• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের তীব্র প্রতিবাদ একান্ত জরুরি

রক্তাক্ত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নগ্ন ধর্মীয় পরিচয়ের বিরুদ্ধে

ফাইল চিত্র

স্বপনকুমার মণ্ডল

দেশভাগের রক্তক্ষরণ যে এখন বন্ধ হয়নি, বা বলা ভালো বন্ধ করা যায়নি,তা ভারতের প্রতিবেশী দেশের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক বিক্ষিপ্ত- বিচ্ছিন্ন হামলা থেকে নির্বিচারে হত্যালীলা চালিয়ে দেশকে অস্থির করে তোলার মধ্যেই প্রতীয়মান। সেক্ষেত্রে জম্মু-কাশ্মীরের অধিকার নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে অচিরেই শত্রুতায় পরিণত হয়েছিল, তার জের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো দুই দেশের অশান্তির কারণে পরিণত হয়। সেখানে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের শান্তি ফিরিয়ে আনাই পাকিস্তানের অশান্তির আধার হয়ে ওঠে। তার করুণ পরিণতি কত ভয়ঙ্কর নৃশংস আকার ধারণ করতে পারে,তার পরিচয় ২২ এপ্রিলের ভূস্বর্গ কাশ্মীরের জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট পহেলগাঁও -এর বৈসরণে ২৬ জনকে অহিন্দু সন্ত্রাসীরা নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যার মধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। পরিকল্পনা করে ফৌজির পোশাক পরে ঠান্ডা মাথায় যেভাবে বিবস্ত্র করে দীর্ঘ সময় ধরে নানাভাবে পরীক্ষা করে বেছে বেছে ২৪ জন হিন্দুকে পরিবারের সামনে মেরা ফেলা হয়,তা শুধু নিছক সন্ত্রাসবাদী হামলা নয়,বা, দেশের সুরক্ষার পক্ষে অশনি সংকেতেই তা সীমাবদ্ধ নয়, ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে আঘাত হেনে দেশের অখণ্ড ও ঐক্য চেতনাকেই বিনাশ করার ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র। সেদিক থেকে পহেলগাঁওয়ের নৃশংস হত্যায় মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গুলি শুধু প্রাণে মারার লক্ষ্য চলেনি,মনে মারার আয়োজনেও সক্রিয় হয়েছে। সরাসরি সন্ত্রাসীদের মুখে হিন্দুনিধনের বার্তা যেভাবে উঠে এসেছে,তা অভূতপূর্ব ধর্মীয় জেহাদ। সেখানে স্বামীর সঙ্গে মেরে ফেলার জন্য গুলি করা কথা বললে তা প্রত্যাখ্যান করে সন্ত্রাসীর মুখে প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা পৌঁছানোর কথা উঠে আসে। এ যে হত্যালীলা চালিয়ে শুধু কাশ্মীরকে অস্থির করে তোলা নয়, সেইসঙ্গে তা যে কেন্দ্রকে চেতাবনি দিয়ে মৌলবাদীদের শক্তি প্রদর্শনের প্রয়াস,তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।

Advertisement

সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভূস্বর্গ আবার তার স্বমহিমায় ফিরে আসার মহৎ উদ্যোগকে সফল না হওয়ার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার নিশানা লক্ষ্যভেদী হয়ে উঠেছে,তা হিন্দু পর্যটকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে প্রমাণ প্রকট করার মধ্যেই সহজবোধ্য হয়ে ওঠে। সেখানে হিন্দু পর্যটকদের গুলি করে মারার মধ্যে সন্ত্রাসীদের নগ্ন পরিচয়ে যেমন ধর্মীয় সন্ত্রাসের ছবিটি স্পষ্ট করে তুলেছে,তেমনই দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তার লক্ষ্যভেদী জেহাদ প্রকট হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, সেক্ষেত্রে হিন্দুরাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবাদী সরকারের জম্মু-কাশ্মীরের শান্তি ফিরিয়ে এনে শক্তিশালি দেশ গঠনের প্রয়াসের ব্যর্থতাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রেও এই হত্যালীলা এক ঢিলে অনেক পাখি মারার কৌশল বেরিয়ে। ইতিমধ্যেই অসংখ্য মানুষের মৃত্যুতে সরকারবিরোধী দল ও জনগণের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলা হত্যালীলায় বিরূপ সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীর অভাব থেকে সরকারের শান্তি প্রতিষ্ঠার ঔদ্ধত্যকেও অনেকেই দায়ী করছেন। অথচ তাতে বিরোধিতার নামে অন্ধ বিরোধিতা করতে গিয়ে সরকারের সৎসাহস থেকে তার বৈপ্লবিক উদ্যোগও সমালোচিত হয়।

