করােনার দ্বিতীয় ঢেউ একটি ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিল। একদিকে নির্বাচনের উন্মাদনা, অপর দিকে করােনা সংক্রমণ প্রতিরােধে স্বাস্থ্য বিধি মানার মানুষের এখন থেকেই নিজেকে বাঁচাতে মাস্ক পরা, দুরত্ববিধি যথাসম্ভব মেনে চলা, অবশ্যই মেনে চলা জরুরি।
করােনা রুখতে সমস্ত বিধি না মেনে চললে, একটি বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে রাজ্য। তখন চিকিৎসকরাও প্রাণ বাঁচাতে দিশা হারিয়ে ফেলবেন। করােনা প্রতিরােধের সমস্ত নিয়মকানুন মানার সাথে সাথে প্রতিষেধক অর্থাৎ টিকা নিতেও দ্বিধা, অবহেলা ভুলে কলকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রথম দফার নির্বাচন শেষ—- দ্বিতীয় দফা আগামী বৃহস্পতিবার (এপ্রিল ১)। করােনার বাড়বাড়ন্তের মুলে নির্বাচন উপলক্ষে রাজ্যজুড়ে সভাসমিতি, রােড শাে, দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভােট চাওয়া যে অনেকটাই দায়ী, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। সভা সমিতিতে লক্ষ লক্ষ লােকের সমাবেশ- যাদের কারওর মুখেই মাস্ক নেই, দুরত্ববিধি মানা তাে একেবারে অসম্ভব।
নেতারা নিজেরা মাস্ক পরে বক্তৃতা দিচ্ছেন, কিন্তু তাদের কথা যারা শুনতে এসে জমায়েত হয়েছেন, তাঁদের করােনা নিয়ে সতর্ক করে মাস্ক পরা সহ অন্যান্য বিধি মানার উপদেশ দিচ্ছেন না।
ভােট চাওয়ার চেয়ে এটা কি কম গুরুত্বপূর্ণ একজন জনপ্রতিনিধির কাছে? তা ছাড়া এখন যেসব রাজ্যে করােনার বাড়াবাড়ি, সেখান থেকে লােকজন নানা কাজে এ রাজ্যে ঢুকছেন—সংক্রমিত হয়ে। কীভাবে তাদের আটকানাে যাবে? প্রশাসন দিশাহীন।
এখন রাজ্যে প্রতিদিন যেভাবে করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ এড়াতে লকডাউন জারি — অথবা তা না হলে অবিলম্বে অন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। মাথার ওপর নির্বাচন, তাই লকডাউন হয়তাে সম্ভব নয়, কিন্তু মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক — আইন হলেও, তা প্রয়ােগ করতে প্রশাসনের এত শিথিলতা কেন?
কেন পুলিশ মাস্কহীন পথচলা মানুষকে ধরে জরিমানা করছে না — অথবা আগের মতাে ওঠবােস বা বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছে না? একথাও পুলিশও পারে মাস্ক পরা সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়ােগ করা রাস্তায় চলা প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে ছ’জনকে দেখা যায় মাস্কহীন।
লােকাল ট্রেনে, মেট্রো রেলে, বাসে ট্রামে এবং অন্যান্য যানবাহনে দূরত্ববিধি মেনে চলা অনেক আগেই উঠে গেছে। করােনা যে ভয়ঙ্কর রূপে বাড়ছে- তা সরকারি পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে। এক মাস, দেড় মাস আগেই রাজ্যে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় করােনায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শােতে নেমে এসেছিল। তিন-চারদিন মৃত্যুহীন ছিল বাংলা।
সেই করােনা বাড়তে বাড়তে এসে দাঁড়াল ৮১২ জন একদিনে (২৮ মার্চ)। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু এই সময় দু’জন। এই পরিসংখ্যান রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের। মৃত্যু কম হলেও, তা নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনও অবকাশ নেই। যে কোনও সময় তা বাড়তে পারে।
নির্বাচন শেষ হয়ে ফলাফল ঘােষণা হতে এখনও এক মাসের বেশি সময় বাকি— এই সময় মানুষ সতর্ক হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনে বড় বিপদ। পৃথিবী করেনা মুক্ত হবে এই আশা এখন দুরাশা। ইউরােপের বেশ কয়েকটি দেশে করােনার নতুন স্ট্রেন বার বার জাঁকিয়ে বসছে। বার বার লকডাউন ঘােষণা করতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে একটি সতর্কবাণীতে বলেছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে করােনা বিদায় নেবে, এ আশা করা ভুল। সুতরাং সতর্কতার সঙ্গে করােনা প্রতিরােধের সমস্ত বিধি মেনে চলতে হবে সব দেশের। পশ্চিমবঙ্গে করােনার বিপদ বাড়ল– করােনা প্রতিরােধে বিধি না মেনে চলার জন্য।
মানুষের অসচেতনতা যেমন এর জন্য দায়ী, তেমনই দায়ী সরকারের সবকিছতু আলগা করে দেওয়া, করােনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার জন্য আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন দ্রুত বাড়ছে, তা সত্ত্বেও মন্দির, মসজিদ, উপাসনালয়গুলি চালু রাখা হয়েছে।
সেখানে ভক্তদের ভিড়। নির্বাচন সত্ত্বেও, অনেক বিষয়েই কঠোর হওয়া যায়। প্রথম দফার যে নির্বাচন হল, সেই নির্বাচন কেন্দ্রগুলিতে কোভিড বিধি কঠোরভাবে মানা হয়নি বলে অভিযােগ। ভােটাররা দুরত্ববিধি না মেনে লাইনে ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের ভােটাধিকার প্রয়ােগ করেছেন।
ভােটের জন্য যারা লাইনে দাঁড়াবেন, তাঁদের দূরত্ববিধি মেনে দাঁড়াতে কোনও বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনকে কোভিড বিধি মেনে যাতে ভােট হয়, তা দেখতে হবে।