তি ভেঙে পড়ার ঘটনা শোরগোল ফেলের দিয়েছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে

মারাঠীদের কাছে ছত্রপতি শিবাজীর গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার এক ব্যক্তিত্ব। রাজ্যের সিন্ধু দুর্গ জেলার মালভানে রাজকোট দুর্গে ৩৫ ফুটের ছত্রপতি শিবাজীর ওই মূর্তি শুধুমাত্র একজন বীর বা নেতারই মূর্তি নয়, মারাঠীদের কাছে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যও বলা যায়। সেই মূর্তি ভেঙে পড়ল হুড়মুড়িয়ে। এমন ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের শিন্ডে-ফড়নবিশ-অজিত পাওয়ার সরকারকে তীব্র ভাষায় বিঁধেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হবে বলে তড়িঘড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল ওই মূর্তি। সেদিকেই নজর ছিল বেশি রাজ্য সরকারের। কিন্তু কী সরঞ্জাম দিয়ে এমন বৃহৎ মূর্তি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেদিকে নজর ছিল না রাজ্য সরকারের। এর পিছনে কাটমানি রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধী নেতারা।

কীভাবে এবং কী কারণে অত বড় মাপের মূর্তি ভেঙে পড়ল, সে সম্পর্কে সরকারিভাবে এখনও কিছু স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, কয়েকদিন যাবৎ মহারাষ্ট্রের ওই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। এ কারণে মূর্তি ভেঙেছে বলা না হলেও হাবেভাবে সেটাই প্রচার চালানো হচ্ছে। জেলা এবং পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখছেন। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষার বিষয়টিতেও নজর দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

যেখানে শিবাজীর মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছিল, সেই রাজকোট দুর্গের সঙ্গে শিবাজীর যোগাযোগ ছিল গভীর। এ কারণেই ওই দুর্গ মহারাষ্ট্রের এক ঐতিহাসিক স্থান হিসাবে চিহ্নিত। সেখানেই শিবাজীর মূর্তিটি ভেঙে পড়ার মতো ঘটনা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী বলেই মনে করছেন মহারাষ্ট্রের মানুষ। এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ।
গতবছর ৪ ডিসেম্বর ৩৫ ফুটের ওই মূর্তি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নৌ দিবস হিসাবে ওই মূর্তি উদ্বোধন করা হয়। ওই দুর্গে মূর্তি উদ্বোধনকে ঘিরে অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে দিয়েই উদ্বোধন করা হবে বলে দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ করে চমক দিতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। মূর্তি মাত্র ৮ মাসের মধ্যে ভেঙে পড়ল, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। অত্যন্ত নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে নির্মিত হলেই এমন ঘটনা ঘটা সম্ভব। তাড়াহুড়োর সঙ্গে কাটমানির যোগসূত্র আর নজরই দেওয়া হয়নি মূর্তির গুণমান নিয়ে। এই অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। অভিযোগের তির অবশ্যই রাজ্যের জোট সরকারের বিরুদ্ধে। আবার এর সঙ্গে ভারতীয় নৌ বাহিনীও জড়িত। মূর্তি নির্মাণে নৌ বাহিনীর ভূমিকা থাকার কারণে তারাও এখন কাঠগড়ায়।

মূর্তি নির্মাণের সরঞ্জামের দিকে যেমন নজর ছিল না, তেমনই রক্ষণাবেক্ষণেও কোনও দৃষ্টি ছিল না রাজ্য প্রশাসনের। শিবসেনা শিন্ডে-বিজেপি-এনসিপি অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী পরিচালিত রাজ্য সরকারের অনেক বেশি তৎপরতা ছিল প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে মূর্তি উদ্বোধনের দিকে। সেই অনুষ্ঠান পরিচালনায় ব্যস্ততাই ছিল বেশি। এনসিপি (শারদ পাওয়ার) দলের রাজ্য সভাপতি জয়ন্ত পাতিল মূর্তি ভেঙে পড়ার জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন রাজ্য সরকারকেই। তাঁর অভিযোগ, ‘রাজ্যের বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হলো নতুন নতুন টেন্ডার, কমিশন নেওয়া এবং সেই ভিত্তিতে বরাত দেওয়া ঠিকাদার-সরবরাহকারীদের।’

চলতি বছরের শেষের দিকেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন। ফলে মারাঠীদের কাছে সবচেয়ে শ্রদ্ধার মানুষ শিবাজীর মূর্তি ভেঙে পড়ার ঘটনা শোরগোল ফেলের দিয়েছে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে। শিবাজীর সঙ্গে মারাঠীদের এতটাই আবেগ জড়িত যে এখন নৌ বাহিনীর ওপর দোষ চাপানোর পাশাপাশি রাজ্য সরকারের এই ঘটনায় কোনও দায় নেই, এটা বোঝানোর মরিয়া উদ্যোগ চালাচ্ছেন মন্ত্রী-সান্ত্রীরা।

শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউথ সরাসরি শিবাজী মূর্তি নির্মাণে দুর্নীতি জড়িয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের ইস্তফার পাশাপাশি পূর্তমন্ত্রী রবীন্দ্র চ্যবনকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছেন। বলেছেন, এঁরা দুর্নীতিতে মদত জোগাতে গিয়ে শিবাজীকে পর্যন্ত রেহাই দিচ্ছে না। যে ঠিকাদারকে দিয়ে মূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ।

এখন দায় এড়ানোর জন্য চলছে নানা যুক্তি দেখিয়ে চাপানউতোর। বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা শুধু নয়, মহারাষ্ট্রবাসীর অনুভূতির কথা ভেবেই বলা হচ্ছে, আরও বড় মূর্তি এখানেই স্থাপিত হবে। ভোটের আগে সেদিকেই নজর এখন মহারাষ্ট্র সরকারের।