Advertisement

আসলে ধর্ম ভেদে দেশভাগ হলেও ধর্মীয় বিদ্বেষ তার স্বভাবদোষে জেগে ছিল অবিরত এবং এখনও তা বর্তমান। এজন্য দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে দেশভাগের শিকারে স্বদেশে পরবাসীর মর্মান্তিক পরিণতিও অবিস্মরণীয় হয়ে ওঠে নিরন্তর। সেখানে সাতচল্লিশে ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে তার ডানা ছেটে পাকিস্তান সৃষ্টি থেকে একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটলেও সে দেশদুটিতেই সংখ্যালঘু হিন্দুদের ট্র্যাজিক পরিণতি ক্রমশ তার সংখ্যা হ্রাসের মধ্যেই প্রকট হতে থাকে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে গতবছর ২০২৪-এর ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর মৌলবাদী মদতপুষ্ট অন্তবর্তী সরকারের শাসনকালে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের শিকারে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নির্বিচারে নৃশংস নির্যাতন ও হত্যালীলা থেকে ভিটেছাড়া করার ধারাবাহিকতা ক্রমশ হিন্দুনিধন যজ্ঞে পরিণতি লাভ করে। সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণে মৌলবাদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তোলে, মানুষের ধর্মীয় পরিচয়ই শেষ কথা হয়ে ওঠে। সেখানেই শেষ নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ হিসেবে ভারতের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাবই সে দেশের মৌলবাদীদের আধিপত্য বিস্তারে আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠে, দেশপ্রেমেও তা প্রাধান্য লাভ করে। ভারতবিরোধিতা থেকে ভারতবিদ্বেষের মূলে যে হিন্দুদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্য থেকে হিন্দুদের সমর্থনপুষ্ট সরকারের অস্তিত্ব ও শ্রীবৃদ্ধি,তা ধর্মান্ধ জেহাদি মৌলবাদীদের ভাষাতেই বারবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেখানে হিন্দুরাষ্ট্রের আধিপত্যকে অস্বীকার করে তা ধ্বংস করায় উগ্র মৌলবাদীদের নগ্ন হিন্দুবিদ্বেষে ভারত তথা হিন্দুস্তান দখলের জিগিরে ও তার জেহাদি ঘোষণায় প্রকাশ্যে চলে আসে।

শুধুমাত্র ধর্মীয় ঐক্যেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তান পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে পুনরায় সখ্যতার আধারে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়ে ওঠার মতো ভারতকে বিচ্ছেদ করে গড়ে ওঠা দুটি প্রতিবেশী দেশই এখন তার চরম শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আর তাদের শত্রুতার মূলাধার ধর্মীয় আধিপত্য বিস্তার। ধর্মীয় জেহাদে পূর্ব-পশ্চিমের দুটি দেশই ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলে আঘাতে তার ঐক্যের মহীরূহকে উপড়ে ফেলার সক্রিয় প্রয়াসে কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এর হিন্দুনিধন যজ্ঞ আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত নয়। এতদিন যা ছিল মেঘের আড়ালে, এখন তা দিনের আলোতে। কেননা মেঘের আড়ালের যুদ্ধ করে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্য ও অখণ্ড চেতনাকে ভাঙতে পারেনি বলেই এখন তা প্রকাশ্যে এনে সংঘাতে সক্রিয় হতে চায়। কথায় বলে অন্ধের কিবা দিন, কিবা রাত। ধর্মান্ধ মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের জেহাদি চেতনায় হিন্দুদের দেশ হিসেবে ভারতের আধিপত্যকে ধ্বংস করাই তাদের চরম লক্ষ্য।

সেদিক থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে ২০১৯-এর ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা তুলে নিয়ে সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে যেভাবে তার শান্তি শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের আবহ তৈরি হয়েছে, তা তার ক্রমাগত নিরুপদ্রবে পর্যটন শিল্পের জোয়ারেই প্রতিফলিত মনে হয়। ২০২১ থেকে কোটি কোটি পর্যটকের ভিড়ে জম্মু-কাশ্মীরের চেহারাই বদলাতে শুরু করে। সেখানে কাশ্মীরে শান্তি ফিরে আসা থেকে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকায় বাইরে থেকেই শুধু নয়, কাশ্মীরিদের মনেও সন্ত্রাসীদের উপেক্ষা ও বঞ্চনার পালে হাওয়া অকেজো হয়ে পড়ে,নতুন করে বাঁচার আনন্দের স্বপ্ন মনে হয়। এজন্য দেশবিদেশের পর্যটকদের ভিড়ে পর্যটনের ভরা মরশুমে অতর্কিতে সন্ত্রাসীদের হামলায় অসংখ্য হিন্দুদের গুলি করে মারার ঘটনায় বিপর্যস্ত কাশ্মীরিদের তীব্র প্রতিবাদী মিছিলই শুধু নয়,সেখানে হিন্দু মুসলমানের ঐক্যের ছবি থেকে নিশ্চিন্তে ভ্রমণের আন্তরিক আমন্ত্রণেই তার পরিচয় প্রকট হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, সেখানে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত ২৬ জনের মধ্যে একজন কাশ্মীরিও রয়েছেন। চোখের সামনে নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের মৃত্যু দেখে টাট্টু ঘোড়ার সহিস আদিল হুসেন শাহ জঙ্গিদের বন্দুক কেড়ে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের গুলিতেই প্রাণ হারান। সেক্ষেত্রে কাশ্মীরিদের মধ্যে জঙ্গিদের প্রতি সমর্থন নেই,উল্টে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে,তা তাঁদের নিরাপত্তার অভাবের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধীদের মতো অন্ধ বিরোধিতা না থাকাতেও প্রকাশিত। পহেলগাঁও কাশ্মীর সীমান্তে নয়, শ্রীনগরের পূর্বাংশ তার স্থিতি। বছর পাঁচেক ধরে সেখানে নিরুপদ্রব শান্তি করছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে নিরাপত্তার বিষয়টি ঔদাসীন্যের শিকার হয়ে ওঠে। এজন্য মৌলবাদীদের হত্যালীলার নেপথ্যে জোরালো দাবির চেয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষের জেহাদ বড় হয়ে ওঠে। অথচ তার পরিচয় মৌলবাদীদের ধ্বংসকামী কার্যক্রমের মধ্যেই লক্ষ করা যায়। শুধু তাই নয়, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপে আইন প্রণয়ন থেকে আইন প্রয়োগে ধর্মীয় মৌলবাদীদের অস্তিত্ব সংকট অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেখানে মনের জোর কমে গেলে লোকে পেশির জোর দেখায়,হিংস্র হয়ে ওঠে। এজন্য মৌলবাদী শক্তির বিস্তারে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের পর সে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র যাওবা ছিল,তা ইসলামীকরণের পথে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সেখানে বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে থাকে। সেক্ষেত্রে মৌলবাদীদের স্বদেশে হিন্দুদের ঠাঁই না মেলা বার্তা চরম আকার ধারণ করে। তার রেশ যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ ভারতের দিকেও প্রসারিত হবে,তা নিয়েও জেহাদি ঘোষণা নানাভাবেই প্রকাশিত হয়।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশোধিত ওয়াকফ বিল সংসদে উভয় কক্ষে পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আইনে পরিণত হলেও তার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের হিংসাশ্রয়ী সক্রিয় আন্দোলনে ধর্মীয় বিদ্বেষে হিন্দুদের উপরে বর্বরোচিত আক্রমণ নেমে আসে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদের সেই নৃশংসতায় নিরীহ হিন্দুদের কুপিয়ে হত্যা,বাড়িঘর পোড়ানো, ধনসম্পত্তি লুট থেকে ভিটেছাড়া করে সর্বস্বান্ত করার নারকীয় আয়োজন অবাধে চলে বেশ কয়েকদিন ধরে। এখনও অসংখ্য হিন্দু শরণার্থী শিবিরে বা অন্য রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে আছে ,ঘরে ফিরে আসতে পারেনি তাঁরা। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে ধর্মীয় বিদ্বেষের নৃশংসতা এখনও বন্ধ হয়নি,তার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের হিন্দুদের স্বদেশেই পরবাসীর জীবনসংশয়ী আক্রমণ নেমে আসে। সেই আক্রমণে নগ্ন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ছবি মিলিয়ে না যেতেই কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হিন্দুনিধন যজ্ঞ শুধু দেশের ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপরেই ভয়ঙ্কর আঘাত হানেনি, সন্ত্রাসীদের জাতকেও চিনিয়ে দিয়েছে,তাদের লক্ষ্যও স্পষ্ট করে তুলেছে।

দেশে চলা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে মৌলবাদীদের সঙ্গে তার বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই। বরং যা এতদিন আড়ালে,অন্তরালে ছিল,তা প্রকাশ্যে আসায় ভারতীয় মূল্যবোধ আরও শক্তিশালী হওয়ার অবকাশ পেল। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যেই দেশের মহত্ত্বের আকাশ ,তার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রই তার শক্তির প্রকাশ। সেখানে ধর্মীয় মৌলবাদীদের শঠতা,স্বার্থপরতা দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ হয়ে ওঠায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের আসল উদ্দেশ্য সামনে চলে এসেছে। যে ধর্ম মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে,তাই যুদ্ধের কারণ হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের আপন দেশেই অভাব অনটন ও দারিদ্র থেকে পারস্পরিক ক্ষমতাযুদ্ধ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব,হত্যালীলা, চরম অব্যবস্থা ও বৈষম্যপীড়িত সমাজজীবনে অশান্তির ঘনঘটা।

সেখানে মানুষকে হত্যা করে যারা ধর্মকে বাঁচায়,তারা ধার্মিক নয়,বরং তারা ধর্ম ব্যবসায়ী। তারা ধর্মকে বিজ্ঞাপন করে মানুষের মনে ধর্মের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার মিথ্যা স্বপ্ন ফেরি করে। সেই ধর্মের দেশগুলিই আজ অধর্মের সবচেয়ে বড় শিকার। বিশ্বের দেশগুলিই তার পরিচয়ে মুখর। সেখানে ধর্মীয় শাসনে মানুষের ধর্মই বিপন্ন। সেক্ষেত্রে মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের নগ্ন ধর্মীয় হাতিয়ার যত প্রকাশ্যে আসবে,ততই তার ধার ও ভার কমে যাবে। খাপে ঢাকা তরবারি খাপহীন হলে তার নগ্নতায় ভয় কমে আসে,জং ধরে ধার কমে যেতে শুরু করে। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যের আবহাওয়ায় মৌলবাদীদের বিচ্ছিন্ন করার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের নগ্ন পরিচয় অচিরেই শুধু গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে না, দেশকে আরও সুসংঘবদ্ধ শক্তিশালী করে তুলবে। সন্ত্রাসীদের হত্যালীলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ধর্মনিরপেক্ষ দেশের একতাবদ্ধ আত্মিক প্রকৃতিই তার প্রমাণ দিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, এজন্য রক্তাক্ত কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নগ্ন ধর্মীয় পরিচয়ের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের তীব্র প্রতিবাদ জানানো একান্ত জরুরি মনে হয়।

Advertisement